জাতীয়

অতিরিক্ত গরমে পূর্বাঞ্চল রেললাইনে বাড়তি সতর্কতা

দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বয়ে যাচ্ছে তীব্র তাপপ্রবাহ। দিনে আগুনে রোদ ও গরমে খাঁ খাঁ করে চারদিক। তীব্র গরমে অতিষ্ঠ জনজীবন। এ গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার আশঙ্কায় পূর্বাঞ্চল রেলপথে যাত্রী এবং পণ্যবাহী ট্রেন চলাচলের ক্ষেত্রে গতি নির্ধারণ করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

গরমে যাতে রেললাইন বেঁকে না যায় সেজন্য পূর্বাঞ্চল রেললাইনের বাড়তি পরিচর্যা চলছে। ইতিমধ্যে সকল ট্রেন চালককে গতি কমিয়ে ট্রেন চালানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও প্রতিদিনই গরমের কারণে প্রতি আধাঘণ্টা পরপর রেললাইনের তাপমাত্রা পরীক্ষা করা হচ্ছে। এছাড়াও কচুরিপানা ও পানি দিয়ে বেঁকে যাওয়া উত্তপ্ত রেললাইন ঠান্ডা করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, গরমের কারণে প্রতি আধাঘণ্টা পরপর রেললাইনের তাপমাত্রা পরীক্ষা করা হচ্ছে। তাপমাত্রা ৪৮-৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড হলেই যাত্রীবাহী ট্রেন ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটার এবং পণ্যবাহী ট্রেন ৩০ কিলোমিটার গতিতে চালানো হচ্ছে।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক নাজমুল ইসলাম বলেন, নির্দেশনা পাওয়ার পর সকলকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও রেললাইনের তাপমাত্রা পরিমাপ করা হচ্ছে। যেখানে অতিরিক্ত গরমে রেলপথ বেঁকে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, সেখানে কচুরিপানা ও পানি দিয়ে রেললাইন ঠান্ডা করার চেষ্টা চলছে।

জানা গেছে, রেললাইনের ওপর ৪৫ থেকে ৪৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রা সহনীয় হিসেবে ধরা হয়। এর বেশি গরম হলে রেললাইন বেঁকে গিয়ে দুর্ঘটনার শঙ্কা থাকে। বড় ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে গতি কমিয়ে ট্রেন চলাচলের নির্দেশনা দেওয়া হয়।

সোমবার (২২ এপ্রিল) পূর্বাঞ্চল রেলপথের বিভিন্ন স্থানে রেললাইনের ওপর তাপমাত্রা ৪৮ থেকে ৫০ ডিগ্রি পর্যন্ত রেকর্ড করা হয়। ফলে এদিন দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত এ রেলপথে আন্তঃনগরসহ সব ধরনের ট্রেনের গতি কমিয়ে চলার নির্দেশনা দেওয়া হয়।

আবহাওয়াবিদরা বলছেন, তিন কারণে এবার তাপপ্রবাহের মাত্রা অন্যান্য বছরের চেয়ে বেশি। সেগুলো হলো- জলীয় বাষ্প অস্বাভাবিক থাকা, দক্ষিণ-পূর্ব মৌসুমি বায়ু কম আসা এবং সাগরে কোনো ঘূর্ণিঝড়ের প্রক্রিয়া তৈরি না হওয়া।

রেলযাত্রা নিরাপদ করতে এবং বড় ধরনের দুর্ঘটনা রোধে রেললাইনে নজরদারি বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন সাধারণ যাত্রীরা। তারা বলছেন, পূর্বাঞ্চলের বেশ কয়েকটি জায়গায় সম্প্রতি ৩৮, ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল। কিন্তু তখন রেললাইন বেঁকে যায়নি। কিছুদিন আগে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও ঢাকায় রেললাইন বেঁকে যায়। এভাবে বারবার লাইন বেঁকে গেলে বড় ধরনের ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটবে। সেজন্য রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে আরও সতর্ক হতে হবে।

গত ২৯ এপ্রিল ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার দাড়িয়াপুর ও হরণ এলাকায় রেললাইন বেঁকে যায়। ফলে ওইদিন বেলা ১১টা থেকে আপলাইনে ঢাকার সঙ্গে চট্টগ্রাম ও সিলেটের রেল যোগাযোগ বন্ধ ছিল। শিডিউল বিপর্যয়ে বিলম্বে চলছে প্রায় সবকটি ট্রেন। এতে দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে যাত্রীদের।

এর আগে গত বৃহস্পতিবারও অতিরিক্ত গরমে রেললাইন বেঁকে গিয়ে দাড়িয়াপুর এলাকায় ঢাকাগামী একটি মালবাহী কনটেইনার ট্রেনের ৭টি বগি লাইনচ্যুত হয়। ওই ঘটনায় প্রায় ৫০০ মিটার রেলপথ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, ভেঙে যায় কংক্রিটের স্লিপার। দুর্ঘটনার প্রায় ৩১ ঘণ্টা পর রেললাইনের প্রয়োজনীয় মেরামত এবং কাঠের স্লিপার বসিয়ে আপলাইনে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক করা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d