অভ্যুত্থানের সাফল্য ধরে রাখতে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি জরুরি
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মাধ্যমে অর্জিত সাফল্য ধরে রাখতে হলে তাদের লেখাপড়ায় ফিরে যেতে বলা যথেষ্ট নয়, একটি কাঠামোর মাধ্যমে অন্তঃপর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা অব্যাহত রাখায় জোর দিয়েছেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো ড. মুস্তাফিজুর রহমান।
বুধবার (১৪ আগস্ট) সিপিডি আয়োজিত ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সামনে চ্যালেঞ্জ ও করণীয়’ শীর্ষক সংলাপে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন।
মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, ১৯৯০ সালে রাজনৈতিক সমঝোতার মাধ্যমে একটি পথনকশা তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু পরে সেটা ধ্বংস করা হয়েছে, আকাঙ্ক্ষা পূরণ হয়নি। এবারের শিক্ষার্থী-গণআন্দোলনের মাধ্যমে যে আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছে, যে সংস্কার কার্যক্রমের কথা বলা হয়েছে এর মাধ্যমে একটি অংশগ্রহণমূলক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা কায়েম করতে হবে। এটা করতে হলে যে শিক্ষার্থীরা এ অভ্যুত্থান করলো তাদের উপস্থিতি জরুরি।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান কাজ হবে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলা রক্ষা করা। সেনাবাহিনী থেকে বলা হচ্ছে অনেকে হেফাজতে আছেন। কারা কারা হেফাজতে আছেন তাদের তালিকা প্রকাশ করতে হবে।
তিনি বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধ হয়েছে, তার বিচার হওয়া দরকার। সাত শতাধিক মানুষ নিহত ও হাজার মানুষ আহত হয়েছেন। এই নিহতের ঘটনায় ফৌজদারি ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করতে হবে। অর্থনৈতিক অপরাধের বিচার করতে হবে। দেশ থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা পাচার করেছে, তার বিচার করতে হবে। দলীয় বাহিনীকে সংস্কার করে রাষ্ট্রীয় বাহিনীতে পরিণত করতে হবে।
প্রধান বিচারপতি নিয়োগ পদ্ধতিটা সঠিক হয়নি মন্তব্য করে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, হাইকোর্ট থেকে সরাসরি প্রধান বিচারপতি হওয়ার পর এখন অনেকে প্রধান বিচারপতি হওয়ার জন্য ধর্না দেবেন। উচিত ছিল নতুন প্রধান বিচারপতিকে সুপ্রিম কোর্ট ডিভিশনে নিয়ে, তারপর তাকে প্রধান বিচারপতি করা যেত। এখন যেটা করা হলো হাইকোর্ট ডিভিশন থেকে সরাসরি প্রধান বিচারপতি করা হলো।
তিনি বলেন, এই অন্তবর্তী সরকারের সফল হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। অনেকগুলো সংস্কার, আইন করতে হবে। এগুলো করতে হলে একটি নাগরিক সমঝোতা করার দরকার, যাতে এ সরকার পুরোপুরি করতে না পারলেও পরবর্তী সরকার করে, থামিয়ে দিতে না পারে।
স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, সরকারের সবাই পদত্যাগ করেছে কিন্তু সচিবদের কেউ পদত্যাগ করেননি। এটা দেখতে হবে।
তিনি আরও বলেন, এতগুলো মন্ত্রণালয় ড. ইউনূসের নিয়ন্ত্রণে রাখার দরকার নেই। এসব সরকারের অনেকের ভিত্তি এনজিও। সরাসরি আন্দোলনের সাথে যুক্ত মাত্র তিনজন। যারা ভালো রাজনীতি বোঝেন, যারা প্রশাসন বোঝেন তাদের সরকারে রাখতে হবে। তা না হলে প্রশাসন বুঝতে বুঝতেই সময় চলে যাবে।
সংবিধান কমিশন করার তাগিদ দিয়ে তোফায়েল আহমেদ বলেন, ওই কমিশন একটি সংবিধান লিখবে, পরবর্তী সরকার সেই সংবিধান অনুমোদন দেবে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নুশরাত তাবাসসুম বলেন, প্রথম যখন কথা ছিল তখন ছাত্রের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু সেটাও ছাত্রের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না। আমরা চেয়েছিলাম শিক্ষার্থীদের মধ্যে বৈষম্য দূর হলে পুরো সমাজে এর প্রভাব পড়বে।
রাজনৈতিক দলগুলোতে ক্যাডার বাহিনী পোষার প্রয়োজন হবে না, উল্লেখ করে নুসরাত বলেন, এমন সিসটেম আনতে হবে, যাতে ক্যাডার বাহিনী গড়ে না ওঠে। শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা দুচিন্তায় আছেন। শিক্ষক, অভিভাবকদের নিয়ে বসে একটি যুগোপযোগী শিক্ষা ব্যবস্থা গড়তে হবে।
প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ ফাহিম মাসরুর বলেন, যে বৈষম্য শিক্ষার্থীদের ক্ষুব্ধ করে এবং আন্দোলনের মতো ঐক্যের দিকে ঠেলে তা হলো, ২০১৭ সালের বৈষম্যমূলক পে কমিশন। ২০১৭ সালে এক ধাপে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বাড়িয়ে দ্বিগুণ করা হয়। এর ফলে বেসরকারি কর্মীদের মধ্যে বৈষম্য তৈরি হয়। বৈষম্য তৈরি হয় অর্থনীতিতে। সরকারি খাতে এত বেতন বাড়ানো হলো কিন্তু সেই বেতন দেওয়ার মতো ক্ষমতা বেসরকারি খাতের ছিল না। ফলে সেখানে এক ধরনের অস্বস্তিতে পড়ে। এর থেকে কোটা পদ্ধতির সংস্কারের দাবি প্রাধান্য পায়। দানা বাঁধে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন। এই বৈষম্য দূর করতে হলে প্রয়োজনে সরকারি কর্মীদের বেতন কমিয়ে সরকারি-বেসরকারিদের সমান করতে হবে।