ধর্ম

অলসতা উন্নতির পথে অন্তরায়

অলসতা মানবজীবনে শুধু অবনতিই ডেকে আনে। উন্নতির পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়।

অলসতা মানুষকে সুন্দর ও উজ্জ্বল ভবিষ্যতের বদলে অবমাননাকর জীবনের দিকে টেনে নিয়ে যায়। অলসতার কারণে সম্পদশালী ও শক্তিশালীরাও নিঃস্ব হয়ে যায়। অলসদের মেধা বিকারগ্রস্ত হয়। একজন সুস্থ-সবল ও চিন্তাশীল মানুষের দায়িত্ব হলো, অলসতার অভ্যাসকে জয় করা।
আগেই বলা হয়েছে, অবহেলা একটি নেতিবাচক আচরণ। কোনো সমাজই এর থেকে পুরোপুরি মুক্ত নয়। কেউ কম, কেউ বেশি। পুরোপুরি অলসতামুক্ত জাতি খুঁজে পাওয়া কঠিন কাজ। অলসতার মতো খারাপ অভ্যাসকে ইসলাম প্রশ্রয় দেয়নি। নানাভাবে নিন্দাজ্ঞাপন করা হয়েছে এ বদঅভ্যাসের। অলসরা সব ক্ষেত্রেই অলস থাকে। ধর্ম পালন থেকে শুরু করে পার্থিব কোনো বিষয়েই তাদের সক্রিয়তা দেখা যায় না। যা অত্যন্ত মন্দ অভ্যাস।

সচেতন মুসলমানমাত্রই দৃঢ় মনোবল ও সংকল্প নিয়ে জীবনের সব পর্যায়ে অলসতা পরিত্যাগ করে সফলতার পথে নিরন্তর চেষ্টা-সাধনায় সক্রিয় থাকে। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) এক হাদিসে ইরশাদে করেছেন, ‘সবল মোমিন আল্লাহর কাছে দুর্বল মোমিনের চেয়ে বেশি প্রিয় ও শ্রেষ্ঠ। উভয়ের মধ্যেই কল্যাণ নিহিত। যা তোমার উপকার করবে তার প্রতি সচেষ্ট হও। আল্লাহর সাহায্য কামনা করো। অক্ষম হয়ো না। তোমার কোনো বিপদ হলে একথা বলো না- যে যদি এমনটি করতাম তাহলে এমনটি হতো, বরং বলো, আল্লাহর ফয়সালা, তিনি যা ইচ্ছা তাই করেন। কেননা যদি শব্দটি শয়তানের কাজকে উন্মোচন করে দেয়। ’

বর্ণিত হাদিসে সচেষ্ট, কর্মউদ্যোমী মানুষদের প্রশংসা করে প্রকারান্তরে অলসদের নিন্দাজ্ঞাপন করা হয়েছে। এই হাদিসে রয়েছে মানুষের জন্য শিক্ষা।

আরেক হাদিসে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল। প্রত্যেককে তার দায়িত্ব সম্পর্কে জবাবদিহিতা করতে হবে। নেতা দায়িত্বশীল। তাকে তার দায়িত্বের জবাবদিহিতা করতে হবে। পুরুষ তার পরিবারে দায়িত্বশীল। তাকে তার কর্তব্য সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে। নারী তার স্বামীর গৃহে দায়িত্বশীল। সে তার করণীয় সম্পর্কে প্রশ্নের সম্মুখীন হবে। চাকর তার মনিবের সম্পদে দায়িত্বশীল। তাকে তার দায়িত্বের হিসেব দিতে হবে। ছেলে তার বাবার সম্পদে দায়িত্বপ্রাপ্ত। সে তার পালনীয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বপ্রাপ্ত। প্রত্যেককেই তার দায়িত্ব সম্পর্কে জবাবদিহি করতে হবে। -সহিহ বোখারি ও মুসলিম

এই হাদিসের আলোকে বলা চলে, যে অলস সে দায়িত্বজ্ঞানহীন এবং তাকে কিয়ামতের দিন আল্লাহর জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হতে হবে।

সমাজবিজ্ঞানীদের অভিমত হলো, অলসতায় লিপ্ত মানুষের স্বভাব একেবারে তৎপরতাশূন্য থাকে। তাদের চিন্তা-চেতনায় সর্বদা নীচতা প্রকাশ পায়। তারা অনেকটা অবাধ্যতাও হয়। আর এসব গুণের কোনোটিই ভালো গুণ নয়। এসব অভ্যাস মানুষকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়। এর ফলে সমাজের নানা ধরনের সংকট দেখা যায়।

তাই সমাজের প্রত্যেকের উচিত অলসতা নামক ব্যাধির ব্যাপারে চূড়ান্ত সতর্ক থাকা। যারা এ অভ্যাস পরিত্যাগ করবে, দুনিয়া ও আখেরাতে তারা সফলতা লাভ করবে। দেখুন, আল্লাহতায়ালা কত সুন্দর করে বলছেন, ‘হে ঈমানদাররা! জুমার নামাজের আহ্বান করা হলে তোমরা আল্লাহর জিকিরের দিকে ধাবিত হও। বেচাকেনা ছেড়ে দাও। এটিই তোমাদের জন্য কল্যাণকর, যদি তোমরা জানতে। নামাজ সম্পন্ন হলে তোমরা জমিনে ছড়িয়ে পড়। আল্লাহর অনুগ্রহ অনুসন্ধান করো। বেশি বেশি আল্লাহকে স্মরণ করো। যাতে তোমরা সফল হও। ‘ -সূরা জুমা ৯-১১

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d