আওয়ামী লীগে প্রার্থীর ছড়াছড়ি, সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় বিএনপি
২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর দুইবার উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও ও পাঁচলাইশ আংশিক) আসনে। এ আসনে ২০০৮ সাল থেকে টানা তিনবার নৌকা প্রতীকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন জাসদ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা মঈন উদ্দিন খান বাদল। একাদশ জাতীয় নির্বাচনের পর তিনি মারা গেলে এ আসনে অনুষ্ঠিত হয় উপ-নির্বাচন। এতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোছলেম উদ্দিন আহমদ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। কিছুদিন পর তিনিও মারা যান। এরপর আবারও অনুষ্ঠিত হয় উপ-নির্বাচন। এতে দলের মনোনয়ন পান মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নোমান আল মাহমুদ। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন ২৭ জন। সরকার পতনের দাবিতে আন্দোলন থাকা বিএনপি এ নির্বাচনে অংশ নেয়নি। ফলে সহজ জয় পান নোমান আল মাহমুদ। মাত্র আট মাসের ব্যবধানে এ আসনে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ঘনিয়ে এসেছে নির্বাচনের সময়। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা।
নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচনে অংশ নেবে না বিএনপি। সেই দাবি আদায়ের জন্য আন্দোলনে রয়েছে দলটি। ফলে নির্বাচনী মাঠ নিয়ে আপাতত ভাবছেন না দলটির নেতাকর্মীরা। যদিও দলটির নির্বাচনী প্রস্তুতি রয়েছে তলে তলে। তবে প্রার্থী জট নেই এ দলে। তিনজন সম্ভাব্য প্রার্থী দলের মনোনয়ন চাইতে পারেন বলে জানা গেছে।
২০১৮ সালের নির্বাচনে চট্টগ্রাম-৮ আসন থেকে ১৪ দলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে টানা তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) একাংশের কার্যকরী সভাপতি মঈনউদ্দীন খান বাদল। ২০১৯ সালের ৭ নভেম্বর তিনি ভারতের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তার মৃত্যুতে আসনটি শূন্য হলে এই আসনে উপনির্বাচন হয়। ২০২০ সালের ১ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মোছলেম উদ্দিন আহমেদ জয় লাভ করেন। ২০২৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি তিনিও মৃত্যুবরণ করেন। দীর্ঘদিন ধরে ক্যান্সারে ভুগছিলেন তিনি। ফলে আসনটিতে দ্বিতীয়বারের মতো উপ-নির্বাচনের আয়োজন করা হয়। তাতে দলের মনোনয়ন পেয়ে জয়লাভ করেন নোমান আল মাহমুদ। তিনি আবারও এ আসনে দলের মনোনয়ন চাইবেন বলে জানিয়েছেন।
দলীয় সূত্র জানায়, বিএনপি না এলেও নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে এগুচ্ছে আওয়ামী লীগ। দল কখন কাকে মনোনয়ন দিবে তার হিসেব তৃণমূলে নেই। দলের হাইকমান্ডের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। ফলে কেন্দ্রের কাছে নিজেদের তুলে ধরতে ব্যস্ত রয়েছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। গত উপ-নির্বাচনে আলোচনার বাইরে থাকা নোমান আল মাহমুদকে দলীয় মনোনয়ন দিয়ে রীতিমতো চমক দেখিয়ে ছিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এবারও তিনিই দলের মনোনয়ন পাচ্ছেন, নাকি নতুন মুখ দেখা যাবে-তাই নিয়ে সরগরম তৃণমূল। গত উপ-নির্বাচনে যারা মনোনয়ন চেয়েছিলেন তারা আসন্ন নির্বাচনেও দলের মনোনয়ন চাইবেন বলে গুঞ্জন রয়েছে।
আসন্ন নির্বাচনে মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নোমান আল মাহমুদ ছাড়াও এ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী নগর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এস এম আবুল কালাম, শিল্পপতি মুজিবুর রহমান, ব্যবসায়ী এস এম আবু তৈয়ব ও আবদুল কাদের সুজন। এর বাইরে মনোনয়ন চাইতে পারেন দুই আইনজীবী ব্যারিস্টার মনোয়ার হোসেন এবং আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য এস এম কফিল উদ্দিন। বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীর তালিকায় রয়েছেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান, সদস্য সচিব মোস্তাক আহমদ খান ও মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ব্যবসায়ী এরশাদ উল্লাহ। তবে আগামী নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিচ্ছে কিনা তা এখনও পরিষ্কার নয়। নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন এবং সরকার পতনের এক দফা দাবি আদায়ে আন্দোলন করছে বিএনপি। ২০১৮ সালের নির্বাচনে আসনটিতে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছিলেন আবু সুফিয়ান। ওই নির্বাচনে ১৪ দলীয় জোটপ্রার্থী মঈনউদ্দীন খান বাদলের কাছে তিনি পরাজিত হন। এরপর মঈনউদ্দীন খান বাদলের মৃত্যুর পর আসনটি শূন্য হলে উপ-নির্বাচনেও দল থেকে প্রার্থী করা হয় তাকে। উপ-নির্বাচনে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমদের কাছে পরাজিত হন তিনি।
আবু সুফিয়ান ও এরশাদ উল্লাহকে ঘিরে দুই ভাগে বিভক্ত এ আসনের নির্বাচনী এলাকার বিএনপি নেতাকর্মীরা। দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান বলেন, ‘বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে সেই নির্বাচনে অংশ নেবে না বিএনপি। নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে যদি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়- চট্টগ্রাম ৮ আসনে দলের মনোনয়ন চাইব।’ বিএনপি নেতা এরশাদ উল্লাহ জানান, আগামী নির্বাচনে বিএনপি এবং দলীয় হাইকমান্ড অংশ নিলে দলের মনোনয়ন চাইব। দলই সিদ্ধান্ত নেবে কাকে মনোনয়ন দিলে কে নির্বাচিত হবে। আমি আশা করছি, নির্বাচনী এলাকার পারিপাশি^কতা ও জনগণের মতামতের ভিত্তিতেই দলের হাইকমান্ড মনোননয়ন বিবেচনা করবে।’
আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী এসএম আবুল কালাম ও আবদুচ সালাম জানান, দলের নির্দেশনা পেলেই মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চাইলে নির্বাচন করে আসনটি তাকে উপহার দেবেন তারা।
এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য নোমান আল মাহমুদ বলেন, উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ দলের হাইকমান্ড আমার ওপর আস্থা রেখেছিলেন। এবারও যে নির্দেশনা দেবেন তা পালন করতে প্রস্তুত রয়েছি। আসন্ন নির্বাচনে এ আসনে দলের মনোনয়ন চাইব।
এর বাইরে জাতীয় পার্টির দক্ষিণ জেলার আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান এবং বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের মহাসচিব স উ ম আবদুস সামাদ এ আসনের নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন।