আওয়ামী লীগ-বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীর ছড়াছড়ি
নির্বাচনের সময় যতই ঘনিয়ে আসছে দলীয় মনোনয়ন নিশ্চিত করতে ততই বাড়ছে সম্ভাব্য প্রার্থীদের দৌড়ঝাঁপ। মাঠপর্যায় থেকে শুরু করে কেন্দ্র পর্যন্ত জোর লবিং চালাচ্ছেন প্রার্থীরা। দীর্ঘসময় ধরে পটিয়া উপজেলায় দেশের বেশকটি রাজনৈতিক দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালিত হলেও বিগত সময়গুলোতে নির্বাচনে মূল প্রতিদ্বন্ধিতায় হয়ে আসছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে।
মূলত চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনটি একসময় বিএনপির শক্ত ঘাঁটি ছিল। বিশেষ করে ১৯৯১ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত তিনটি নির্বাচনে এ আসনে বিজয় লাভ করে বিএনপি। তবে ২০০৮ সালে সামশুল হক চৌধুরীর হাত ধরে আসনটি আওয়ামী লীগের দখলে আসে।
এরপর ২০১৪ সালে বিএনপিবিহীন নির্বাচনে জাতীয় পার্টির সাবেক এমপি সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীকে বিপুল ভোটে হারিয়ে এমপি হন সামশুল হক চৌধুরী। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের প্রার্থী সামশুল হক চৌধুরী জয়ী হন। তার নিকটতম প্রতিদ্ব›দ্বী বিএনপির এনামুল হক এনাম।
সামশুল হক চৌধুরী টানা তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর ২০১৯ সালে তাকে একাদশ জাতীয় সংসদের হুইপ নির্বাচিত করা হয়। স্বাধীনতা পরবর্তী চট্টগ্রাম জেলা থেকে তিনিই প্রথম প্রতিমন্ত্রীর সমমর্যাদায় হুইপের দায়িত্ব পান। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও সামশুল হক চৌধুরী আওয়ামী লীগের শক্ত প্রার্থী। তাই চ্যালেঞ্জিং এ নির্বাচনে সামশুল হক চৌধুরীর উপরই ভরসা রয়েছে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী ফোরামে এমনটাই শোনা যাচ্ছে। তবে এ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে দলীয় মনোনয়ন দৌড়ে তৎপর রয়েছেন, দক্ষিণ জেলা আ.লীগের সভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, জাতীয় মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান চেমন আরা তৈয়ব, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা মতিন চৌধুরী, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মোহাম্মদ নাসির, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. বদিউল আলম, উপজেলা আ.লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পৌর মেয়র অধ্যাপক হারুনুর রশীদ, নজির আহমদ দোভাষ ফাউন্ডেশন চেয়ারম্যান ডক্টর জুলকারনাইন চৌধুরী জীবন, মেজর জেনারেল (অব.) আলাউদ্দিন এমএ ওয়াদুদ ও জাতীয় দলের সাবেক ফুটবলার সত্যজিৎ দাশ রুপু।
বিএনপি নির্বাচনে এলে এ আসনে সাবেক দুই বারের বিএনপির সংসদ সদস্য গাজী শাহজাহান জুয়েলসহ দলটির আরো তিন নেতা মনোনয়ন চাইবেন বলে নিশ্চিত করেছেন। এরমধ্যে রয়েছেন গত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাওয়া দক্ষিণ জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক এনামুল হক এনাম, দক্ষিণ জেলা জেলা বিএনপির সিনিয়র সদস্য সাবেক পটিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইদ্রিস মিয়া ও চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি’র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গাজী সিরাজ উল্লাহ।
এ ছাড়াও জাতীয় পার্টি (জাপা) থেকে দলীয় মনোনয়ন চাইবেন কেন্দ্রীয় নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, দক্ষিণ জেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক নুরুচ্ছাফা সরকার, সাবেক কমিশনার নুরুল ইসলাম। ইসলামী ফ্রন্ট থেকে মনোনয়ন চাইবেন গাজী মনজুরুল করিম রেফায়ী, উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান এয়ার মোহাম্মদ পেয়ারু, কমিউনিস্ট পার্টি থেকে দলের সভাপতি কমরেড শাহ আলম, ইনসানিয়াত বিপ্লব থেকে আবু তালেব।
হুইপ সামশুল হক চৌধুরী এমপি বলেন, স্বাধীনতা পরবর্তী বিগত সময়ে ৩৩ বছর ধরে পটিয়া আসনে আওয়ামী লীগ থেকে কোনো প্রার্থী নির্বাচিত হতে পারেনি। বিএনপির দখলে থাকা আসনটিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমার ওপর আস্থা রেখেই মনোনয়ন দেন। সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে পটিয়ার মাটি ও মানুষের পাশে থেকে ১৫ বছরে সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছি। আরো ২ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন চলমান রয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যদি আমাকে আবারো মনোনয়ন দেন এবং পটিয়ার জনগণ যদি আমাকে চায় আমি পুনরায় জয়লাভ করে এ আসনটি প্রধানমন্ত্রীকে উপহার দিব।
কেন্দ্রীয় যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. বদিউল আলম বলেন, আমি তৃনমুল থেকে গড়ে উঠা দীর্ঘ ৪৪ বছরের ধারাবাহিক রাজনৈতিক কর্মী। আগামী সংসদ নির্বাচন অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমি জনগণের কাছে পরীক্ষা দেয়া রাজনৈতিক কর্মী। রাজনৈতিক কর্মীদের প্রত্যাশা থাকে সম্মেলন হলে দলীয় পদ আর নির্বাচন আসলে দলীয় মনোনয়ন। আমি যদি নৌকার হকদার ও দাবিদার হই সব বিবেচনায়, দল নিশ্চয়ই, নেত্রী আমাকে নিরাশ করবেন না। মনোনয়ন পেলে পটিয়ার হারানো গৌরব, ঐতিহ্য ও মর্যাদা ফিরিয়ে আনবো।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি মোহাম্মদ নাসির বলেন, মনোনয়ন পেলে ‘গড়বো পটিয়া সবাই মিলিয়া’ এই শ্লোগান নিয়ে বীর প্রসবিনী পটিয়ার হারানো গৌরব ফিরিয়ে এনে আলোকিত স্মার্ট পটিয়া গড়ার প্রত্যাশা করছি।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য ও নজির আহমদ দোভাষ ফাউন্ডেশন চেয়ারম্যান ডক্টর জুলকারনাইন চৌধুরী জীবন বলেন, গত পাঁচ বছর ধরে পটিয়া উপজেলায় অসহায় মানুষের জন্য মানবিক সহায়তাসহ শিক্ষা, চিকিৎসা এবং আর্তসামাজিক উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করেছি। দল যদি আমাকে মনোনয়ন দেয় তাহলে আগামী নির্বাচনে এ আসনে নৌকার বিজয় নিশ্চিত করবো।
বিএনপির সাবেক দুই বারের সংসদ সদস্য গাজী শাহজাহান জুয়েল বলেন, আমরা এখন একদফা আন্দোলনে আছি, নির্বাচন নিয়ে তেমন একটা ভাবছি না। তবে বিএনপি যদি দলগতভাবে নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় তবে মনোনয়ন চাইবো। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পটিয়া বিএনপির ঘাঁটি ছিলো এখনও আছে। সুষ্ঠু নির্বাচন হলেই জনগণ প্রমাণ করবে পটিয়া এখনও বিএনপির ঘাঁটি। মনোনয়ন পেলে এ আসনটি পুনরুদ্ধার করে প্রমাণ করব।
দক্ষিণ জেলা জেলা বিএনপির সিনিয়র সদস্য, সাবেক পটিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইদ্রিস মিয়া বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বিএনপির একদফা আন্দোলন চলমান রয়েছে। বর্তমান সরকারের অধীনে কোন নির্বাচনে তারা অংশ নিবেন না। তবে বিএনপি যদি দলগতভাবে নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় তখন অবশ্যই মনোনয়ন চাইবো।