ধর্ম

এবার হজে এত মৃত্যুর নেপথ্যে কী?

সৌদি আরব সরকার জানিয়েছে যে এই বছর প্রায় ১৮ লাখ মানুষ হজ করেছেন। তবে এই ১৮ লাখ মানুষ শুধু তারাই যারা সৌদি কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত আনুষ্ঠানিক হজ পদ্ধতিতে হজ করেছেন।এই নিয়ম লঙ্ঘন করে যারা হজ করেছেন তারা এই পরিসংখ্যানের অন্তর্ভুক্ত নন।

এ বছর হজ পালন করতে গিয়ে ১৩০০ জনেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। সৌদি সরকার বলছে মৃতদের মধ্যে অর্ধেকের বেশি ‘অনিবন্ধিত’ হজযাত্রী, যারা ‘অবৈধ উপায়ে’ হজে যোগ দিয়েছিলেন। এদের অধিকাংশই মারা গিয়েছেন তাপমাত্রা ৫১ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যাওয়ায় প্রচণ্ড গরমের কবলে পড়ে। তারা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত তাঁবু এবং শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাসের মতো সুবিধাগুলো নিতে না পেরে এই মৃত্যুর শিকার হয়েছেন।

‘অবৈধ উপায়ে’ আসা হজযাত্রীরা মিনা, মুজদালিফা, মুশাইরা এবং আরাফাত কোথাও কোনও সুবিধা (আবাসন, খাবার, পরিবহন) পান না। কিছু লোক তাদের পরিচিতি ও সম্পর্কের কারণে তাঁবুতে জায়গা করে নিতে পারেন, কিন্তু সেখানে এমন অসংখ্য হজযাত্রী থাকেন যাদের এসব তাঁবুতে কোন প্রবেশাধিকার নেই।

এখানে প্রশ্ন উঠেছে, কী কারণে কিছু মানুষ ধর্মীয় দায়িত্ব পালনে অবৈধ পন্থা অবলম্বন করতে বাধ্য হয়?

বিবিসি আরবি বিভাগের প্রতিবেদন অনুসারে, অনেক কারণে কিছু মানুষ এই অবৈধ পথ বেছে নিতে বাধ্য হয়, যার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কারণ হল অর্থ এবং বয়স। হজের খরচ বেশি হওয়ায় অনেকেই সরকারি অনুমতি ছাড়াই হজ করতে প্ররোচিত হন।

২০২৩ সালে সরকার হজ আদায়ের জন্য পাকিস্তান থেকে আসা ব্যক্তিদের থেকে জনপ্রতি ১২ লাখ রুপি নিয়েছে (প্রায় ৫ লাখ টাকা)। মিশরের ন্যাশনাল ফাউন্ডেশন ফর হজ ফ্যাসিলিটেশন অনুসারে হজের জন্য সবচেয়ে সস্তা প্যাকেজ দুই লাখ ২৬ হাজার মিশরীয় পাউন্ড (প্রায় ৫ লাখ ৪৫ হাজার টাকা)। জর্ডানে হজ ফি বাবদ খরচ হয় প্রায় ৩,০০০ দিনার, (প্রায় ৫ লাখ টাকা)। যেখানে ভিজিট ভিসার মাধ্যমে একজন হজযাত্রীকে ‘পাচার’ করতে খরচ হয় প্রায় এক হাজার দিনার (প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা)। অন্যদিকে, জর্ডান থেকে সরকারি উপায়ে হজের খরচ প্রায় তিন হাজার ৯০ দিনার (প্রায় ৫ লাখ ১২ হাজার টাকা)। বাংলাদেশে চলতি বছর সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজে যাওয়ার সর্বনিম্ন প্যাকেজ প্রায় পাঁচ লাখ ৭৯ হাজার টাকা ধার্য করা হয় আর বেসরকারিভাবে সর্বনিম্ন প্যাকেজ প্রায় পাঁচ লাখ ৯০ হাজার টাকা।

সৌদি আরবের সিনিয়র স্কলার কাউন্সিল বলছে, অনুমতি ছাড়া হজে যাওয়া জায়েজ নয় এবং যারা তা করে তারা পাপী। যে ব্যক্তি ওমরাহ করতে যায় এবং হজের মৌসুমের অপেক্ষায় লুকিয়ে থাকে, সে শরিয়া মোতাবেক গুনাহ করে কারণ তা জায়েজ নয় কিন্তু তার হজ ও ওমরাহ হয়ে যাবে। মিশরে ফতোয়া হাউসের সেক্রেটারি ডক্টর মুহাম্মাদ আবদুল সামি বলেন, ঘটনাটি এমন যে একজন নামাজ আদায়ের জন্য অজু করতে পানির বোতল চুরি করেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d