কক্সবাজার

কক্সবাজার থেকে রেলপথে মাদক যাচ্ছে ঢাকায়

রেল নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পর্যটননগরী কক্সবাজার। দেশের প্রথম আইকনিট স্টেশন নির্মিত হয়েছে সেখানে।

অত্যাধুনিক অন্যান্য সুবিধা থাকলে স্টেশনটিতে মাদক ধরতে করা হয় না তেমন কোনো তল্লাশি। সেখানে নেই আধুনিক ড্রাগ ডিটেকটিং স্ক্যানার কিংবা এক্সরে মেশিন।
মাদক শনাক্ত করতে সক্ষম ডগ স্কোয়াডও নেই এ স্টেশনে। ফলে স্টেশনটি দিয়ে সহজেই রেলযোগে পাচার হচ্ছে মাদক। এতে করে নড়েচড়ে বসে বসেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, পর্যটননগরী কক্সবাজারের সঙ্গে চট্টগ্রাম-ঢাকা রুটে সরাসরি রেল চলাচল শুরু হয়েছে গত জানুয়ারি মাসে। ১৮ হাজার কোটি টাকার এ প্রকল্পে আধুনিক সব সুযোগ সুবিধা থাকলেও সনাতন পদ্ধতিতেই চলে নিরাপত্তা তল্লাশি। স্টেশনে প্রবেশ মুখে নেই আধুনিক নিরাপত্তা সরঞ্জাম স্ক্যানার বা আর্চওয়ে। এমনকি স্টেশনে অনাসায়ে প্রবেশ করছেন স্থানীয় লোকজন। এটাকে মোক্ষম সুযোগ হিসেবে নিয়েছে মাদক মাফিরা। ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে চালু হওয়া এ ট্রেন হয়ে উঠেছে মাদকের নতুন রুট হিসেবে। নতুন এ রুট ব্যবহার করে ইয়াবা ও আইসের ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবে খ্যাত কক্সবাজার চট্টগ্রাম ও ঢাকা হয়ে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে ইয়াবা ও আইসের চালান।

অন্যদিকে বর্তমানে মাদক ব্যবসায়ীরা সড়কের পাশাপাশি কক্সবাজার-চট্টগ্রাম-ঢাকা রেলপথকেও ব্যবহার করছে। কারণ কক্সবাজারে থেকে ট্রেনে করে বাধা বিপত্তি ছাড়াই মাদক চলে যাচ্ছে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায়। প্রস্তাবনায় কক্সবাজার রেলওয়ে বিশেষ জোন করার কথা বলা হয়েছে। জোনের জন্য একজন সহকারি পরিচালকসহ ৩২ জনবল, একটি ডবল কেবিন পিকআপ, যাত্রীদের তল্লাশীর জন্য পোর্টেবল ও আধুনিক ড্রাক ডিটেকটিং স্ক্যানার ও এক্স-রে মেশিন, প্রশিক্ষিত ডগ স্কোয়াড চাওয়া হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার নতুন করে চালু হওয়া রুটে যেভাবে নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথা ছিল, তার কোনোটাই নেওয়া হয়নি। খুবই দুর্বল স্টেশনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। প্রবেশ মুখে তল্লাশী বলতে কিছুই নেই। ট্রেনের মধ্যেই নেই নিরাপত্তা বাহিনীর তৎপরতা। তাই এ দুর্বলতাকে কাজে লাগাচ্ছে মাদক মাফিয়ারা। ঢাকা ও চট্টগ্রামে নতুন করে চালু হওয়াপ ট্রেনে করে পাচার করছে মাদকের চালান।

মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক জাফর উল্ল্যাহ কাজল জানান, আমাদের কাছে ঢাকা-কক্সবাজার রুট চালু হওয়া ট্রেনে করে মাদক পাচারের তথ্য এসেছে। তাই রেলপথে মাদক পাচার রোধে কক্সবাজার রেলওয়ে বিশেষ জোন করার প্রস্তাবনা মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে।

জনবল সংকটের কথা জানিয়ে এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, সাড়ে ৭শ’ যাত্রী কক্সবাজার থেকে ঢাকায় যায় প্রতিটা ট্রেনে করে। অল্প জনবল দিয়ে যাত্রীদের যথাযথ ভাবে তল্লাশী করা সম্ভব হয়ে উঠে না নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের। এই দূর্বলতা কাজে লাগাচ্ছে মাদক মাফিয়ারা।

রেলওয়ে চট্টগ্রাম অঞ্চলের পুলিশ সুপার প্রকৌশলী হাছান চৌধুরী জানান, মাদকের বিরুদ্ধে রেলওয়ে পুলিশের অবস্থান জিরো ট্রলারেন্স। কক্সবাজার থেকে রেল যোগে মাদক পাচার ঠেকাতে নানান পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের তল্লাশীর পাশপাশি গোয়েন্দা সদস্যরা নজরদারী করছে। কক্সবাজার থেকে রেল ছাড়ার আগে কঠোরভাবে নজরদারি করা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d