কিডনি চুরির অভিযোগে স্ত্রী-সন্তানসহ ডা. রবিউলের বিরুদ্ধে মামলা
চট্টগ্রাম চক্ষু হাসপাতাল ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের (সিইআইটিসি) ম্যানেজিং ট্রাস্টি খ্যাতিমান চক্ষু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. রবিউল হোসেন, তার ছেলে ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে কিডনি চুরির অভিযোগে আদালতে মামলা হয়েছে। আদালত অভিযোগ আমলে নিয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
রবিবার (১৪ জুলাই) চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট নুসরাত জাহান জিনিয়ার আদালতে এ নালিশি মামলাটি করেন নগরের বায়েজিদ বোস্তামি থানার ওয়াজেদিয়া আলী হোশেন বাড়ির বাসিন্দা মো. আবু বক্কর।
মামলার অন্যান্য আসামিরা হলেন— অধ্যাপক ডা. রবিউল হোসেনের ছেলে ডা. রাজিব হোসেন (৪৫) এবং স্ত্রী খালেদা বেগম।
মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে ডা. রাজিব হোসেনের সাথে আবু বক্করের সুসম্পর্ক। সেই সুবাদে ২০১২ সালে ডা. রাজিব তার বাবা চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডা. রবিউল হোসেনের সাথে বক্করের পরিচয় করিয়ে দেন। একপর্যায়ে ডা. রাজীব বলেন সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে তার বাবার চিকিৎসার জন্য যেতে হবে এবং একজন অ্যাটেনডেন্টস (তত্ত্বাবধানে নিযুক্ত ব্যক্তি) দরকার। মানবিক বিবেচনায় সেই প্রস্তাবে রাজি হয় আবু বক্কর। ওই বছরের ১০ মার্চ ডা. রাজীবের মা খালেদা বেগমসহ তারা সিঙ্গাপুরে যাত্রা করেন।
মামলার বিবরণে আরও বলা হয়, কয়েকদিন পর ডা. রাজীব বক্করকে বলেন, তার বাবার অবস্থা বেশি ভালো না। তাকে বাঁচাতে হলে শরীরের টিস্যু দিতে হবে। যা যেকোনো সুস্থ মানুষ দান করতে পারে। তার কথায় টিস্যু দিতে রাজি হলে একটি অপারেশন করা হয়। এরপর ৯ এপ্রিল তিনি ডিসচার্জ হলে তাকে ১৫ এপ্রিল বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এরপর জীবন বাঁচানোর কৃতজ্ঞতা স্বরুপ বাদীকে চট্টগ্রাম চক্ষু হাসপাতাল ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে চাকরিও দেওয়া হয়।
দীর্ঘদিন চাকরির পর ২০১৭ সালের ১১ জানুয়ারি বাদীকে আনফিট দেখিয়ে ওই প্রতিষ্ঠান থেকে চাকুরিচ্যুত করা হয়। বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার সম্মুখীন হলে চলতি বছরের ২১ মে বাদী পরীক্ষা করিয়ে জানতে পারেন, তার ডান কিডনি নেই। পরে এ বিষয়ে ডা. রবিউল হোসেনের বাসায় গিয়ে জানতে চাইলে বক্করকে এক সপ্তাহের মধ্যে কিডনির ক্ষতিপূরণ বাবদ ৩০ লাখ টাকা দেওয়ার কথা বলেন তারা। কিন্তু সেই টাকা না দিয়েই গত ১৩ জুন তারা তার সাথে খারাপ আচরণ করেন।
আবু বক্কর সিভয়েস২৪-কে বলেন, ‘আমার পরিবারের সদস্যদের চিকিৎসা করানোর সুবাদে ডা. রাজীবের সাথে আমার পরিচয় হয়। সিঙ্গাপুর থেকে আমাকে দেশে পাঠিয়ে দেওয়ার পর দীর্ঘ পাঁচ বছর চট্টগ্রাম চক্ষু হাসপাতাল ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে সুপারভাইজার এডমিন পদে চাকরি করি। এরপর হঠাৎ আমাকে আনফিট দেখিয়ে চাকরিচ্যুত করা হয়। চাকরি হারানোর ৭ বছর পর আমি জানতে পারি সিঙ্গাপুরে টিস্যু দেওয়ার কথা বলে আমার কিডনি তারা চুরি করে নিয়ে নেয়। এ বিষয়ে জানতে ডা. রবিউল হোসেনের বাসায় গেলে তারা আমাকে ৩০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা বলে। কিন্তু তা না দিয়ে তারা উল্টো পরবর্তীতে আমার সাথে খারাপ আচরণ করে। যার কারণে আমি মামলা করার সিদ্ধান্ত নেই।’
অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে ডা. রাজীব হোসেনের মুঠোফোনে কল করে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।