খেয়ে-পরে মামলার খরচও চালান চুরির টাকায়
চট্টগ্রাম নগরীতে নগদ ১৮ লাখ টাকা ও ২৩ ভরি স্বর্ণালংকার চুরির ঘটনায় দুইজনকে গ্রেফতার করেছে নগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। ডিবি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চুরি করা টাকার একাংশ দিয়ে আগের মামলা খরচ চালান তারা। আরেক অংশ নিজেরা ভাগ-ভাটোয়ারা করে নেন।
মঙ্গলবার (১১ জুন) ও বুধবার (১২ জুন) ঢাকা এবং কুমিল্লায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয় বলে জানিয়েছেন নগর গোয়েন্দা পুলিশের (বন্দর-পশ্চিম) উপ-কমিশনার মো. আলী হোসেন।
গ্রেফতার দুইজন হলেন নুরনবী সাকিব (২৩) ও আশিকুর রহমান (২৫)।
গত ১৩ মে হজে যাওয়ার জন্য জসিম উদ্দিন ও রোজিনা আক্তার নামে এক দম্পতির জমানো ১৮ লাখ টাকা ও ২৩ ভরি স্বর্ণ ঘরের গ্রিল কেটে নিয়ে যায় চোরচক্র। ১২ মে ছোট ছেলের এক কেরাত প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পরিবারসহ ঢাকায় যান তারা।
বাড়িতে বড় ছেলের কলেজের পরীক্ষার জন্য ছিল। কিন্তু রাতে পড়ালেখা করে তিনি দাদা দাদির সঙ্গে নিচতলায় ঘুমাতে গেলে সে সুযোগে তিনতলার বাসা ফাঁকা পেয়ে ঘরে থাকা সমস্ত টাকা ও স্বর্ণালংকার নিয়ে যায় চোরচক্র।
এ বিষয়ে ১৪ মে রাতে ডবলমুরিং থানায় একটি চুরির মামলা দায়ের করেন জসিম উদ্দিন।
বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) দুপুরে নগরীর মনসুরাবাদে ডিবি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে উপ-কমিশনার আলী হোসেন জানান, গত ১৪ মে চুরির ঘটনায় জড়িত রাতুল নামে এক চোর অন্য এক মামলায় সদরঘাট থানায় আত্মসমর্পণ করেন। জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ জানতে পারে তিনি ডবলমুরিং থানায় সংঘটিত হওয়া চুরির সঙ্গে জড়িত।
জিজ্ঞাসাবাদে তিনি চুরির কথা স্বীকার করেন এবং তার কাছ থেকে দেড় ভরি স্বর্ণালংকার উদ্ধার করা হয়। তার দেওয়া তথ্যানুসারে সালাউদ্দিন নামে আরেক চোরকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাদের কাছ থেকে সাকিব ও আশিকের নাম পাওয়া যায়।
উপ-কমিশনার আলী হোসেন বলেন, ‘আমরা প্রথমে কুমিল্লার দেবিদ্বারে অভিযান চালিয়ে আশিককে তার নিজ বাড়ি থেকে গ্রেফতার করি। সে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল। আমাদের প্রস্তুতি ছিল । তাই পালাতে পারেনি। তার দেওয়া তথ্যমতে গতকাল (বুধবার) ঢাকার বংশাল থেকে সাকিবকে গ্রেফতার করা হয়।’
‘তাদের দুইজনের কাছ থেকে সাড়ে ছয় ভরি করে দুইটি স্বর্ণের হার ও একটি আংটি উদ্ধার করা হয়। এছাড়া আশিকের শাশুড়ি থেকে চুরি হওয়া ৫০ হাজার ও সাকিবের মা থেকে দেড় লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়।’
তিনি বলেন, ‘সাকিব এ চক্রের প্রধান। সে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করে। ১২ বছর বয়সেই সাকিব চুরির মাধ্যমে অপরাধ জগতে প্রবেশ করে। ১৬ বছর বয়সেই হয়ে যায় দুর্ধর্ষ চোর। গড়ে তোলে নিজের গ্রুপ। এরপর সাত বছরে ১৫০ থেকে ২০০ চুরির ঘটনায় নেতৃত্ব দেয় সে। তাকে ধরতে আমাদের বেগ পেতে হয়েছে।’
‘আগ্রাবাদ, পাহাড়তলী, আকবরশাহ, সদরঘাট ও বন্দর এলাকায় চুরির ঘটনায় বেশিরভাগই তারা জড়িত। তারা একেকজন আট থেকে নয়বার গ্রেফতার হয়েছে। জামিন নিয়ে বের হয়ে আবার তারা চুরি করে। এরা দুর্ধর্ষ চোর। চুরির টাকায় তারা আগের মামলার খরচ চালায়।’
গোয়েন্দা কর্মকর্তা আলী হোসেন বলেন, ‘একেকটি এলাকায় কয়েকটি চোর চক্র থাকে। চুরি করা টাকার ভাগ তাদেরকেও দিতে হয়। চুরি হওয়া ১৮ লাখ টাকাও এসব চক্রকে দিতে হয়েছে। কিছু টাকা ও স্বর্ণালংকার রাতুল ও সালাউদ্দিনের কাছে আছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। তারা কারাগারে।’
‘আমরা যতটুকু পারি বাকি টাকা ও স্বর্ণালংকার উদ্ধার