আন্তর্জাতিক

গাজায় ধ্বংসস্তূপের নিচে পচছে হাজার হাজার মরদেহ

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় দখলদার ইসরাইলের বিমান হামলায় শত শত ভবন ধসে পড়েছে। এসব ভবনের ধ্বংসস্তূপের নিচে পচছে হাজার হাজার নিখোঁজ ফিলিস্তিনির মরদেহ। প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম না থাকায় ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে এসব মরদেহ উদ্ধার করা যাচ্ছে না। ফলে সেগুলো সেখানেই পচে-গলে যাচ্ছে।

এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরাইলি হামলায় অন্তত ৪০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা। অন্যদিকে ইসরাইলি সেনাবাহিনীর পাঁচটি ইউনিট ব্যাপকভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত বলে প্রমাণ পেয়েছে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। দাতা সংস্থা ইউএনআরডব্লিউর প্রধান জানিয়েছেন, এ পর্যন্ত গাজায় ইসরাইলি হামলায় অন্তত ১৮২ জন সেবাকর্মী নিহত হয়েছেন। ওদিকে প্রাণে বাঁচতে গাজা থেকে নিজেদের পরিবারকে সরিয়ে দিতে মরিয়া ফিলিস্তিনিরা চাঁদা সংগ্রহ শুরু করেছে। আবার যুদ্ধে উন্মত্ত ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, চুক্তি হোক বা না হোক রাফায় অভিযান চলবেই। খবর আনাদুলু এজেন্সি, বিবিসি, আলজাজিরা ও রয়টার্সের।

রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, যুদ্ধবিরতি এবং জিম্মি মুক্তির চুক্তিতে পৌঁছানো সম্ভব হোক বা না হোক দক্ষিণ গাজার রাফা শহরে হামাসের বিরুদ্ধে অভিযান চালাবে ইসরাইল। মঙ্গলবার দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই কথা বলেছেন। এক বিবৃতিতে নেতানিয়াহুর কার্যালয় জানিয়েছে, সব লক্ষ্য অর্জনের আগে আমরা যুদ্ধ বন্ধ করব-এই ধারণাটি প্রশ্নের ঊর্ধ্বে। আনাদুলুর খবরে বলা হয়েছে, গাজার হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় মঙ্গলবার জানিয়েছে, গাজায় ইসরাইলি হামলায় নিহতের সংখ্যা ৩৪ হাজার ৫৩৫ জনে পৌঁছেছে। তার মধ্যে অন্তত ১০ হাজার নিখোঁজ ফিলিস্তিনির মরদেহ উদ্ধার করা যায়নি। ফলে ধ্বংসস্তূপের নিচে পচতে থাকা এসব মরদেহের কারণে এখন রোগ বালাই ছড়াচ্ছে। স্থানীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় মাইক্রো ব্লগিং সাইট এক্সে (সাবেক টুইটার) এক পোস্টে বলেছে, ধ্বংসস্তূপের নিচে অব্যাহতভাবে জমা হওয়া কয়েক হাজার মরদেহ রোগবালাই ছড়ানো শুরু করেছে। বিশেষ করে গ্রীষ্মের গরমের তীব্রতা বাড়ার কারণে মরদেহগুলো দ্রুত গতিতে পচছে।

এদিকে বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, ইসরাইলি সেনাবাহিনীর পাঁচটি ইউনিট ব্যাপকভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত বলে প্রমাণ পেয়েছে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। গত সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, এরপরও ইসরাইলি বাহিনীকে সামরিক সমর্থন দিয়ে যাবে মার্কিন প্রশাসন।

যেসব স্বতন্ত্র ঘটনায় ইসরাইলি বাহিনীর বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রমাণ পাওয়া গেছে, তার সব কয়টিই ঘটেছে ফিলিস্তিনের গাজার বাইরে; চলমান যুদ্ধ শুরুর আগেই। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অধিকৃত পশ্চিম তীর এবং জেরুজালেমে সব ঘটনা ঘটেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

অভিযুক্ত চারটি সেনা ইউনিটের বিরুদ্ধে সংশোধনমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে ইসরাইল। পঞ্চম ইউনিটের বিষয়ে অতিরিক্ত তথ্য দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল। এর অর্থ হলো ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর সবগুলো ইউনিটই মার্কিন সামরিক সহায়তা পাওয়ার যোগ্য থাকবে।

যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলের প্রধান সামরিক সাহায্যকারী দেশ। প্রতি বছর ইসরাইলকে ৩৮০ কোটি ডলারের অস্ত্র ও প্রতিরক্ষাব্যবস্থা সরবরাহ করে যুক্তরাষ্ট্র।

আলজাজিরার খবরে বলা হয়েছে, গাজায় পরিচালিত বৃহত্তম দাতাগোষ্ঠী ইউএন এজেন্সি ফর ফিলিস্তিনি শরণার্থী (ইউএনআরডব্লিউএ)-এর প্রধান ফিলিপ লাজারিনি জানিয়েছেন, গাজায় ইসরাইলি যুদ্ধে অন্তত ১৮২ জন সেবাকর্মী নিহত হয়েছেন। গাজায় ইসরাইলি সামরিক হামলা এজেন্সির ১৬০টি স্থাপনাকেও ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। ইসরাইলি সেনারা ভবনের ভেতর আশ্রয় নেওয়া মোট ৪০০ জনকে হত্যা করেছে বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যমটির খবরে আরও বলা হয়েছে, ইসরাইলি হামলা থেকে প্রাণে বাঁচতে যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা থেকে পালিয়ে যাওয়ার জন্য ক্রাউডফান্ডিং শুরু করেছেন ফিলিস্তিনিরা। যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা থেকে নিজেদের পরিবারকে বের করে দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে ফিলিস্তিনিরা।

রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরাইলের বিমান হামলায় অন্তত ৪০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। এদের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি নিহত হয়েছে গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফায়। সোমবার ইসরাইলি যুদ্ধবিমানগুলো রাফার তিনটি বাড়িতে আর উত্তরে গাজা সিটির দুইটি বাড়িতে বোমাবর্ষণ করে। ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গাজা সিটির হামলায় অন্তত ছয়জন নিহত আর বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।

সোমবার রাতে গাজার মধ্যাঞ্চলে আল-নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরে ইসরাইলের বিমান হামলায় তিন ফিলিস্তিনি নিহত হয়। নিহতদের মধ্যে একজন সাংবাদিক আছেন বলে চিকিৎসাকর্মী ও হামাস নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যম জানিয়েছে। গাজার অন্যান্য অঞ্চলে ইসরাইলের পৃথক বিমান হামলায় আরও ছয়জন নিহত হয়।

সোমবার ইসরাইলের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, গাজার মধ্যাঞ্চলে রোববার দুই ইসরাইলি সেনা নিহত হয়েছে। হামাসের মিত্র ইসলামিক জিহাদের সশস্ত্র শাখা জানিয়েছে, সোমবার তারা ইসরাইল লক্ষ্য করে রকেট ছুড়েছে। এর মাধ্যমে এমন ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে যে গাজায় প্রায় সাত মাস ধরে চলা ইসরাইলের অবিরাম আকাশ ও স্থল হামলা সত্ত্বেও গোষ্ঠীটির রকেট ছোড়ার সক্ষমতা এখনও বজায় আছে।

গাজার ২৩ লাখ বাসিন্দার মধ্যে প্রায় অর্ধেক রাফায় আশ্রয় নিয়ে আছে। এই শহরটিকে একসময় ‘নিরাপদ স্থান’ বলে ঘোষণা করেছিল ইসরাইলি বাহিনী। শহরটিতে আক্রমণ না চালাতে বিশ্বের নেতারা ইসরাইলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

রাফায় হামলার বিষয়ে রয়টার্সের প্রশ্নের উত্তরে ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর (আইডিএফ) মুখপাত্র বলেছেন, গাজার দক্ষিণাঞ্চলের বেসামরিক এলাকা থেকে সন্ত্রাসীরা তৎপরতা চালাচ্ছিল, সন্ত্রাসীদের সেসব লক্ষ্যস্থলে যুদ্ধবিমানগুলো আঘাত হেনেছে। কিন্তু তিনি আর বিস্তারিত কিছু জানাননি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d