চট্টগ্রামরাজনীতি

গ্রুপ-উপগ্রুপে বিভক্ত ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদ

যাত্রা শুরু হওয়ার মাত্র তিন বছরের মাথায় ফাটল ধরেছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকদের একাংশের সংগঠন ‘ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের (ইচিপ)। এতদিন সংগঠনটির নেতা-কর্মীদের মাঝে অন্তঃদ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে না এলেও নতুন কমিটি নিয়ে বিভক্ত ইচিপ প্রকাশ্যে এসেছে। একই গ্রুপের মধ্যে উপ-গ্রুপে বিভক্ত হয়ে ঘোষণা করা হয়েছে পাল্টাপাল্টি কমিটিও।

এদিকে, নতুন কমিটি নিয়ে উভয়পক্ষ একে অপরকে দোষারোপ করছে। এমনকি কমিটি স্বঘোষিত বলে অভিযোগ তুলে কোনটি আসল তা নিয়েও হাসপাতাল ও ক্যাম্পাসে ব্যাপক হাস্যরসের সৃষ্টি করেছে।

চিকিৎসকসহ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০২১ সালের পর ছাত্রলীগ ও ইন্টার্ন চিকিৎসকদের দুটি গ্রুপ প্রকাশ্যে আসায় এমনিতেই এতদিন চমেক হাসপাতাল ও ক্যাম্পাসে বারবার দ্বন্দ্বে জড়িয়েছিল দুই পক্ষ। তারমধ্যে একই গ্রুপের নতুন এই অন্তর্দ্বন্দ্বে বহিরাগতদের আধিপত্যের শংকা বাড়ছে। একইসঙ্গে ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের নিয়মিত এ উপস্থিতি একাডেমিক কাউন্সিলের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তসমূহকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাচ্ছে।

চমেক সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘ বছর ধরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) ও হাসপাতালে একক আধিপত্য ছিল নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক চসিক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের। ২০২১ সালের আগস্টে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলকে হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি হিসেবে ঘোষণা দেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এরপর থেকেই ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ ও ইন্টার্ন চিকিৎসকদের মধ্যে আরেকটি গ্রুপ সক্রিয় হয়। তাতে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ও মারামারি ঘটনাও ঘটে।

সূত্র জানায়, চমেক হাসপাতালের শিক্ষানবীশ চিকিৎসকদের দুটি সংগঠনের মধ্যে ‘ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের (ইচিপ)’ নেতা কর্মীরা শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী হিসেবে নিজেদের পরিচয় দেন। আর ‘ইন্টার্ন ডক্টরস; এসোসিয়েশনের (আইডিএ)’ নেতা কর্মীরা নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের অনুসারী হিসেবে পরিচয় দিয়ে থাকেন। ‘ইচিপ’ ২০২১ সালের নভেম্বরে তাদের কার্যক্রম শুরু করে। বর্তমানে কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্বে আছেন ডা. সৌমিক-আরাফ পরিষদ। ইতোমধ্যে তাদের শিক্ষানবীশ সময়কাল শেষ হয়েছে।

জানা যায়, সদ্য পাস করা শিক্ষার্থীরা শিক্ষানবীশ চিকিৎসক হিসেবে চমেক হাসপাতালে যোগদান করেন। এরমধ্যে গত পহেলা অক্টোবর ইচিপের বর্তমান কমিটি (সৌমিক-আরাফ পরিষদ) নতুন করে ৪৯ বিশিষ্ট একটি কমিটির অনুমোদন দেন। যাতে সভাপতি হিসেবে ঘোষণা করা হয় সদ্য পাসকৃত শিক্ষার্থী ডা. মো. ফাহাদুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক ডা. মির্জা নাজিম উদ্দীন দীপ্তকে। কিন্তু একই সংগঠনের নামে অন্য আরেকটি কমিটিরও ঘোষণা আসে। যেখানে সভাপতি হিসেবে ডা. মোহাম্মদ ফয়েজ উল্লাহ ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ডা. কনক দেবনাথকে সর্বসম্মতিক্রমে নির্বাচিত করা হয় বলে স্বঘোষিত করা হয়। তবে এ কমিটির বিষয়ে কোন কিছুই জানেন না বলে দাবি করেন বর্তমান সভাপতি ডা. সৌমিক বড়ুয়া।

জানতে চাইল ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের (ইচিপ) সভাপতি ডা. সৌমিক বড়ুয়া বলেন, ‘পাসকৃত ডাক্তারদের ভোটের মাধ্যমে ফাহাদ-দীপ্ত কমিটিকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। অনুমোদন দেওয়ার একদিন পর তারা (ফয়েজ-কনক) নিজেরাই নিজেদের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা দিয়ে কমিটি ঘোষণা করেন। অথচ তাদের কমিটিতে পাসকৃত ডাক্তার হচ্ছে মাত্র ৩ জন। বাকি যারা আছে, তারা সকলেই শিক্ষার্থী। এটিতো শিক্ষার্থী কিংবা ছাত্রলীগের কোন কমিটি নয়। এটি সম্পূর্ণ চিকিৎসকদের সংগঠন। কিন্তু তারা নিয়ম নীতি তোয়াক্কা না করেই এসব করেছে।’

তবে পূর্ণ সমর্থন ও সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটের মাধ্যমেই ডা. ফয়েজ-কনক পরিষদ গঠন হয়েছে দাবি করে স্বঘোষিত কমিটির সভাপতি ডা. মোহাম্মদ ফয়েজ উল্লাহ বলেন, ‘যারা ফাহাদ-দীপ্ত কমিটিকে অনুমোদন দিয়েছেন, তারা নিজেরাই সমালোচিত। অতীতে তাদের অনৈতিক কাজের কারণে ইচিপের সুনাম ক্ষুন্ন হয়েছে। আমাদেরও লজ্জিত হতে হয়েছিল। যার কারণে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা তাদের দেওয়া কমিটিকে মেনে নিতে পারেননি। পূর্ণ সমর্থন ও সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটের মাধ্যমেই ইন্টার্ন চিকিৎসকরা ফয়েজ-কনক কমিটিকে অনুমোদন দিয়েছে। সংগঠনের স্বার্থে জনসমর্থন নিয়ে আমরা কাজ করবো।’

নিয়ম মেনে অনুমোদন হয়েছিল কি-না জানতে চাইলে ফয়েজ উল্লাহ বলেন, ‘ইচিপের নির্দিস্ট কোন গঠনতন্ত্র নেই। প্রথম যে কমিটি গঠিত হয়েছিল, ওই সময়ে নিজেরাই নিজেদের অনুমোদন দিয়ে গঠিত হয়। এখন যেহেতু সংগঠনের স্বার্থ জড়িত, তাই জনসমর্থনকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।’

অনৈতিক অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে সৌমিক বড়ুয়া বলেন, ‘আমাদের কমিটির বয়স প্রায় ১১ মাস। এতদিন কোন অভিযোগই ছিল না। তারা নিজেরাও আমাদের সাথে কাজ করেছিল। যখন নিয়ম অনুযায়ী পরবর্তী কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে, এরপরই অভিযোগ ওঠার কারণ কী। এটি নিজেদের স্বার্থ ছাড়া আর কিছুই নয়। আমরাতো তাদেরকে (ফয়েজ-কনক) সঙ্গে নিয়েই কমিটি গঠনের উদ্যোগ নিয়েছি, তারা নিজেরাও ভোট দিয়েছেন। বরং তাদের এমন কর্মকান্ডে ইচিপের সুনাম ক্ষুণ্ণ হচ্ছে এবং হবে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d