দেশজুড়ে

‘ঘর-জিনিসপত্র কিছুই নাই, একবারে নিঃস্ব হয়ে গেছি’

পরনের কাপড় ছাড়া আর কিছুই নিয়ে আসতে পারিনি। কেবল আমরাই বেঁচে আসছি। এখন ঘর-জিনিসপত্র কিছুই নাই, সব ভাসিয়ে নিয়ে গেছে পানি। এরপরও অবশিষ্ট ছিল তা টানা ৫ দিনের পানিতে পচে গেছে। কী বলব, আমি তো একেবারে নিঃস্ব হয়ে গেছি।

পানিতো কমে গেছে, কিন্তু আমার যে ক্ষতি অইল, তা তো কোনোভাবে পোষাবে না— এমনই বলছিলেন ফেনীর সোনাগাজীর বগাদানা ইউনিয়নের আলামপুর গ্রামের হাসিনা।

ফুলগাজী ইউনিয়নের জিএম হাট গ্রামের কৃষক আবু মিয়া বলেন, বন্যার পানি নামার খবরে বাড়ি গিয়ে দেখি, পানির প্রবল ঢেউয়ে বাড়ির পেছনের মাটির দেয়াল ভেঙে গেছে। ধানের জমিতে এখনো দুই ফুট পানি। নিজের সহায়-সম্বল হারিয়ে প্রায় পথে বসে যাচ্ছি। কী করে এই অবস্থা থেকে আবার ঘুরে দাঁড়াবো, বুঝতে পারছি না। নিজেকে খুব অসহায় মনে হচ্ছে।

ফেনী শহরের মাস্টারপাড়া এলাকার ওষুধ দোকানি কার্তিক বাবু। দোকানে ৬ লক্ষাধিক টাকার ওষুধ ছিল। বন্যার পানি কমার পর দোকান খুলে দেখেন দোকানের অধিকাংশ আসবাব নষ্ট হয়ে গেছে। ওষুধগুলোও আর বিক্রির যোগ্য নেই। সব হারিয়ে যেন শূন্য থেকে শুরু তার।

সব হারানোর এমন গল্প একটা দুটো নয়, হাজার হাজার। ঘর-বসতির আসবাব, কাপড়-চোপড় থেকে ব্যবসার পুঁজি। সব হারিয়ে দিশেহারা মানুষগুলো। ফেনীতে স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যার পর ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে উঠছে ক্ষত চিহ্ন। আশ্রয়কেন্দ্রগুলো থেকে মানুষ ফিরতে শুরু করলেও কাটেনি দুর্ভোগ। রেখে আসা ঘর-বসতির পুরোটাই যেন ধ্বংসস্তূপ। বানভাসি পরিবারগুলো সব হারিয়ে পথে বসার উপক্রম।

ফেনীতে ভয়াবহ বন্যায় ৬টি উপজেলায় মৎস্য, প্রাণিসম্পদ, কৃষি, সওজ, এলজিউডি ও দুধ-ডিমের ক্ষতি হয়েছে প্রায় ১ হাজার ১৪ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। ফেনী জেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ অধিদপ্তরের বন্যার ক্ষয়ক্ষতির প্রাথমিক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

এদিকে বন্যায় পানিতে তলিয়ে শুধু কৃষিতে ক্ষতি হয়েছে ৪৫১ কোটি ২০ লাখ টাকা। এতে হতাশ ও পথে বসেছেন হাজার হাজার কৃষক। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আড়াই হাজার খামারি। তাদের ঘুরে দাঁড়ানো অসম্ভব হয়ে পড়েছে, তবে সরকারি প্রণোদনা পেলে নতুন উদ্যোগে শুরু করার সংগ্রাম করবেন বলে জানান অনেকে।

চলতি বছরের তৃতীয় দফার এ বন্যায় ফেনীর সবকটি উপজেলার বিভিন্ন জনপদ আক্রান্ত হয়। মাইলের পর মাইল রাস্তা নষ্ট হয়ে যায়। হাঁটার পরিস্থিতি নেই অনেক রাস্তায়। কৃষি, মৎস্য, পোল্ট্রিসহ সার্বিক ক্ষতি হয়েছে হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ। ভয়াবহ বন্যায় এখন পর্যন্ত মারা গেছে ১৯ জন।

বন্যা পরবর্তী স্থানীয়দের চিকিৎসা ও পুনর্বাসন কার্যক্রমে মাঠে কাজ করছে সেনা, নৌ বাহিনী। অন্য যেকোনো সময়ের চাইতে এ বন্যায় দ্রুত উদ্ধার কার্যক্রমে সশস্ত্র বাহিনীকে মাঠে দেখেছে স্থানীয়রা।

সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, বন্যার শুরুর দিন থেকে সেনাবাহিনী মাঠে কাজ করছে। উদ্ধার তৎপরতা থেকে ত্রাণ বিতরণ সব ক্ষেত্রে রেখেছে ভূমিকা। এখনও বন্যা পরবর্তী চিকিৎসা সহায়তাসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ড সেনাবাহিনীর সদস্যরা কাজ করছে।

জেলা প্রশাসক মুসাম্মৎ শাহীনা আক্তার বলেন, এবারে বন্যায় ফেনীতে ১০ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের জন্য সরকারের নির্দেশনা পেলে তারা কাজ শুরু করবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d