চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামে এবারও সাড়ে ৩ লাখ চামড়া সংগ্রহের টার্গেট

প্রতি বছরের মতো এবারও কোরবানির ঈদে সাড়ে ৩ লাখ কাঁচা চামড়া কেনার প্রস্তুতি নিয়েছেন চট্টগ্রামের কাঁচা চামড়া আড়তদাররা। কাঁচা চামড়া সংরক্ষণের প্রথম এবং প্রধান উপকরণ হলো লবণ। এখন লবণ কেনা, চামড়াজাত করার জন্য গুদাম ভাড়া এবং শ্রমিক ঠিক করে সকল ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার সমবায় সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ মুসলিম উদ্দিন।

কোরবানির সময়ে পশুর চামড়া প্রক্রিয়াজাত করতে লবণের চাহিদা থাকে সবচেয়ে বেশি। লবণ ছাড়া কাঁচা চামড়া প্রক্রিয়াজাত করার অন্য কোনও উপায় নেই। অতি প্রয়োজনীয় এই লবণ নিয়ে এবার বেশ স্বস্তিতে কাঁচা চামড়া আড়তদাররা। দামও গত বছরের চেয়ে বস্তাপ্রতি (৭৪ কেজি বস্তা) কমেছে প্রায় ১০০ টাকা।

বৃহত্তর চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ মুসলিম উদ্দিন বলেন, গতবছর চট্টগ্রামে কোরবানির ঈদে প্রায় তিন লাখ ৪৫ হাজার কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহ করেছিলাম আমরা (আড়তদাররা)। এর মধ্যে আড়াই লাখের বেশি ছিল গরুর চামড়া। এবার গরু–ছাগল–মহিষ মিলে সাড়ে ৩ লাখ চামড়া সংগ্রহের টার্গেট আছে আমাদের। এখন আমাদের লবণ ক্রয়, লোকবল ঠিক করা–গুদাম ঠিক করাসহ সার্বিক প্রস্তুতি চলছে।

তিনি বলেন, লোকসান গুণতে গুণতে আমাদের এই ব্যবসা (কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ী) থেকে অনেকেই দেউলিয়া হয়ে গেছে। অনেকেই এই ব্যবসা গুটিয়ে অন্য ব্যবসায় চলে গেছে। আগে চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার ব্যবসায়ী সমিতির সদস্য ছিল ১১২জন। আমাদের সমিতির বাইরে ছিল আরো ১০–১২জনের মতো। এখন আমাদের সমিতির সদস্য সংখ্যা ১১২ জন থাকলেও গত দুই বছরে ৩০–৪০ জনের বেশি কেউ চামড়া ক্রয় করে না। প্রতি বছর লোকসান দিতে দিতে ঋণের বোঝা বইতে বইতে অনেকেই এই ব্যবসা ছেড়ে অন্য ব্যবসায় চলে গেছে। তাছাড়া আমাদের চট্টগ্রামে আগে মদিনা ট্যানারি ও রিফ লেদার ট্যানারি নামে দুটি ট্যানারি ছিল। বর্জ্য পরিশোধনাগার (ইটিপি) না থাকায় ছয় বছর আগে মদিনা ট্যানারি বন্ধ করে দেয় পরিবেশ অধিদপ্তর।

চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা প্রতিবছর সাড়ে তিন থেকে চার লাখ চামড়া সংগ্রহ করলেও এক লাখ চামড়া নেয় চট্টগ্রামের রিফ লেদার ট্যানারি। বাকি চামড়া বিক্রি করতে ঢাকার ট্যানারির উপর নির্ভর করতে হয়। এবারও রিফ লেদার গত বছরের মত চট্টগ্রামের আড়তদারদের কাছ থেকে এক লাখ চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে বলে জানা গেছে। বাংলাদেশে পশুর চামড়ার যে চাহিদা, তার ৮০–৯০ শতাংশই পূরণ হয় কোরবানির ঈদে। ফলে এটাই চামড়া সংগ্রহের মৌসুম।

আগামী ১৭ জুন বাংলাদেশে পবিত্র কোরবানির ঈদ হবে। রেওয়াজ অনুযায়ী পরের দুই দিনও কিছু পশু কোরবানি চলবে। ওই সময় পাড়া–মহল্লা থেকে কাঁচা চামড়া কিনে বা সংগ্রহ করে মৌসুমী ক্রেতারা তা বিক্রি করবেন আড়তে। আড়ত সেই চামড়া কিছুটা প্রক্রিয়াজাত করে ট্যানারিগুলোর কাছে বিক্রি করবে।

ঈদ সামনে রেখে কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। ঢাকায় গরুর চামড়ার দাম গতবারের চেয়ে ৫ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৩ টাকা বেড়েছে। ট্যানারি ব্যবসায়ীদের এবার ঢাকায় লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়া কিনতে হবে ৫৫ থেকে ৬০ টাকায়; গত বছর এই দাম ছিল ৫০ থেকে ৫৫ টাকা।

ঢাকার বাইরে (চট্টগ্রামে) লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার দাম হবে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা, গতবছর যা ৪৭ থেকে ৫২ টাকা ছিল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d