চট্টগ্রামে ওএমএস ডিলার নিয়োগে ভয়াবহ জালিয়াতি
চট্টগ্রামে খোলাবাজারে বিক্রয় (ওএমএস) ডিলারশিপ নিয়োগে ভয়াবহ জালিয়াতি ধরা পড়েছে। ভুয়া নাম ও ঠিকানা ব্যবহার করে অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠান দেখিয়ে ওএমএস ডিলারশিপ হাতিয়ে নিয়েছে বেশ কয়েকজন। এক ভাইয়ের ডিলারশিপ থাকা সত্ত্বেও অন্য দুই ভাইকে ডিলারশিপ দেওয়া হয়েছে। আবার খাদ্য বিভাগের সুবিধাভোগী হওয়া সত্ত্বেও নীতিমালা লঙ্ঘন করে কয়েকজনকে ডিলার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে চট্টগ্রাম খাদ্য বিভাগে তোলপাড় চলছে।
এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে খাদ্যমন্ত্রী, সচিব, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার বারবর পতেঙ্গার মহীদুল আলম কাজল লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
২৪ সেপ্টেম্বর খাদ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব কুল প্রদীপ চাকমা স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে সারা দেশে ওএমএস ডিলার নিয়োগের ঘোষণা দেওয়া হয়।
জানা গেছে, চট্টগ্রামে সাতটি প্রতিষ্ঠানকে ডিলার হিসাবে খাদ্য মন্ত্রণালয় নিয়োগ দেয়। সাতটির মধ্যে পাঁচটিই চট্টগ্রাম মহানগরীর। আবার পাঁচটির মধ্যে তিনটিই ভুয়া ও নামসর্বস্ব। অভিযোগ এসব প্রতিষ্ঠানের কোনো অস্তিত্ব নেই। তাদের দেওয়া ঠিকানাও ভুয়া।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে ৩ নম্বরে রয়েছে ইরফান উদ্দিনের মেসার্স ইরফান অ্যান্ড ব্রাদার্স। ১৬ নম্বরে চকবাজার ওয়ার্ড-২৪৮, হাজি হক সুপার মার্কেট, খাতুনগঞ্জ, চট্টগ্রাম ঠিকানা ব্যবহার করা হয়েছে। মূলত এ ঠিকানাটি ভুয়া। ২৪৮, হাজি হক সুপার মার্কেট, খাতুনগঞ্জ এটি ৩৫ নম্বর বকশিরহাট ওয়ার্ডের আওতাধীন। খাতুনগঞ্জ থেকে ১৬ নম্বর চকবাজার ওয়ার্ড প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে। ২৪৮, হক সুপার মার্কেটে ‘মেসার্স ইরফান অ্যান্ড ব্রাদার্স’ নামে কোনো প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব নেই।
চট্টগ্রামের ব্যবসায়িক প্রাণকেন্দ্র খাতুনগঞ্জে হাঁটাচলা করাও দুষ্কর। এখানে ওএমএসের চাল বিতরণ করা বা হতদরিদ্র মানুষের যাতায়াত ও লাইন ধরিয়ে চাল ও আটা বিতরণ করার মতো কোনো জায়গা নেই। ওএমএসের নামে ডিলারশিপ নিয়ে সরকারি চাল আসাৎ করাই মূল উদ্দেশ্য।
এ ব্যাপারে জানতে ইরফানের মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। ইরফান উদ্দিনের মতো একই তারিখে তার আপন বড় ভাই বেলাল উদ্দিনও ওএমএস ডিলারশিপ নিয়েছেন।
বেলাল উদ্দিনের প্রতিষ্ঠান দেখানো হয়েছে-মেসার্স বেলাল ট্রেডিং। ঠিকানা-৩৫ নম্বর বকশিরহাট ওয়ার্ড, শেখ মোশারফ হোসেন রোড, রাজাখালী, চাক্তাই, চট্টগ্রাম। কিন্তু সেখানে ‘মেসার্স বেলাল ট্রেডিং’ নামে কোনো প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব নেই। জানা গেছে, ২০২২ সালের ২৮ জুন বেলাল উদ্দিনের গুদামে সরকারি চাল বোঝাই ট্রাক খালাসের সময় বাকলিয়া থানা পুলিশ ট্রাকটি আটক করে। এ ব্যাপারে মামলা চলমান। মিলার হওয়ার পরও ওএমএস নীতিমালা লঙ্ঘন করে বেলালকে অদৃশ্য কারণে ওএসএসের ডিলার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
বেলাল উদ্দিনের আরেক ভাই হেলাল উদ্দিনেরও ওএমএসের ডিলারশিপ রয়েছে। তার প্রতিষ্ঠানের নাম ‘মেসার্স একে এন্টারপ্রাইজ’। হেলাল উদ্দিনের ‘মেসার্স একে এন্টারপ্রাইজ’ নামে বিভাগীয় খাদ্য পরিবহণ ঠিকাদারের (ডিআরটিসি) লাইসেন্স রয়েছে। ওএমএস নীতিমালা অনুযায়ী পরিবহণ ঠিকাদারির লাইসেন্স থাকলে ওএমএসের ডিলার হিসাবে নিয়োগ পাওয়ার সুযোগ নেই। হেলালের নামে মেসার্স একে এন্টারপ্রাইজ নামে টিসিবির ডিলারশিপও রয়েছে। তিন ভাই ওএমএস ডিলারশিপ পাওয়ায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
অভিযোগে বলা হয়-‘মেসার্স লাকী স্টোরের’ মালিক তাপস চৌধুরী এবং ‘মেসার্স এ রহমান স্টোরের’ মালিক মঞ্জুর হোসেনকে ওএমএসের ডিলার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ‘মেসার্স এ রহমান স্টোরের’ নামে পাঠানটুলি, চৌমুহনী এলাকায় কোনো প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব নেই। আর তাপস চৌধুরী ‘বিতর্কিত’।
এ ব্যাপারে বৃহস্পতিবার জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সুমাইয়া নাজনীন বলেন, ওএমএস ডিলারশিপ নিয়োগ দেয় খাদ্য মন্ত্রণালয়। তবে নীতিমালা লঙ্ঘন করে নিয়োগ পেয়ে থাকলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।