চট্টগ্রামে কারা হচ্ছেন ‘সৌভাগ্যের বরপুত্র’
চট্টগ্রামের ৪-৫টি সংসদীয় আসনে আওয়ামী লীগে প্রার্থিতা পরিবর্তন নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। দলীয় টিকেট কারা পাচ্ছেন, কার কপাল পুড়ছে বা নতুন করে কারা যুক্ত হচ্ছেন-এ নিয়ে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা। বর্তমান সংসদ সদস্য ও হেভিওয়েট প্রার্থীদের নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। হিসাব-নিকাশের খেরোখাতা চুকিয়ে আজ ‘প্রার্থীভাগ্য’ নির্ধারণ হয়ে যেতে পারে। আজ-কালের মধ্যে চট্টগ্রাম বিভাগসহ জেলার ১৬ আসনের সৌভাগ্যের বরপুত্র কারা।
আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ড প্রার্থী বাছাইয়ে দুটি জরিপের উপর গুরুত্ব দিচ্ছে। দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা বিভিন্ন উপায়ে এসব জরিপ করিয়েছেন। যেসব সংসদ সদস্যের ব্যাপারে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে, তৃণমূলে কোন্দলে জড়ানোর তথ্য-প্রমাণ রয়েছে, তাদের বাদ দেওয়া হচ্ছে। উত্তরবঙ্গসহ চারটি বিভাগের প্রার্থী বাছাই শেষে সাংবাদিকদের এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। রবিবারের মধ্যে সারাদেশে তিন শ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করা হবে বলে জানান তিনি।
চট্টগ্রামের ১৬ সংসদীয় আসনের ভাগ্য-নির্ধারণ আজ চূড়ান্ত হতে পারে। ১৬ আসনে ২৩০টি মনোনয়ন ফরম কিনেছেন ২১৭ মনোনয়নপ্রত্যাশী। এরমধ্যে চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী, চান্দগাঁও, পাঁচলাইশ, বায়েজিদ আংশিক) ও চট্টগ্রাম-১১ (পতেঙ্গা-বন্দর) আসনে ২৮ জন করে মনোনয়নপ্রত্যাশী দলীয় ফরম জমা দিয়েছেন। এরপর চট্টগ্রাম-১০ (খুলশী, পাহাড়তলী, হালিশহর) আসন ও চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসন থেকে ২০ জন ফরম কিনেছেন। চট্টগ্রাম-৯ (বাকলিয়া-কোতোয়ালী) আসন থেকে মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন ১৭ জন। চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনে ১৬ জন, চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) ও চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসন থেকে ১৫ জন করে দলীয় মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন। সীতাকুণ্ড আসনে ১১ জন ফরম জমা দিয়েছেন। নগরী ও জেলার ৪-৫টি আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী পরিবর্তনের গুঞ্জনে বিপুল সংখ্যক ফরম কিনেছেন মনোনয়নপ্রার্থীরা। ভোটার বা দলীয় নেতা-কর্মীরা চেনেন না, তারাও মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন বিভিন্ন আসনে। এ নিয়ে এলাকায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।
নগরের তিন আসন ছাড়াও নগরের সঙ্গে সম্পৃক্ত আরও তিন আসনসহ ছয়টি আসনে ১০৪ জন মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন। এরমধ্যে নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন নগরের তিনটি আসনে ফরম জমা দিয়ে আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছেন। চট্টগ্রাম-৯ (বাকলিয়া-কোতোয়ালী) আসনে ফরম জমা দিয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য ও শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন ও সিডিএ চেয়ারম্যান এম জহিরুল আলম দোভাষ, এডভোকেট ইব্রাহীম হোসেন চৌধুরী বাবুলসহ ১৭ জন। এটি চট্টগ্রামের মর্যাদাপূর্ণ ও গুরুত্বপূর্ণ আসন। চট্টগ্রাম-১০ আসন থেকে ফরম জমা দিয়েছেন আ জ ম নাছির ও বর্তমান সংসদ সদস্য মহিউদ্দিন বাচ্চু। আছেন সিটি করপোরেশনের সাবেক প্রশাসক খোরশেদুল আলম সুজন। চট্টগ্রাম-১১ আসনে ফরম জমা দিয়েছেন নাছির, বর্তমান সংসদ সদস্য এম এ লতিফ, খোরশেদুল আলম সুজন ও আলতাফ হোসেন বাচ্চুসহ ২৮ জন। নগরীর এই তিন আসনে হেভিওয়েট প্রার্থীদের ঘিরে চলছে হিসাব-নিকাশ। পুরনো থাকছেন নাকি নতুন মুখ আসছেন, এ নিয়ে চলছে নানা বিশ্লেষণ।
নগর ছাড়াও সিটি করপোরেশন সম্পৃক্ত তিন আসন নিয়ে চলছে নানা জল্পনা। চট্টগ্রাম-৮ আসন থেকে মনোয়নন ফরম জমা দিয়েছেন ২৮ জন। বর্তমান সংসদ সদস্য ও নগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নোমান আল মাহমুদ, সিডিএর সাবেক চেয়ারম্যান ও নগর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ আবদুচ ছালাম, তার ভাই বিজিএমইএ নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, জেলা আ. লীগ নেতা আবদুল কাদের সুজন, প্রয়াত দুই সংসদ সদস্যের স্ত্রী-মেয়ে, একাধিক সাবেক কাউন্সিলর ও ছাত্রনেতা। ভোটাররা চেনেন না বা নাম শোনেনি এমন প্রার্থীও রয়েছে এ আসনে।
চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকু- ও চসিকের ৯-১০ নং ওয়ার্ড) আসনে ফরম জমা দিয়েছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ উপ-কমিটির সদস্য লায়ন মোহাম্মদ ইমরান, বর্তমান সংসদ সদস্য দিদারুল আলম, চসিক কাউন্সিলর ড. নিছার উদ্দিন আহমদ মঞ্জু, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও বর্তমান উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল্লাহ আল বাকের ভূঁইয়া ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এসএম আল মামুন।
চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী ও চসিকের ১ ও ২নং ওয়ার্ড) আসনে মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এম এ সালাম, নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এডভোকেট ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুলসহ ১৪ জন। এ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ।
চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ টি এম পেয়ারুল ইসলাম, সংরক্ষিত আসনে সংসদ সদস্য খাদিজাতুল আনোয়ার সনি, উপজেলা চেয়ারম্যান হোসাইন মো. আবু তৈয়ব, ফখরুল আনোয়ার। এ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য হচ্ছেন আওয়ামী লীগ জোটের শরিক তরীকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভা-ারী। তিনি চার বার এ আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছেন। এবার আসনটি ভাগে চাইবেন আরেক ভা-ারী সৈয়দ সাইফুদ্দিন আল হাসানী আল মাইজভা-ারী। দুজন চাচা-ভাতিজা। সাইফুদ্দিন সুপ্রিম পার্টি নামে নতুন দল করে আওয়ামী লীগের সম্পৃক্ত হচ্ছেন। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেছেন সাইফুদ্দিনের জোট। এ আসনে এখন হিসাব-নিকাশ জটিল হয়ে দাঁড়িয়েছে।
চট্টগ্রাম-১১ (পটিয়া) আসনে দলীয় মনোনয়নকে ঘিরে ইতোমধ্যেই কাদা ছোড়াছুড়ি শুরু হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলছে তর্ক-বিতর্ক। এ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য হচ্ছেন সামশুল হক চৌধুরী। তিনি তিনবারের সংসদ সদস্য ও হুইপ। এছাড়াও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, সাবেক সংসদ সদস্য চেমন আরা তৈয়র, কেন্দ্রীয় যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র অধ্যাপক হারুনুর রশিদসহ ১৬ জন মনোনয়ন ফরম জমা দেন। দেশের দুটি বড় শিল্প গ্রুপ এ আসনে প্রার্থী নিয়ে নানা তদবির চেষ্টা চালাচ্ছে বলে গুঞ্জন রয়েছে।
চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ) আসনে ফরম জমা দিয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল জব্বার, তার ভাই ব্যবসায়ী নেতা আবদুল কৈয়ূম চৌধুরীসহ ১৭ জন।
চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনে আসনে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন বর্তমান সংসদ সদস্য আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সদ্য পদত্যাগ করা উপজেলা চেয়ারম্যান এম এ মোতালেব, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ মাঈনুদ্দিন হাসান চৌধুরীসহ ১৫ জন ফরম জমা দেন।
চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনে ফরম জমা দিয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মুজিবুর রহমান সিআইপি, জেলা আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল্লাহ কবির লিটন ও সদ্য বিদায়ী উপজেলা চেয়ারম্যান চৌধুরী মোহাম্মদ গালিব চৌধুরীসহ ১৫ জন।
চট্টগ্রামের ১৬টি সংসদীয় আসনের মধ্যে ৪-৫টি আসনে প্রার্থিতা পরিবর্তনের নানা গুজব-গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে। পছন্দের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের পক্ষে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা ধরনের স্ট্যাটার্স দিচ্ছেন অনুসারী ও নেতা-কর্মীরা।
নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, আগামী ৭ জানুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ৩০ নভেম্বর। বাছাই ১-৪ ডিসেম্বর।