চট্টগ্রাম থেকে ২৮৫ কিমি দূরে ‘হামুন’, রাতেই আছড়ে পড়বে উপকূলে
উত্তরপশ্চিম বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ও অবস্থানরত অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় হামুন আরও উত্তরপূর্বে তথা বাংলাদেশের উপকূলের দিকে এগিয়ে এসেছে। আবহাওয়া অধিদফতরের সবশেষ তথ্য বলছে, এটি চট্টগ্রাম বন্দরের ২৮৫ কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে চলে এসেছে।
এটি আরও উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে আজ রাত (২৪ অক্টোবর) নাগাদ উপকূল অতিক্রম করার সম্ভাব্য সময়ও এগিয়ে এসেছে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে অধিদফতর।
প্রবল ঘূর্ণিঝড়টির মূল অংশ সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ৯টা নাগাদ উপকূল অতিক্রম শুরু করতে পারে। তবে সমুদ্রবন্দরগুলোতে বিপদ সংকেতের কোনো পরিবর্তন আসেনি, আগের মতো চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৭ নম্বর বিপদসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) আবহাওয়ার ১২ নম্বর বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে ঘূর্ণিঝড় হামুনের গতিপথের বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেছে আবহাওয়া অধিদফতর। ঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্র থেকে দেওয়া বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, হামুন উত্তরপশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থারত ঘূর্ণিঝড়টি উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হচ্ছে। মঙ্গলবার দুপুর ৩টায় ঘূর্ণিঝড় হামুন চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ২৮৫ কিলোমিটার পশ্চিম-দক্ষিণপশ্চিম, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ২৫০ কিলোমিটার পশ্চিম-দক্ষিণপশ্চিম, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ২৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিম এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ১৮০ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরও উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হচ্ছে।
আবহাওয়া অধিদফতরের বিজ্ঞপ্তির তথ্য বলছে, ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৬৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৯০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া আকারে ঘণ্টায় ১১০ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ছে। প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রবর্তী অংশের প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ ভারী (৪৪ থেকে ৮৮ মিলিমিটার) থেকে অতি ভারী (২৮৯ মিলিমিটার) বর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটে সাগর বিক্ষুব্ধ রয়েছে।
হামুন এগিয়ে আসার কারণে পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ৫ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। এছাড়া মোংলা সমুদ্রবন্দরকে ৫ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। অন্যদিকে, প্রবল ঘূর্ণিঝড় হামুনের প্রভাবে সকাল থেকে থেমে থেমে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় (বিকাল ৩টা পর্যন্ত) চট্টগ্রামে ২২ দশমিক ৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস।
এ অবস্থায় উপকূলীয় জেলা পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলো ৭ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে। বাগেরহাট, খুলনা ও সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চর থাকবে ৫ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায়। একইসাথে উপকূলীয় জেলাগুলোতে ৩ থেকে ৫ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে। অতি ভারী বর্ষণের প্রভাবে কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলে ভূমিধ্বস হতে পারে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।