চট্টগ্রাম

চার খালের মুখে পাম্প চালু

বর্ষা ও জোয়ারে জলাবদ্ধতার ভোগান্তি কমাতে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ চার খালে কার্যকর হয়েছে রেগুলেটরযুক্ত চারটি পাম্প। এই পাম্পগুলোর মাধ্যমে দ্রুতসময়ের মধ্যে বৃষ্টি ও জোয়ারের পানি অপসারণ করা হবে।

এসব পাম্পের প্রতিটিতে এক সেকেন্ডে প্রায় ২৮০ লিটার পানি অপসারণ করা যাবে। অর্থাৎ, প্রতি মিনিটে একটি পাম্পের মাধ্যমে ১৬ হাজার ৮০০ লিটার পানি অপসারণ করা সম্ভব বলে জানান চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের পরিচালক বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফেরদৌস আহমেদ।

ইংল্যান্ডের বেডফোর্ড কোম্পানির তৈরি এই চারটি পাম্প গত সপ্তাহে মরিয়ম বিবি, কলাবাগিচা, টেকপাড়া ও ফিরিঙ্গিবাজার খালে বসানো হয়েছে। বেডফোর্ড কোম্পানির কয়েকজন সদস্য এসে তা কার্যকরও করে দেন। গত মঙ্গলবার এসব পাম্পের কার্যকারিতা দেখতে যান চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কন্সট্রাকশন ব্রিগেডের ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমেদ শাররিফ মানি, প্রকল্প পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফেরদৌস আহমেদ, প্রকল্প কর্মকর্তা মেজর রিজওয়ান। এ সময় বেডফোর্ড কোম্পানির কয়েকজন সদস্যও উপস্থিত ছিলেন।

গতবছরের মাঝামাঝি সময়ে নগরীর আগ্রাবাদ, হালিশহর এবং মহেশখাল সংলগ্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা নিরসনে মহেশখালে রেগুলেটরের তিন বড় পাম্প বসানো হয়েছিল। সেসব পাম্পের প্রতিটিতে এক সেকেন্ডে সাড়ে ৫ হাজার লিটার পানি অপসারণের ক্ষমতা রয়েছে। এসব পাম্প বসানোর পর থেকে নগরীর আগ্রাবাদ ও হালিশহর এলাকায় জলাবদ্ধতা অনেকাংশে কমেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

মূলত কোতোয়ালী থানা কেন্দ্রিক এই চার খালের অবস্থান। পাথরঘাটা, ফিরিঙ্গিবাজার এবং চাক্তাইয়ের কিছু এলাকা নিয়ে মরিয়ম বিবি, কলাবাগিছা, টেকপাড়া ও ফিরিঙ্গিবাজার খাল। এসব খালের মুখে পাম্প বসানোর ফলে এই চার খালকে কেন্দ্র করে আগে যে জলাবদ্ধতা হতো, তা এখন অনেকাংশে কমে আসবে বলে মনে করছেন প্রকল্প কর্মকর্তা।

জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফেরদৌস আহমেদ বলেন, বর্ষা ও জোয়ারের পানিতে নগরীর মধ্যে যাতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি না হয় যেজন্য আমরা খাল পুনঃখননসহ বেশকিছু উদ্যোগ নিয়েছি। অনেক সময় টানা বৃষ্টি ও জোয়ার হলে দ্রুতসময়ের মধ্যে পানি নদীতে যেতে না পারায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। পানি যাতে দ্রুতসময়ের মধ্যে খাল থেকে নদী বা সাগরে যেতে পারে সেজন্য এই পাম্প বসানো হয়েছে। শক্তিশালী এসব পাম্পের প্রতিটির মাধ্যমে সেকেন্ডে ২৮০ লিটার পানি অপসারণ করতে সক্ষম।

তিনি আরও বলেন, মরিয়ম বিবি, কলাবাগিচা, টেকপাড়া ও ফিরিঙ্গিবাজার- এই চারটি খাল মূলত কোতোয়ালী থানা এলাকা কেন্দ্রিক। সেখানে পাম্প বসানোর ফলে এসব এলাকার মানুষ জলাবদ্ধতার ভোগান্তি থেকে রক্ষা পাবে। তবে জলাবদ্ধতা থেকে পুরোপুরি মুক্তি পেতে হলে সচেতনার বিকল্প নেই। খাল ও ড্রেনে ময়লা-আবর্জনা ফেলা থেকে বিরত না হলে জলাবদ্ধতা থেকে পুরোপুরি মুক্তি পাওয়া সম্ভব না।

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের আগস্ট মাসে ৫ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে সিডিএ’র ‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ শীর্ষক একটি প্রকল্পের অনুমোদন দেয় একনেক। তিন বছর মেয়াদি এই প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় শেষ হয় ২০২০ সালের জুন মাসে। সর্বশেষ অনুমোদন পাওয়া নতুন আরডিপিপি অনুযায়ী জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের ব্যয় ৮ হাজার ৬২৬ কোটি টাকা এবং সময় ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ২০১৮ বছরের ৯ এপ্রিল সেনাবাহিনীর সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি (এমওইউ) স্বাক্ষর করে সিডিএ। এরপর ২৮ এপ্রিল প্রকল্পের কাজ শুরু হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d