চট্টগ্রাম

চাহিদার তুলনায় সরবরাহ বেশি, তবু পানির সংকট চট্টগ্রামে!

চট্টগ্রাম ওয়াসা চাহিদার চেয়ে বেশি পানি সরবরাহ দিচ্ছে।কিন্তু তারপরও কেন নগরীর বিভিন্ন স্থানে পানি সংকট বিরাজ করছে তার কোনো সদুত্তর নেই। ওয়াসা সূত্র জানায়, গতকাল বুধবার নগরীতে ৪৮ কোটি ১৬ লাখ লিটার পানি সরবরাহ করেছে ওয়াসা।আর ওয়াসার হিসাবে নগরীতে পানির দৈনিক চাহিদা ৪৫ কোটি লিটার।

ওয়াসা গত ১৫ বছরে কয়েকটি পানি শোধনাগার প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। এতে পানির উৎপাদনও অনেক বেড়েছে। আবার গভীর নলকূপের মাধ্যমে পানি উত্তোলন করে সরবরাহ দেওয়া হচ্ছে। সব মিলিয়ে ওয়াসার বর্তমানে দৈনিক উৎপাদন ক্ষমতা ৫০ কোটি লিটার। চাহিদা কম থাকায় দৈনিক ২/৩ কোটি লিটার কম উৎপাদন করা হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। কিন্তু তারপরও নগরীর বিভিন্ন স্থানে পানি সংকট বিরাজ করছে। সপ্তাহে দুই থেকে চার দিন রেশনিং করে পানি সরবরাহ দেওয়া হচ্ছে। প্রয়োজনীয় পানি না পাওয়ায় নগরবাসীকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বিশেষ করে নগরীর কাট্টলী, হালিশহর, আগ্রাবাদ, পাহাড়তলী, অক্সিজেন, বায়েজিদসহ আরও কয়েকটি এলাকায় পানি সংকট বিরাজ করছে। পানি সরবরাহ না পেয়েও ভুয়া বিল পরিশোধ করতে হচ্ছে বলে গ্রাহকদের অভিযোগ রয়েছে।

চট্টগ্রাম ওয়াসা সরবরাহ বাড়ার পরও কেন পানির সংকট জানতে চাইলে ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এ কে এম ফজলুল্লাহ ইত্তেফাককে বলেন, কয়েক মাস আগে হালদায় লবণাক্ততার কারণে পানি সরবরাহ কমে গিয়েছিল। তখন সপ্তাহে দুই-তিন দিন রেশনিং করে পানি সরবরাহ দিতে হয়েছে। এ সময় পাইপলাইনের কিছু সিস্টেমের সাময়িক নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। এখন সরবরাহ ব্যবস্থা আগের মতো স্বাভাবিক করতে সময় লাগছে। আশা করি দ্রুত সময়ে স্বাভাবিকতা ফিরে আসবে। নগরীতে পানির দৈনিক চাহিদা ৪৫ কোটি লিটার হলেও আমাদের ৫০ কোটি লিটারের সক্ষমতা রয়েছে।’

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ওয়াসার পানি শোধনাগারগুলোতে নতুন প্রযুক্তির মিটারিং সিস্টেম চালু রয়েছে। শোধনাগারে নদী থেকে কি পরিমাণ পানি সংগ্রহ করে শোধনাগারে নেওয়া হচ্ছে তা পরিমাপের মিটার সংযুক্ত রয়েছে। পরিশোধনের পর পানি নগরীর রিজার্ভারগুলোতে নেওয়া হয়। সেখান থেকে বিতরণ লাইনে সরবরাহ দেওয়া হয়। রিজার্ভারেও পানি গ্রহণ ও সাপ্লাইয়ের সময় মিটারে পরিমাপ ব্যবস্থা যুক্ত রয়েছে। ফলে সংশ্লিষ্টদের মতে পানি শোধনাগার ও রিজার্ভার থেকে সরবরাহ করা পানির পরিমাপে গরমিলের সুযোগ নেই। এসব মিটার বছরে একবার ক্যালিব্রেশন করা হয়। কিন্তু বিতরণ ব্যবস্থায় প্রচুর পানি ওয়াসার হিসাবে বিলের আওতায় আসছে না। টাকার অঙ্কে ক্ষতি ব্যাপক। তবে শোধনাগারে স্থাপিত মিটারের রিডিংয়ের হিসাবে গরমিল হচ্ছে বলে অনেকেই অভিযোগ করেছেন।

চট্টগ্রাম ওয়াসা সংশ্লিষ্টরা জানান, নগরীতে পানি সরবরাহ ব্যবস্থায় নেটওয়ার্কের ব্যাপক ত্রুটি রয়েছে। বিতরণ নেটওয়ার্ক অনেক পুরোনো। প্রতি মাসে নতুন সংযোগ দেওয়া হচ্ছে। এতে দেখা যাচ্ছে বিতরণ লাইনে গেইট ভাল্বের কাছাকাছি থাকা গ্রাহকরা পানি টেনে নিচ্ছে। আর বিতরণ লাইনের শেষে থাকা গ্রাহক পানি পাচ্ছে না। ফলে সংযোগ বাড়ানো হলেও বিতরণ লাইনের সক্ষমতা বাড়ানো হয়নি। ওয়াসা কর্মকর্তারা জানান, নগরীর পানির বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়ন ও আগামী ৫০ বছরের টার্গেট নিয়ে একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে ওয়াসা কর্তৃপক্ষ। ৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয়সাপেক্ষ বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। এখন প্রকল্পের ডিপিপি প্রণয়নের কাজ চলছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে নতুন পাইপলাইন স্থাপন ও পুরোনো পাইপলাইন পরিবর্তন করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d