চট্টগ্রামস্বাস্থ্য

চিংড়িতে সিনড্রোম ভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত

চট্টগ্রাম: চিংড়ির ‘হোয়াইট স্পট সিনড্রোম’ভাইরাসের জিনোম বিন্যাসে নতুন ভ্যারিয়েন্ট সন্ধান পেয়েছেন গবেষকরা। সম্প্রতি প্রথমবারের মত এই ভাইরাস নিয়ে গবেষণায় এমন তথ্য খুঁজে পেয়েছেন তাঁরা।

গবেষকরা বলছেন, দেশের রপ্তানি আয়ের দ্বিতীয় বৃহত্তম খাত চিংড়ির ভাইরাস নিয়ে এ গবেষণার ফলে প্রতিষেধক তৈরি করা যাবে। এতে চিংড়ির উৎপাদন বাড়ার পাশাপাশি চাষীরাও অর্থিক ক্ষতি থেকে রক্ষা পাবে।

সাধারণত হোয়াইট স্পট সিনড্রোম ভাইরাসে আক্রান্ত হলে ৩-৭ দিনের মধ্যেই ওই স্থানের সব চিংড়ি মারা যায়। এ ভাইরাস মূলত চিংড়ির সাদা বৃত্তাকার দাগ সৃষ্টির জন্য দায়ী। এটি অত্যন্ত প্রাণঘাতী ও ছোঁয়াচে। এই ভাইরাসে আক্রান্ত হলে ঘেরের সব চিংড়ি এক সপ্তাহে মারা যেতে পারে। ভাইরাসটি চিংড়ির কোষে রেব সেভেন নামক যে রিসেপ্টর থাকে তার সহায়তায় কোষের ভেতর প্রবেশ করে এবং বিপাক প্রক্রিয়া ব্যবহার করে সংখ্যা বৃদ্ধি করে। যা চিংড়িকে দূর্বল করে ফেলে।

কক্সবাজার এবং সাতক্ষীরার বিভিন্ন চিংড়ির ঘের থেকে নমুনা সংগ্রহ করা গবেষণাগারে পরীক্ষা করা হয়। ২০২১ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত চলা এই গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে চিংড়ির এ ভাইরাসের ১২৮০টি নতুন মিউটেশন (জিনের ভিন্নতা) হয়েছে। এর মধ্যে দুটি স্বতন্ত্র বা নতুন ভ্যারিয়েন্ট রয়েছে৷ যার নাম দেওয়া হয়েছে- বিডি_কক্স এবং বিডি_সাত। এই ভ্যারিয়েন্টগুলো ভারত, তাইওয়ান, থাইল্যান্ডের চেয়ে ভিন্ন এবং এর জিনোমিক গঠন অনেক বেশি স্বতন্ত্র।

গবেষণায় কক্সবাজার এবং সাতক্ষীরা অঞ্চলের ভাইরাসের জিনোমে ব্যাপক পার্থক্য দেখা গেছে। ধারণা করা হচ্ছে জিনের এই ভিন্নতার কারণ দেশের আবহাওয়া, পানির বৈশিষ্ট্য, লবণাক্ততা ও ভৌগলিক অবস্থান। সাতক্ষীরার তুলনায় কক্সবাজারের চিংড়িতে এই ভাইরাসের প্রকোপ বেশি। আবার শীতকালের তুলনায় বর্ষাকালে (জুন-জুলাই) এর প্রকোপ বেশি।

সাধারণত এ হোয়াইট স্পট সিনড্রোম ভাইরাস ক্রাস্টাশিয়ান পর্বের প্রাণী গুলোকে আক্রমণ করে বলে জানিয়েছেন গবেষকরা। বিশেষ করে চিংড়ি, লবস্টার, কাঁকড়া পর্বের এসব প্রাণী বাদে অন্য কোনো পর্বের প্রাণী এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয় না। ক্রাস্টাশিয়ান পর্বের প্রাণীর কোষে আনুষঙ্গিক প্রোটিন হিসেবে রেব সেভেন নামক রিসেপ্টর থাকায় এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়।

গবেষণায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. এস এম রফিকুল ইসলাম ও অধ্যাপক ড. আদনান মান্নান এবং ইনস্টিটিউট অফ মেরিন্স সায়েন্সের অধ্যাপক ড. এস এম শরিফুজ্জামান এবং ড. শাহনেওয়াজ চৌধুরী ছাড়াও সহ প্রধান গবেষক ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ বিভাগের ড. আনোয়ার হোসেন, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. জুনায়েদ সিদ্দিকী ও আইসিডিডিআরবি’র বিজ্ঞানী এনায়েত হোসেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d