তদন্তে ঘুষের প্রমাণ, বরখাস্ত চসিক প্রকৌশলী
অবশেষে আলোর মুখ দেখেছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) দুই প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে ঘুষ লেনদেনের অভিযোগের তদন্ত প্রতিবেদন। তদন্তে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় উপ-সহকারি প্রকৌশলী গাজী জয়নাল আবেদীনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করে তদন্ত কমিটি। ঠিকাদারকে কাজ দিতে ঘুষ নেওয়ায় গত ১৮ আগস্ট এ প্রকৌশলীকে চাকরি থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়।
যদিও অভিযুক্ত আরেক নির্বাহী প্রকৌশলী (অতিরিক্ত দায়িত্ব) রিফাতুল করিম চৌধুরীর বিরুদ্ধে ঘুষের অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। তবে ‘ঘুষ’ লেনদেনের সময় উপস্থিত থেকে অপেশাদার কার্যকলাপের জন্য তাকে সতর্কীকরণ নোটিশ দেওয়া হবে বলে জানা গেছে।
চসিক সূত্রে জানা যায়, গত ১১ জুন একটি জাতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে অভিযোগ উঠে— ২০২০ সালে ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের একটি রাস্তা উন্নয়নে ৩ কোটি ২১ লাখ টাকার কাজে ৬১ লাখ টাকা ঘুষ নেন চসিকের নির্বাহী প্রকৌশলী (অতিরিক্ত দায়িত্ব) রিফাতুল করিম চৌধুরী এবং উপ-সহকারি প্রকৌশলী গাজী জয়নাল আবেদীন।
অভিযোগে বলা হয়— সংস্থাটির উপ-সহকারি প্রকৌশলী গাজী জয়নাল আবেদীন ঠিকাদার আয়নুল হাসান ওরফে হাসান মোল্লার কাছ থেকে নিজ হাতে নগদ ৪২ লাখ টাকা ঘুষ নিয়েছেন। এছাড়াও তার স্ত্রীর ব্যাংক হিসাবে ঘুষ হিসেবে জমা দেওয়া হয় আরও সাড়ে ১০ লাখ টাকা। পরবর্তীতে সেই সংবাদের প্রেক্ষিতে সংস্থাটি অভিযুক্ত দুই প্রকৌশলীকে ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) করে গত ১২ জুন তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। গঠিত তদন্ত কমিটিকে ১০ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়। কিন্তু ১০ দিনের পরিবর্তে দেড় মাস পর গত ২৯ জুলাই তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় কমিটি। প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার ১৮ দিন পর অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় অভিযুক্ত এক প্রকৌশলীকে বরখাস্ত করে চসিক। যদিও তদন্তে ঠিকাদারের কাছ থেকে নগদে ৪২ লাখ টাকা ঘুষ নেওয়ার বিষয়টি প্রমাণিত হয়নি। কিন্তু স্ত্রীর ব্যাংক হিসাবে জমা হওয়া সাড়ে ১০ লাখ টাকার প্রমাণ পায়।
এদিকে, চসিকের তদন্তে ঘুষ নেওয়ার সত্যতা মেলায় অভিযুক্ত দুই প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দুটি সুপারিশ করে তদন্ত কমিটির তিন সদস্য। ওই সুপারিশে বলা হয়— চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের উপ-সহকারি প্রকৌশলী গাজী জয়নাল আবেদীনের বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে এবং এরূপ কার্যকলাপ দ্বারা তিনি গুরুতর অসদাচরণে লিপ্ত হয়েছেন। এ জন্য তার গুরুদণ্ড পাওয়া উচিত বলে তদন্ত কমিটি অভিমত ব্যক্ত করে। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন কর্মচারি চাকরি বিধিমালা ২০১৯ এর বিধি ৪৯ এর (খ) এবং ঙ (অ) নং উপ-বিধি অনুসারে কর্তৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে। একই সঙ্গে সহকারি প্রকৌশলী রিফাতুল করিম চৌধুরীর বিরুদ্ধে ঘুষের কোন অভিযোগ প্রমাণিত না হলেও কর্পোরেশনের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা হিসেবে অন্যান্যদের মধ্যে সংঘটিত লেনদেনের স্থানে তার উপস্থিতি পেশাগত আচরণ বহির্ভূত। এরূপ অপেশাদার কার্যকলাপের জন্য তাকে সতর্ক করা যেতে পারে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘মূল অভিযোগকারী তথ্য প্রমাণ নিয়ে সামনে না আসায় যে পরিমাণ অর্থ ঘুষ হিসেবে নেওয়ার অভিযোগ পেয়েছি তা প্রমাণিত হয়নি। কিন্তু প্রাথমিকভাবে ঘুষ লেনদেনের প্রমাণ পাওয়ায় উপ-সহকারি প্রকৌশলী গাজী জয়নাল আবেদীনকে চাকরি থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। আবার নির্বাহী প্রকৌশলী রিফাতুল করিম চৌধুরীর বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। কিন্তু অপেশাদার কার্যকলাপের জন্য তাকে সতর্কীকরণ নোটিশ দেওয়া হবে।’