চট্টগ্রাম

তিনি এমডির ভাগনি জামাই!

চট্টগ্রাম ওয়াসায় নতুন ভবন নির্মাণ প্রকল্পে এখতিয়ার বহির্ভূতভাবে ঠিকারদারের অর্থ ছাড়ের সুপারিশ করার অভিযোগ উঠেছে এক প্রকৌশলীর রিরুদ্ধে। এ প্রকল্পের প্রায় চার কোটি টাকার বিলে সুপারিশ করলেও অথচ ওই প্রকৌশলী এই প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না।

শুধু তা-ই নয়, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়া এ প্রকৌশলীর চুক্তির মেয়াদ এক বছর আগে শেষ হলেও ব্যবস্থাপনা পরিচালকের আত্মীয় হওয়ায় একবছর ধরে বিভিন্ন দায়িত্ব দিয়ে রাখা হয়েছে তাকে। বিলে সুপারিশ ছাড়াও এমন আরও একাধিক অনিয়মের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে এই প্রকৌশলীর নাম।

আবু নোমান সিদ্দিকী নামের ওই প্রকৌশলী চট্টগ্রাম ওয়াসার এমডি একেএম ফজলুল্লাহ’র ভাগনি জামাই হওয়ায় এমডি নিজেই তাকে বিভিন্ন প্রকল্পের কাজে যুক্ত করে রেখেছেন বলে দাবি ওয়াসা সংশ্লিষ্টদের।

জানা গেছে, চট্টগ্রাম ওয়াসার নতুন ভবন নির্মাণকাজের বিল বাবদ ডেল্টা ইঞ্জিনিয়ার্স ও কনসোর্টিয়ামকে ৪ কোটি ৫২ লাখ ৯০ হাজার ৯৭ টাকা পরিশোধের সুপারিশ করে চলতি বছরের ৩০ জুন নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে বিলে স্বাক্ষর করেন আবু নোমান। একই বিলে স্বাক্ষর রয়েছে নির্বাহী প্রকৌশলী রেজাউল আহসান চৌধুরী এবং উপ ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী বিষ্ণু কুমার সরকারের।

চুক্তিভিত্তিক কোনো প্রকৌশলী এমন বিলে স্বাক্ষর করতে পারেন কি-না জানতে চাইলে উপ ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী বিষ্ণু কুমার সরকার বিষয়টি তাঁর নলেজে নেই বলে জানান। এসময় প্রতিবেদককে তার সঙ্গে দেখা করার অনুরোধও করেন।

আবু নোমান সিদ্দিকী কোন প্রকল্পে কাজ করেন এমন প্রশ্নেরও সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি।

একই বিলে স্বাক্ষর থাকা নির্বাহী প্রকৌশলী রেজাউল আহসান চৌধুরী বলেন, ভবন নির্মাণ প্রকল্পে আরেক সহকারী প্রকৌশলী নিয়োজিত ছিল। কিন্তু তিনি পদোন্নতি পাওয়ায় সেখানে আবু নোমান সিদ্দিকীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তাই একটি বিলে তিনি স্বাক্ষর করেছেন।

ওয়াসার নতুন ভবন নির্মাণ প্রকল্প ছাড়াও প্রতিষ্ঠানটির নাসিরাবাদ বুস্টার স্টেশনে সৌর বিদ্যুৎ স্থাপন সংক্রান্ত প্রায় ১১ কোটি টাকার প্রকল্পেরও দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সদস্য করা হয়েছে আবু নোমান সিদ্দিকীকে। প্রচার আছে, এ প্রকল্পের দরপত্র ফাঁসের সঙ্গেও জড়িয়ে আছে তার নাম। এনিয়ে দরপত্রে অংশগ্রহণ করা সিনকস অটোমেশন নামে একটি প্রতিষ্ঠান ওয়াসার এমডি বরাবর দরপত্র ফাঁসের অভিযোগও দিয়েছেন। যদিও অভিযোগ ওঠার পর প্রকল্পটির দরপত্র যাচাই বাছাই প্রক্রিয়া স্থগিত রেখেছে কর্তৃপক্ষ।

প্রকল্পটির প্রধান নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল শাকের বলেন, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ হলেও আবু নোমান সিদ্দিকী নাসিরাবাদ বুস্টার স্টেশনের দায়িত্বে আছেন। তাই দরপত্র যাচাই বাছাই প্রক্রিয়ায় তাকে রাখা হয়েছে।

দরপত্র ফাঁসের বিষয়ে তিনি বলেন, কিভাবে ফাঁস হয়েছে তা জানা সম্ভব নয়। তবে প্রকল্পটির প্রক্রিয়া আপাতত বন্ধ। যদি কেউ প্রশ্ন তোলে এবং পুনরায় টেন্ডারের সিদ্ধান্ত হয় তাহলে তা-ই করা হবে।

এখানেই শেষ নয়, অভিযোগ আছে- প্রকল্প শেষ হওয়ার পরও প্রকল্পের অধীন গাড়ি রেখে তা ব্যক্তিগতভাবে ব্যবহার করেন আবু নোমান সিদ্দিকী। যার পুরো ব্যয়ভার বহন করে চট্টগ্রাম ওয়াসা। সম্প্রতি চট্টমেট্রো ঠ ১১-০৬৩৯ নম্বরের গাড়িটি অতিরিক্ত ৪০ ঘণ্টা ব্যবহারের বিল চালক গোলাম সরওয়ারকে প্রদানের জন্য সুপারিশ করেন তিনি।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আবু নোমান সিদ্দিকী বলেন, আমি কর্ণফুলী পানি সরবরাহ প্রকল্প-২ এ ছিলাম। এখন নাসিরাবাদ বুস্টার স্টেশনে সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্বে আছি। চট্টগ্রাম ওয়াসার নতুন ভবন প্রকল্পের কাজটি নির্মাণ বিভাগ-২ এর অধীনে হচ্ছে। আমাকে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়ায় বিভিন্ন নথি-পত্রে স্বাক্ষর করেছি।

চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম বলেন, বিভিন্ন প্রকল্পের অধীন থাকা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আত্তীকরণের বিষয়ে ওয়াসার বোর্ড সভায় একটি সিদ্ধান্ত হয়। এর প্রেক্ষিতে আবু নোমন সিদ্দিকীসহ অন্যরা নিয়োজিত আছেন। আমাদের অন্যান্য প্রকল্পে লোকবল সংকট থাকায় তাদের অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সে হিসেবে বিভিন্ন কাগজপত্রেও প্রকৌশলী হিসেবে স্বাক্ষর করতে হয়।

আবু নোমান সিদ্দিকী নিজের ভাগনি জামাই হলেও প্রতিবেদক নাম বলার তাকে চেনেন না বলে জানান চট্টগ্রাম ওয়াসার এমডি একেএম ফজলুল্লাহ।

পরে এখতিয়ার না থাকলেও বিলে স্বাক্ষর করার বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রকৌশলী হিসেবে থাকলে যেকোনো প্রকল্পে দায়িত্ব পালন করতে পারে। এখানে দোষের কিছু নেই। দায়িত্ব দেওয়া হলে বিভিন্ন বিল ভাউচারে স্বাক্ষর থাকতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d