তিন জাহাজে ১৩ শ ফিরলেও সেন্টমার্টিনে আটকা ২ শতাধিক পর্যটক
আজ সোমবার সন্ধ্যায় তিনটি জাহাজে করে এক হাজার তিন শ পর্যটক ফিরলেও স্বেচ্ছায় সেন্টমার্টিনে থেকে গেছেন দুই শতাধিক পর্যটক। তারা প্রশাসনের নির্দেশনা অগ্রাহ্য করে ইচ্ছাকৃতভাবে দ্বীপে রয়ে গেছে।
টেকনাফের সেন্টমার্টিন বেড়াতে যাওয়া পর্যটকদের দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে সোমবার (২৩ অক্টোবর) বিকেলের মধ্যে ফিরে আসার নির্দেশনা দিয়েছিল উপজেলা প্রশাসন। এই নির্দেশনার কথা জানিয়ে দ্বীপে মাইকিংও করা হয়েছে। পাশাপাশি মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) থেকে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌরুটে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নৌযান চলাচল বন্ধ থাকবে। পশ্চিম-মধ্যবঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপটি সামান্য উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছে। এর প্রভাবে সমুদ্রবন্দর গুলোতে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী বলেন, আবহাওয়া অধিদপ্তরের ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত থাকায় মঙ্গলবার থেকে সেন্টমার্টিনগামী জাহাজ, স্পিড বোট, কাঠের বোট বা যে কোনো জলযান চলাচল পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ করা হয়েছে। সেন্টমার্টিনে অবস্থানরত সব পর্যটকদের দ্বীপ ত্যাগ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে সেন্টমার্টিনে মাইকিং করে দ্বীপের সবাইকে সতর্ক করা হয়েছে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) টেকনাফ ট্রাফিক সুপারভাইজার মো. জহির উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, টেকনাফের দমদমিয়া জেটিঘাট থেকে সোমবার সকাল সাড়ে ৯টায় কেয়ারি সিন্দাবাদে ১৮০ জন, কেয়ারি ক্রুজ অ্যান্ড ডাইনে ২৭২ জন ও এমভি বার আউলিয়া জাহাজে করে ৭২৭ জন পর্যটক সেন্টমার্টিনে ভ্রমণে গেছেন। জাহাজগুলো বেলা ১টার মধ্যে সেন্টমার্টিন জেটিতে পৌঁছায়। আগে ভ্রমণে গিয়ে রাতযাপনের জন্য ছিলেন প্রায় সাড়ে তিন শতাধিক পর্যটক। সকলকে সোমবারই সেন্টমার্টিন ত্যাগ করতে টেকনাফ উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জরুরি নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।
সেন্টমার্টিনের ইউপি চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, আবহাওয়ার সতর্ক সংকেত বৃদ্ধি পাওয়ায় টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরীর নির্দেশে ইউনিয়ন পরিষদ ও বিচ কর্মীদের সমন্বয়ে সেন্টমার্টিনে মাইকিং করার পাশাপাশি হোটেল, মোটেল ও রিসোর্টগুলোতে নির্দেশনা পৌঁছানোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বিকেল ৩টার মধ্যে তিনটি জাহাজে পর্যটকদের অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। বিকেল সাড়ে ৩টায় জাহাজ তিনটি টেকনাফের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে। গতকাল রাত থেকে বৃষ্টি হচ্ছে। আবহাওয়া এখন একধরনের গুমোট হয়ে আছে। সমুদ্র ধীরে ধীরে উত্তাল হচ্ছে।
কেয়ারি সিন্দাবাদের ব্যবস্থাপক (হিসাব) মো. শাহ আলম ও এমভি বার আউলিয়া জাহাজের টেকনাফের ব্যবস্থাপক মাহবুব আলম বলেন, তিনটি জাহাজ সেন্টমার্টিন থেকে পর্যটক নিয়ে যথাসময়ে টেকনাফ জেটিঘাটে পৌঁছেছে।
ভ্রমণে আসা পর্যটকরা বলেন, পরিবারের সদস্য নিয়ে আমরা ভ্রমণে এসেছিলাম। আগাম হোটেল বুকিং ও জাহাজের টিকিট করা ছিল। অনেকেরই রাতে থাকার কথা থাকলেও কোনো রাত না কাটিয়ে ফেরত যেতে হচ্ছে। কিন্তু হোটেলের টাকা তো আর ফেরত পাওয়া গেল না। এটা এক ধরনের পর্যটক হয়রানি।
এদিকে বৈরী আবহাওয়ার কারণে মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত সেন্টমার্টিনে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকার মাইকিং করা হলেও ইচ্ছাকৃতভাবে দুই শতাধিক পর্যটক দ্বীপে রয়ে গিয়েছেন বলে জানা গেছে।
রাতে সেন্টমার্টিনের বাসিন্দা সংবাদকর্মী নুর মোহাম্মদ মুঠোফোনে বলেন, আগে থেকে দ্বীপে সাড়ে তিন শতাধিক পর্যটক সেন্টমার্টিনে ছিলেন। সোমবার (২৩ অক্টোবর) কেয়ারি সিন্দাবাদে ১৮০ জন, কেয়ারি ক্রুজ অ্যান্ড ডাইনে ২৭২ জন ও এমভি বার আউলিয়া জাহাজে করে ৭২৭ জন পর্যটক সেন্টমার্টিন ভ্রমণে আসেন। সরকারি নির্দেশনা মেনে প্রায় সকলেই বিকালের ফিরতি জাহাজে করে দ্বীপ ছেড়ে চলে গেছেন। কিন্ত পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকার মাইকিং করা হলেও ইচ্ছাকৃতভাবে দুই শতাধিক পর্যটক দ্বীপে রয়ে গেছে। জাহাজ কবে চালু হবে এবং পর্যটকরা ফিরতে পারবেন তার কোন নিশ্চয়তা নেই।