‘দল হিসেবে খেলতে পারছে না বাংলাদেশ’
বিশ্বকাপ শুরুর আগেও বাংলাদেশ দল নিয়ে স্বপ্ন দেখেছেন অনেকেই। এবারের বিশ্বকাপে অন্তত সেমিফাইনাল খেলবে টাইগাররা। অথচ বিশ্বকাপ শুরু হতেই শুরু হয় বাংলাদেশের ছন্দপতন। একের পর একে পরাজয়ে কোণঠাসা পুরো টিম। টাইগারদের এমন অবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে ভারত-পাকিস্তানের সাবেক তারকা ক্রিকেটাররা।
বাংলাদেশের বিশ্বকাপ যাত্রা নিয়ে এই কথা বলছিলেন পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক ও কিংবদন্তি ফাস্ট বোলার ওয়াসিম আকরাম। বাংলাদেশের এই বিশ্বকাপ যাত্রাকে গড়পড়তার চেয়েও খারাপ বলেছেন তিনি।
পাকিস্তানের টেলিভিশন চ্যানেল এ স্পোর্টসের ‘দ্য প্যাভিলিয়ন’ অনুষ্ঠানের এক আলোচনায় ওয়াসিম আকরাম বলেন, ‘বাংলাদেশের সমর্থকদের জন্য আমার খারাপ লাগে।’
দ্য প্যাভিলিয়নের ওই আলোচনায় গ্যালারিতে একটি প্ল্যাকার্ডের কথা উঠে এসেছে, যেখানে বাংলাদেশের একজন সমর্থক লিখেছেন, ‘সবসময়ই আমাদের লক্ষ্য পরের বিশ্বকাপ।’
ওয়াসিম আকরাম বলেন, ‘দলটার ক্রিকেটারদের বয়স কম যেমন, তানজিদ তামিম, তার সঙ্গে আপনাদের থাকা উচিত। লিটন হতাশ করেছেন, শান্ত কী করেছেন আমি জানি না, তার ওপর অনেক ভরসা ছিল, তিনে খেলেছেন, চারে খেলেছেন, কিছু করতে পারলেন না।’
ওয়াসিম আকরাম মনে করেন, বাংলাদেশের ব্যাটারদের নিয়ে কাজ করতেই হবে।
সুইং অব সুলতান খ্যাত এই কিংবদন্তি মনে করেন এখনই বাংলাদেশের ব্যাটারদের নিয়ে কাজ করতেই হবে। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডকে (বিসিবি) উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘ব্যাটার খোঁজেন আপনারা, ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেটে মনোযোগ দেন।’
মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে নিয়ে পাকিস্তানের সাবেক ক্রিকেটাররা বিস্তর আলোচনা করেছেন। পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক মঈন খান বলেছেন, ‘আগের ম্যাচে শতক হাঁকানোর পরেও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে সাত নম্বরে কেন খেলানো হলো? যিনি ফর্মে থাকেন তাকে ব্যবহার করা দরকার ছিল।’
নেদারল্যান্ডসের ক্রিকেটের সঙ্গে বাংলাদেশের ক্রিকেটের তুলনা দিয়ে মঈন খান বলেন, ‘ডাচদের দেখে মনে হয়েছে দল হিসেবে খেলছে।’
‘দল হিসেবে খেলতে পারছে না বাংলাদেশ’
ক্রিকেটের জনপ্রিয় ওয়েবসাইট ক্রিকইনফোর এক আলোচনায় একই কথা বলেছেন ভারতের প্রথিতযশা টেস্ট ক্রিকেটার চেতেশ্বর পুজারা। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের ব্যাটিং নিয়ে প্রশ্ন আছে, সাকিবের অধিনায়কত্ব নিয়ে প্রশ্ন আছে এবং বাংলাদেশের খেলা দেখে মনে হয়েছে তারা একটা ইউনিট হিসেবে খেলছে না।’
পুজারার মতে, বড় টুর্নামেন্টে দল হিসেবে না খেললে আপনি কাগজে-কলমে কতোটা ভালো এটা দিয়ে বেশি ভালো করা যায় না।নেদারল্যান্ডসের দলটাকে দেখে মনে হয়েছে তাদের একটা যথাযথ পরিকল্পনা রয়েছে এবং তারা সেটা দলগতভাবেই বাস্তবায়ন করছেন।
আয়ারল্যান্ডের সাবেক ক্রিকেটার নিয়াল ও’ব্রায়ান বলেছেন, ‘ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, বরিশালে নিশ্চিতভাবেই অনেক মানুষ কষ্ট পেয়েছেন, বাংলাদেশের ক্রিকেট সমর্থকরা খুবই নিবেদিত।’
শনিবার (২৮ অক্টোবর) নিজেদের ষষ্ঠ ম্যাচে ডাচদের কাছে লজ্জার পরাজয় নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয় টাইগারদের। র্যাঙ্কিং ও শক্তিমত্তা বিবেচনায় টাইগাররা এগিয়ে থাকলেও এমন পরাজয় মানতে পারছে না বাংলাদেশের সমর্থকরা।
ঢাকা থেকে কলকাতার দূরত্ব ৩০০ কিলোমিটারের কিছুটা বেশি। বাংলাদেশ-নেদারল্যান্ডসের ম্যাচটি দেখতে অনেকেই আগে থেকে প্রস্তুতি নিয়ে কলকাতায় যান। বাংলাদেশের বাজে পারফরম্যান্স দেখে খেলা আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হওয়ার অনেক আগেই মাঠ ছেড়ে বের হয়ে যান অনেক দর্শক।
বিমর্ষ ও হতবাক এই ক্রিকেট অনুরাগীরা মুখে হাসি নিয়ে মাঠে ঢুকেছিলেন, বের হয়েছেন পরাজয়ের স্মৃতি নিয়ে। সমর্থকদের একজন বলেন, ‘মনে হচ্ছে ২০০৩ সালে ফিরে গেছি। তখন আমরা কেনিয়া, কানাডার বিপক্ষে হারতাম।’
ক্রিকইনফোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১০ হাজারের বেশি সমর্থক কলকাতায় গিয়েছেন বাংলাদেশের ম্যাচ দেখতে, তাদের মধ্যে আবার অনেকে একেবারে পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলা দেখেই ফিরবেন।
আক্ষরিক অর্থে বাংলাদেশ ২০০৭ বিশ্বকাপে আয়ারল্যান্ডের পর এই প্রথম ওয়ানডে বিশ্বকাপে আইসিসির কোনও সহযোগী দেশের বিপক্ষে হারের মুখ দেখলো।
ভারতের সাবেক ক্রিকেটার ইরফান পাঠান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখেন, ‘বাংলাদেশকে দল হিসেবে এই পরিস্থিতি সমাধান করতেই হবে। মাঠে ও মাঠের বাইরের ক্রিকেটে উন্নতি আনতে হবে কারণ দেশটার তীব্র সমর্থন আছে, তারা আরও ভালো কিছু প্রত্যাশা করে।’
জনপ্রিয় ক্রিকেট উপস্থাপক হারশা ভোগলে একটা গুরুতর প্রশ্ন তুলেছেন বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়ে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স-এ (সাবেক টুইটার) তিনি নিজের ভেরিফাইড একাউন্টে লিখেছেন, ‘কঠিন কিছু প্রশ্ন নিজেদের করা উচিৎ বাংলাদেশের।’
বাংলাদেশ সমর্থকদের উদ্দেশ্যে তিনি প্রশ্ন ছুড়েছেন, ‘সাকিব, মুশফিক, তামিমের ব্যাচের পরে খাঁটি বিশ্বমানের ক্রিকেটার কারা উঠে এসেছে আপনাদের মতে?’