চট্টগ্রাম

ধর্মঘটে নেই গণপরিবহন, আগুন ঝরা রোদে গাড়ির জন্য হাহাকার

বৃহত্তর চট্টগ্রাম গণপরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের ডাকা ধর্মঘটে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা। একদিকে তীব্র গরম অন্যদিকে গাড়ি সংকটের জন্য ক্ষোভ ঝেড়েছেন সাধারণ মানুষ।

অবশ্য পিকআপ-সিএনজি-টেম্পো ও পণ্য পরিবহন মালিক-চালক ঐক্য পরিষদ এবং বাংলাদেশ অটোরিকশা হালকা যান পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন এ ধর্মঘট প্রত্যাখ্যান করায় চলছে কিছু যানবাহন।

রোববার (২৮ এপ্রিল) সকালে নগরের বিভিন্ন স্থানে গিয়ে দেখা যায়, গণপরিবহন সংকটের কারণে টেম্পুতে হুমড়ি খেয়ে পড়ছে মানুষ।

আগুন ঝরা রোদের মধ্যে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকেও গাড়ি পাচ্ছেন না যাত্রীরা। অনেককে হেঁটে গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে। নগরের মুরাদপুর, চকবাজার, বহদ্দারহাট, কাপ্তাই রাস্তার মাথা, অক্সিজেন, নিউমার্কেট, জিইসি, অলঙ্কার মোড়, টাইগারপাসসহ বিভিন্ন স্থানে তীব্র গরমের মধ্যে গাড়ি না পেয়ে মানুষকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে।
যাত্রীরা বলছেন, গরমে মানুষের পথচলা দায়। রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। গণপরিবহন সংকটে কষ্ট বেড়েছে। সরকারের উচিত এসব সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপে যাওয়া, সাধারণ মানুষের ভোগান্তির কথা চিন্তা করা।

চট্টগ্রাম পিকআপ, সিএনজি টেম্পো ও পণ্য পরিবহন মালিক চালক ঐক্য পরিষদের সভাপতি মোহাম্মদ অলি হাওলাদার বলেন, ‘ধর্মঘট সড়কখাতে কর্মরত শ্রমিকদের স্বার্থ পরিপন্থী এবং বেআইনি। কথিত পণ্য পরিবহন পরিষদের ব্যানারে ৪ দফা দাবিতে বৃহত্তর চট্টগ্রামে ধর্মঘট আহ্বানের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। বেআইনি ধর্মঘট প্রত্যাখ্যান করছি’।

চট্টগ্রাম জেলা পরিবহন মালিক গ্রুপের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. শাহজাহান বলেন, আমাদের সঙ্গে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের বৈঠক হবে। সেখানে যদি ফলপ্রসূ আলোচনা হয় তাহলে আমরা আন্দোলন থেকে সরে আসবো। অন্যথায় আমাদের আন্দোলন ঘোষণা অনুযায়ী চলবে।

ধর্মঘটের কারণে চলছে না ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-রাঙ্গামাটি, ঢাকা-কক্সবাজার, ঢাকা-খাগড়াছড়ি, ঢাকা-বান্দরবানসহ বিভিন্ন জেলার গণপরিবহন। এছাড়াও বিভিন্ন উপজেলা ও বান্দরবান এবং কক্সবাজারমুখী যাত্রীরা কর্ণফুলী শাহ আমানত সেতুর মুখে জটলা করছেন সকাল থেকেই। ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকছেন তারা। সেখানেই দেখা হলো রহিম উল্লাহর সঙ্গে। তিনি পরিবারসহ বাঁশখালী যাবেন। কিন্তু সেতু এলাকায় এসে দেখেন, গাড়ি চলছে না।

তিনি বলেন, ‘আগে জানতাম না বাস চলবে না। এখন পরিবার নিয়ে কী করবো বুঝতে পারছি না। সিএনজি অটোরিকশায় দ্বিগুণ ভাড়া চাচ্ছে।

পটিয়া যাওয়ার জন্য সেতুর মুখে অপেক্ষারত শত শত নারী-পুরুষ। বাস না চলার সুযোগে সিএনজি অটোরিকশা ও মোটরসাইকেলের ভাড়া বেড়েছে। মোটরসাইকেলে একজন পটিয়া পর্যন্ত ২০০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। অথচ অন্য সময় নেওয়া হয় ১৫০ টাকা। সিএনজি অটোরিকশায় একই গন্তব্যে প্রতিজন ১৫০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। সাধারণ লোকজন পিকআপ, ট্রাক, সিএনজিচালিত অটিরিকশা, টমটম, ভ্যানগাড়িতে স্বল্প দূরত্বে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। একইভাবে এসব উপজেলা ও জেলা থেকে চট্টগ্রামমুখী মানুষকেও বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে।

চুয়েটের তিন শিক্ষার্থী হতাহতের ঘটনাকে কেন্দ্র করে গাড়ি পোড়ানোর প্রতিবাদসহ ৪ দফা দাবিতে বৃহত্তর চট্টগ্রামের ৫ জেলায় রোববার ভোর ৬টা থেকে ৪৮ ঘণ্টার ধর্মঘটের ডাক দেয় বৃহত্তর চট্টগ্রাম গণপরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদ।

দাবিগুলো হলো- জেলার বিভিন্ন পোস্ট ও স্টেশন থেকে লাইনম্যানসহ অনেক পরিবহন শ্রমিককে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নাম দিয়ে গ্রেপ্তার ও মিথ্যা মামলা দেওয়া বন্ধ করা, চুয়েটের তিনজন শিক্ষার্থীর দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে সড়কে যারা নৈরাজ্য সৃষ্টি করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ, কক্সবাজারে তিন মাস আগের একটি সড়ক দুর্ঘটনার জেরে সংশ্লিষ্ট পরিবহনের অন্য একটি বাস স্থানীয় একজন চেয়ারম্যান আটকে যাত্রীদের নামিয়ে দেন এবং এই কাজে একজন স্থানীয় এমপির নাম ব্যবহার করা হয়। এই অত্যাচার বন্ধ করা। অবৈধ ও অনুমোদনহীন যানবাহনের চলাচল বন্ধ করা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d