চট্টগ্রামনগরজুড়ে

নগরীতেও সকাল হতেই মেলে তরতাজা মাছ

ভোর হওয়ার আগেই নগরীর বাজারে প্রবেশ করতে থাকে মাছভর্তি ট্রাক। সকাল হতেই শুরু হয় বেচাকেনা। তখন ক্রেতা-বিক্রেতার পদভারে মুখর হয়ে উঠে পুরো বাজার। সকাল ৯টা হতেই অনেকটা শেষ হয়ে যায় বেচাবিক্রি।

নগরীর পাহাড়তলী রেলওয়ে বাজারের প্রতিদিনের চিত্র এটি। মিঠা পানির মাছ বেচাবিক্রির জন্য প্রসিদ্ধ এ বাজারে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পাইকারি বিক্রেতারা ট্রাকে করে মাছ নিয়ে আসে। বিগত কয়েক দশক ধরে মাছ বিক্রির এ কর্মযজ্ঞ চলে আসছে এ বাজারে। পাহাড়তলী রেলওয়ে বাজারে আড়ত রয়েছে ২৫টি। প্রতিদিন ছোটবড় কমপক্ষে ৫০ ট্রাক মাছ আসে এ বাজারে। তাতে বিক্রি হয় ১০০ থেকে ১৫০ মেট্রিক টন মাছ। দূর-দূরান্তের খুচরা বিক্রেতারা এখান থেকে মাছ কিনে নিয়ে যায় নিজেদের এলাকায়। পাইকারি বাজারে মাছের দামও তুলনামূলক কম। সে কারণে এসব বাজার থেকে মাছ কিনতে খুচরা বিক্রিতাদের আগ্রহ থাকে বেশি।

বাজারের ১৪ নং গদির ম্যানেজার মোহাম্মদ ফারুক বলেন, ‘চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলা, কক্সবাজার, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নোয়াখালীসহ বিভিন্ন জেলা থেকে এ বাজারে মাছ আসে। এ বাজারে মিঠা ও সামুদ্রিক দুই ধরনের মাছ আসে। তবে মিঠা পানির মাছ আসে তুলনামূলক বেশি। পাইকারি বিক্রেতারা ট্রাকে করে মাছ নিয়ে এসে আড়তদারদের কাছে বিক্রি করে। খুচরা বিক্রেতারা আড়তদারদের কাছ থেকে মাছ কিনে নিজেদের বাজারে নিয়ে বিক্রি করে।’ পাহাড়তলী রেলওয়ে বাজারের মতো মিঠা পানির মাছ বিক্রি হয় নগরীর বহদ্দারহাট বাজারেও। প্রতিদিন সকালে কয়েকটি ট্রাকে করে মিঠা পানির মাছ আসে এ বাজারে। আড়তদাররা এসব মাছ কিনে নিয়ে খুচরা বিক্রিতার নিকট বিক্রি করে। বছরের পর বছর ধরে এভাবে মিঠা পানির মাছ বিক্রি হচ্ছে বহদ্দারহাট বাজারে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মেসার্স আল মক্কা ফিশিং এর স্বত্বাধিকারী হাজি মো. ফোরক মিয়া বলেন, ‘বহদ্দারহাট বাজারে এক সময় প্রচুর মিঠা পানির মাছ আসতো। কক্সবাজার, চট্টগ্রামের সব উপজেলা, সাতক্ষীরা, খুলনা ও নাটোরসহ বিভিন্ন জেলা থেকে প্রতিদিন ট্রাকে করে প্রচুর মাছ আসে। কিন্তু বহদ্দারহাট ফ্লাইওভার ও আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভার তৈরি হওয়ার পর এ বাজারে মাছ আসা অনেকটা কমে যায়। ফ্লাইওভারে করে এখানকার মাছ চলে যাচ্ছে পাহাড়তলী রেলওয়ে বাজারে। এ কারণে এখানে আড়তের সংখ্যাও অনেকটা কমে গেছে। আগে এখানে আড়ত ছিল ৭ থেকে ৮টি। গত কয়েক বছরে কমতে কমতে এখন এসে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৩ থেকে ৪টিতে। আগে এ বাজারে কমপক্ষে ১৫ ট্রাক মাছ বিক্রি হতো। বর্তমানে বিক্রি হয় মাত্র দুই থেকে তিন ট্রাক। এখানে যে মাছ বিক্রি হয়, তা খুচরা বিক্রিতারা কিনে নিয়ে নিজেদের বাজারে বিক্রি করে থাকে।’

শুধু নগরীর পাহাড়তলী রেলওয়ে বাজার কিংবা বহদ্দারহাট মাছ বাজার নয়। নগরীর ফিরিঙ্গিবাজার নতুন ফিশারিঘাটেও প্রতিদিন মিঠা পানির টনে টনে মাছ বিক্রি হয়ে থাকে। খুলনা, যশোর, সাতক্ষীরাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে প্রতিদিন প্রচুর মাছ আসে এ বাজারে। তাছাড়া নগরীর চকবাজার, কামালবাজার, মৌলভীবাজার, ষোলশহর ২নং গেট কর্ণফুলী বাজারসহ নগরীর বেশ কিছু বাজারে মিঠা পানির জীবন্তু মাছ বিক্রি হয়। এসব মাছ কিনে স্বাদ গ্রহণ করে নগরীর মানুষ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d