পদ্মা অয়েলে ১৪ বছর ধরে টেন্ডার ছাড়াই শ্রমিক সাপ্লাইয়ে ‘পছন্দের’ প্রতিষ্ঠান
টানা ১৪ বছর ধরে বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই চট্টগ্রামের পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডে শ্রমিক সরবরাহের কাজ করছে একটি প্রতিষ্ঠান। প্রতি দুই বছর পরপর দরপত্রের মাধ্যমে ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়ার নিয়ম থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। কাজের অভিজ্ঞতার দোহাই দিয়ে প্রতিবারই বাড়ানো হচ্ছে আগের ঠিকাদারের মেয়াদ।
এর সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে পদ্মা অয়েলের জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) প্রকৌশলী মো. আব্দুস সোবহানের। মূলত এই কর্মকর্তার কারসাজিতেই চলছে এই অনিয়ম। চট্টগ্রাম প্রতিদিনের অনুসন্ধানে শ্রমিক নিয়োগের কারসাজিতে তার জড়িত থাকা একাধিক তথ্য ও অনিয়মের বেশ কিছু কাগজপত্র হাতে এসেছে।
এতে দেখা যায়, পছন্দের প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিতে তিনি অভিজ্ঞতার দোহাই দিয়ে আবারও সুপারিশ করেন। সুপারিশের তারিখেও করা হয়েছে ‘বড় জালিয়াতি’। এছাড়াও তিনি ওই সুপারিশের কোথাও লেখেননি নিয়মনীতির কথা। লেখা নেই দরপত্র আহবানের কথাও।
জানা গেছে, সম্প্রতি আবারও বর্তমান ঠিকাদারের একটি আবেদনের পরিপ্রক্ষিতে আগামী তিন মাসের শ্রমিক সরবরাহের নতুন চুক্তি বাস্তবায়নে প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) কাছে সুপারিশ করেন জেনারেল ম্যানেজার (জিএম)। এতে বিষয়টি নিয়ে পদ্মা অয়েল ঠিকাদারদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। দরপত্র আহবান ছাড়া শ্রমিক সাপ্লাই কাজের এমন অনিয়ম ঠেকাতে তারা মাঠে নামতে পারেন, এমন তথ্যও উঠে এসেছে।
এর আগে চলতি বছরের ৮ অক্টোবর দক্ষ, আধা-দক্ষ, অদক্ষ শ্রমিক সরবরাহের চলমান রাখতে আগামী ৬ মাসের নতুন মেয়াদ বাড়ানো আবেদন করেন মেসার্স মুনমুন এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মো. মনছুর আলম। এই আবেদনের পরিপ্রক্ষিতে পদ্মা অয়েলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মাসুদুর রহমানকে ওই আবেদনের কপিতে তিন মাসের মেয়াদ বৃদ্ধি নোট লিখে দেন জেনারেল ম্যানেজার মো. আব্দুস সোবহান।
জানা গেছে, চলতি বছরের ৩১ অক্টোবর বর্তমান শ্রমিক সরবরাহের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। ওই শ্রমিক সরবরাহের মধ্যে রয়েছে দক্ষ, আধা-দক্ষ, অদক্ষ শ্রমিক। বিনা দরপত্রে গত ১৪ বছর ধরে শ্রমিক সরবরাহ করে আসছে মেসার্স মুনমুন এন্টারপ্রাইজ।
এ প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী চট্টগ্রাম নগরীর পতেঙ্গা থানার কমল মহাজনহাট ৯ নম্বর গুপ্তখাল এলাকার মনছুর আলম।
মেসার্স মুনমুন এন্টারপ্রাইজ আগে থেকেই টেন্ডার ছাড়া কাজ পেয়ে আসলেও ২০১৪ সালের পত্রিকায় একটা দরপত্র বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। ২০১৪ সালের ৩ জানুয়ারি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে ‘কৌশলী’ দরপত্র আহ্বান করে চট্টগ্রামের সদরঘাটে অবস্থিত পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেড। বিজ্ঞপ্তিতে আট ঘণ্টা কাজের বিনিময়ে অদক্ষ শ্রমিক মজুরি বাবদ ২৫০ টাকা, আধা-দক্ষ শ্রমিকের ২৭৫ টাকা, দক্ষ শ্রমিকের ৩০০ টাকা, গ্র্যাজুয়েট প্রকৌশলী, ডিপ্লোমা প্রকৌশলী ১০৮০ টাকা ও নন টেকনিক্যাল গ্র্যাজুয়েট ১০০০ টাকা মজুরি উল্লেখ করা হয়।
এই অনিয়মের বিষয়ে জানতে পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের জিএম মো. আব্দুস সোবহানকে একাধিকবার মুঠোফোনে কল করা হলেও সাড়া মেলেনি।
জানতে চাইলে এই বিষয়ে পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের এমডি মো. মাসুদুর রহমান বলেন, ‘খুব শীঘ্রই লেবার সাপ্লাইয়ের দরপত্র দিয়ে নতুন ঠিকাদার নিয়োগ করা হবে।’
কোন মাস থেকে এটি কার্যকর করছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, ‘কাজ শুরু করে দিয়েছি। শীঘ্রই টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি দেখতে পাবেন।’