চট্টগ্রাম

পিসিটি পরিচালনার দায়িত্ব যাচ্ছে সৌদি আরবের হাতে

চট্টগ্রাম বন্দরে নির্মিত পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল (পিসিটি) পরিচালনার দায়িত্ব শিগগিরই বিদেশি প্রতিষ্ঠানের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। সৌদি আরবের বন্দর পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ‘রেড সি গেটওয়ে’ নামে প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে শিগগিরই চুক্তি সই করবে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। চুক্তির দিন থেকে ২২ বছরের জন্য এই টার্মিনাল পরিচালনার চুক্তি করবে প্রতিষ্ঠানটি।

এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, ‘পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল প্রস্তুত। শিগগিরই পরিচালক নিয়োগপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে। তবে সৌদি আরবের বন্দর পরিচালনাকারী রেড সি গেটওয়ে নামের প্রতিষ্ঠানকে পিসিটি পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। ওই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে শিগগিরই চুক্তিবদ্ধ হবো। এরপর প্রতিষ্ঠানটি এখানে বিনিয়োগ করবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘পতেঙ্গা টার্মিনাল পরিচালনার জন্য বিদেশি অনেক প্রতিষ্ঠানই আগ্রহ দেখিয়েছিল। এর মধ্যে সৌদি আরবের এ প্রতিষ্ঠানকেই আমরা উত্তম বলে মনে করেছি।’

পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল প্রকল্পের পরিচালক ও চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, ‘২০২২ সালের জুন মাসে এ টার্মিনাল নির্মাণের কাজ পুরোপুরি শেষ হয়। এখন অপারেটর নিয়োগের অপেক্ষায় আছে। অপারেটর নিয়োগের মধ্য দিয়ে এ টার্মিনালে কর্মযজ্ঞ শুরু হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বঙ্গোপসাগরের কাছাকাছি এই টার্মিনালের অবস্থান। চট্টগ্রাম বন্দরে বাকি টার্মিনাল থেকে প্রায় সাত কিলোমিটার আগে। যে কারণে আসা-যাওয়া মিলে ১৪ কিলোমিটার দূরত্ব কমবে। এতে সাশ্রয় হবে জ্বালানি ও সময়। সেই সঙ্গে পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালে সাড়ে ১০ মিটার ড্রাফটের (গভীরতা) জাহাজ ভেড়ানো যাবে। চট্টগ্রাম বন্দরের বাকি সব টার্মিনালে এ পরিমাণ ড্রাফটের জাহাজ বর্তমানে ভেড়ানো যাচ্ছে না। এতে বেশি কনটেইনার নিয়ে বড় জাহাজ ভেড়ার সুযোগ থাকায় খরচ কমবে পণ্য আমদানি-রফতানিতে।’

নতুন নির্মিত এই টার্মিনালে ৫৮৪ মিটার লম্বা জেটিতে একসঙ্গে তিনটি কনটেইনার জাহাজ ভেড়ানো যাবে। ২২০ মিটার দীর্ঘ ডলফিন (তেল খালাসের) জেটি, ৮৯ হাজার বর্গমিটার আরসিসি ইয়ার্ড, দুই হাজার ১২৮ বর্গমিটার কনটেইনার শুল্ক স্টেশন, দুই হাজার ১৫০ মিটার লম্বা ছয় মিটার উচ্চ কাস্টম বন্ডেড হাউস, দুই হাজার ৫০০ মিটার রেলওয়ে ট্রাক, ৪২০ মিটার ফ্লাইওভার, এক হাজার ২০০ বর্গমিটার মেকানিক্যাল ওয়ার্কশপ এবং পাঁচ হাজার ৫৮০ বর্গকিলোমিটার অফিস ভবন।

পতেঙ্গা টার্মিনালের মাধ্যমে বছরে জাহাজ থেকে পাঁচ লাখ আমদানি-রফতানি পণ্যবাহী কনটেইনার ওঠানো-নামানো সম্ভব হবে। এ ছাড়া ২০৪ মিটার লম্বা ডলফিন জেটিতে তেল পরিবহনকারী একটি জাহাজ ভেড়ানো যাবে। টার্মিনালের মাধ্যমে বছরে চার লাখ ৪৫ হাজার টিইইউএস কনটেইনার হ্যান্ডলিং সম্ভব হবে।

জানা গেছে, রেড সি গেটওয়ে সৌদি আরবের জেদ্দা ইসলামিক পোর্টের বৃহত্তম টার্মিনাল অপারেটর। প্রতিষ্ঠানটি টার্মিনাল পরিচালনার পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বন্দর সম্প্রসারণ ও নির্মাণ করে থাকে। জেদ্দা পোর্ট বিশ্বের শীর্ষ ১০০ বন্দরের তালিকায় ৪১তম। চট্টগ্রাম বন্দর ৬৭তম।

রেড সি গেটওয়ে প্রস্তাবে বলেছে, পিসিটি পরিচালনায় ২৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিযোগ করবে প্রতিষ্ঠানটি। যা বাংলাদেশি টাকায় দুই হাজার ৬৪০ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ১১০ টাকা হিসাবে)। নিজেদের অর্থে যন্ত্রপাতি কিনে ২২ বছরের জন্য এই টার্মিনাল পরিচালনার চুক্তি করবে প্রতিষ্ঠানটি। আর চুক্তির দিন থেকে গণনা শুরু হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d