তথ্যপ্রযুক্তি

ফ্রিল্যান্সিং শেখাতে ৩০০ কোটি চায় যুব উন্নয়ন

২৮,৮০০ তরুণকে ফ্রিল্যান্সিংয়ের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এর আগে আরেকটি প্রকল্পের আওতায় ফ্রিল্যান্সিংয়ে প্রায় ১ হাজার ৮০০ জন প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে ১ হাজার ২০০ জন ইতিমধ্যে ১২ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা আয় করতে পেরেছেন।

আগামী দুই বছরের মধ্যে দেশের ৪৮টি জেলায় ২৮ হাজার ৮০০ জন যুবককে ফ্রিল্যান্সিংয়ের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য ৩০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের অনুমোদন চাইছে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর। এ উদ্যোগের লক্ষ্য তরুণদের ফ্রিল্যান্সিংয়ের দক্ষতা বাড়িয়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং বৈদেশিক মুদ্রা আয় বাড়ানো।

প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় উপস্থাপন করা হবে বলে পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে।

যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের প্রকল্প প্রস্তাব অনুযায়ী, এর আগে ২০২২ সালে প্রথম পর্যায়ে অন্য একটি প্রকল্পের আওতায় ১৬ জেলায় ৬ হাজার ৪০০ জন যুবকের ফ্রিল্যান্সিংয়ের প্রশিক্ষণ দেওয়ার লক্ষ্যে ৪৭.৫০ কোটি টাকার প্রকল্পে নেওয়া হয়েছিল। ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত চলমান এই প্রকল্পের আওতায় ইতিমধ্যে প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর ৬৪ শতাংশ ব্যক্তি উপার্জনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছেন। এছাড়া ২১ শতাংশ ব্যক্তি বিভিন্ন খাতে চাকরি করছেন।

প্রকল্পের ডাটাবেজ থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের অক্টোবর পর্যন্ত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত যুবকেরা প্রায় ৪.০৭ লাখ ডলার আয় করেছেন।

প্রশিক্ষণের মূল ফোকাস ফ্রিল্যান্সিংয়ের ওপরে থাকলেও প্রশিক্ষণ পাঠ্যক্রমে বাড়তি প্রয়োজনীয় দক্ষতাও অন্তর্ভুক্ত থাকে। অংশগ্রহণকারীরা প্রাথমিক ইংরেজি, কম্পিউটার অফিস অ্যাপ্লিকেশন, গ্রাফিক ডিজাইন, ভিডিও এডিটিং, ডিজিটাল মার্কেটিং, স্মার্টফোনভিত্তিক ফ্রিল্যান্সিং ও সফট স্কিল ডেভেলপমেন্টে প্রশিক্ষণ পাবেন।

এই বিস্তৃত পদ্ধতির মাধ্যমে তরুণরা ডিজিটাল অর্থনীতিতে উন্নতির জন্য প্রস্তুত হয়ে উঠবেন।

পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক-অবকাঠামো-বিভাগের সদস্য আবদুল বাকী বৈদেশিক মুদ্রার আয় বৃদ্ধি এবং ডলার সংকট মোকাবিলায় এ প্রকল্পের সম্ভাবনার ওপর গুরুত্ব দেন।

তিনি বলেন, ফ্রি ল্যান্সার তৈরি করা গেলে বৈদেশিক আয় আরও বাড়বে। এ কারণে এ ধরণের প্রশিক্ষণকে সরকার গুরুত্ব দিচ্ছে।

এদিকে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. গাজী মো. সাইফুজ্জামান বলেন, ‘প্রথম পর্যায়ে ১৬ জেলায় যে প্রশিক্ষণ আয়োজন করা হয়, তার সফলতার হার খুবই ভালো। প্রথম পর্যায়ে ৬ হাজার ৪০০ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার লক্ষ্য রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ১ হাজার ৮০০ জনের প্রশিক্ষণ শেষ হয়েছে—এদের মধ্যে ১ হাজার ২০০ জন ইতিমধ্যে ১২ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা আয় করতে পেরেছেন। এ ধরনের প্রশিক্ষণ যদি সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়া যায়, তাহলে আমাদের অর্থনীতিতে ডলার সংকট মোকাবিলা করা সম্ভব হবে। এ কারণে সারা দেশে এ প্রশিক্ষণ কার্যক্রম সম্প্রসারণে নতুন প্রকল্পের প্রস্তাব করা হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, আমাদের মোট জনগোষ্ঠীর এক-তৃতীয়াংশ হলো যুব (১৮-৩৫ বছর) বা ৫.৩০ কোটি। এর মধ্যে প্রায় পৌন দুই কোটি হলো ‘নট ইন এডুকেশন, এমপ্লয়মেন্ট, অর ট্রেনিং’ (ইয়ুথ নিট)। এই যুব জনগোষ্ঠীই এ প্রকল্পে টার্গেট। এর মধ্যে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করা যেকোনো যুব এই প্রশিক্ষণের সুযোগ নিতে পারবেন।

ড. সাইফুজ্জামান জানান, আইসিটি বিভাগেরও একই ধরনের প্রকল্প রয়েছে, তবে তাদের চেয়ে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের জনপ্রতি প্রশিক্ষণ খরচ কম।

বাংলাদেশের যুবদের দক্ষতা বিকাশে ঘাটতি রয়েছে

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০২২ স্যাম্পল ভাইটাল রেজিস্ট্রেশন সিস্টেম রিপোর্টে বাংলাদেশি তরুণদের মধ্যে দক্ষতার উল্লেখযোগ্য ঘাটতি উঠে এসেছে।

রিপোর্টে ৪০.৬৭ শতাংশের বেশি তরুণকে (১৮-৩৫ বছর) ‘নিট’ হিসাবে শ্রেণিভুক্ত করা হয়েছে। অর্থাৎ এই তরুণরা আনুষ্ঠানিক দক্ষতা বিকাশের সুযোগ পাচ্ছেন না। প্রতিবেদনে তরুণদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য লিঙ্গ বৈষম্যও উঠে এসেছে। নিট হিসেবে শ্রেণিভুক্ত করা নারীর অনুপাত ৬১.৭১ শতাংশ, যা পুরুষদের তুলনায় প্রায় তিনগুণ বেশি (১৮.৫৯ শতাংশ)। এই বৈষম্য গ্রামীণ ও শহরাঞ্চল এবং সমস্ত প্রশাসনিক বিভাগজুড়ে বিদ্যমান।

সিলেট বিভাগে নিটের হার সর্বোচ্চ (৪৩.৯৭ শতাংশ), আর বরিশাল বিভাগে সবচেয়ে কম (৩৮.৩২ শতাংশ)। আঞ্চলিক বৈষম্য মোকাবিলায় নির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে উদ্যোগ গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে প্রতিবেদনে।

বিবিএসের সর্বশেষ শ্রমশক্তি জরিপ অনুযায়ী, ২০২২ সালের ডিসেম্বর প্রান্তিক শেষে দেশে বেকারের সংখ্যা ছিল ২৩ লাখ ১০ হাজার, যা আগের বছরের চেয়ে ৪০ হাজার বেশি।

যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে, বর্তমান প্রযুক্তির যুগে অন্যতম ক্ষেত্র হলো তথ্যপ্রযুক্তি (আইটি)। আইটি খাতে দক্ষ জনবল ছাড়া অফিস-আদালত, ব্যবসা-বাণিজ্য, পর্যটন, বিনোদন, যোগাযোগব্যবস্থা, ব্যাংক ও বীমা খাত এবং চিকিৎসা, গবেষণা প্রায় অচল।

উন্নত দেশগুলো তথ্যপ্রযুক্তিতে অনেক সাফল্য অর্জন করেছে উল্লেখ করে প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়, সেসব তাদের কাজ উন্নয়নশীল দেশ থেকে অর্থের বিনিময়ে সম্পাদন করে থাকে। বাংলাদেশের শিক্ষিত যুবরা এ সুযোগ গ্রহণ করে তাদের কর্মসংস্থান ও বৈদেশিক মুদ্রা আয় করতে পারেন।

এতে আরও বলা হয়েছে, বর্তমানে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে পদার্পণ করেছে। কিন্তু কোভিড মহামারির কারণে দেশে বেকারের সংখ্যা বেড়েছে। এছাড়া বিদেশ থেকে কর্মচ্যুত হয়ে দেশে ফেরা প্রবাসীদের কারণে বেকারের সংখ্যা আরও বেড়েছে।

এসব শিক্ষিত যুবদের ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা সম্ভব হলে দেশে বেকারের সংখ্যা ও দারিদ্র্য দুটোই কমবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রকল্প প্রস্তাবে। তাই শিক্ষিত যুবদের ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা এ প্রকল্পের উদ্দেশ্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d