বগুড়ায় ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন
বগুড়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কদের নাম ভাঙিয়ে একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে দই ও মিষ্টি নেওয়াকে কেন্দ্র করে সংবাদ সম্মেলন করেছে শিক্ষার্থীদের দুই পক্ষ। তারা একে অপরকে ‘ভুয়া সমন্বয়ক’ বলে দাবি করে।
রোববার (১১ আগস্ট) দুপুরে বগুড়া প্রেসক্লাবে ও বিকেলে শহরের প্রাণকেন্দ্র সাতমাথায় পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নাম ভাঙিয়ে যেকোনো ধরনের অপকর্ম রোধে সাধারণ মানুষকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
এর আগে সকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক পরিচয়ে শহরের একটি প্রতিষ্ঠান থেকে কেন্দ্রীয় সমন্বয়কদের নাম ভাঙিয়ে বিনা মূল্যে দই-মিষ্টি নেওয়া–সংক্রান্ত একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে।
ভিডিওতে দেখা যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক দাবি করা দুজনকে ডেকে নিয়ে দই-মিষ্টির মূল্য পরিশোধ করতে বাধ্য করছেন কয়েকজন শিক্ষার্থী। এরপর দুপুরে ও বিকেলে দুই পক্ষ সংবাদ সম্মেলন করে।
বিকেল চারটায় সাতমাথায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আয়োজকদের পক্ষ থেকে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও বগুড়া আদালতের আইনজীবী ইজাজ আল ওয়াসী। জনগণের বিজয়কে ম্লান করতে অশুভ তৎপরতা চলছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বগুড়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের স্বঘোষিত সমন্বয়ক পরিচয়ে নানা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে চলছে চাঁদাবাজি ও প্রতারণা। কথিত এই সমন্বয়কেরা বগুড়ার এশিয়া সুইটমিটের মালিককে ফোন করে কেন্দ্রীয় সমন্বয়কদের নাম ভাঙিয়ে ৩০ সরা দই ও ১০ কেজি মিষ্টি নেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সুনাম নষ্ট করার এই তৎপরতার খবর ফাঁস হলে সাকিব খান নামের এক কথিত সমন্বয়ককে বগুড়ার শিক্ষার্থীরা আটক করে গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় এশিয়া সুইটমিটে নিয়ে দই-মিষ্টির মূল্য পরিশোধ করার পর ভুল স্বীকার করলে ছেড়ে দেন।
সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়, বগুড়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কোনো বৈধ কমিটি নেই। কেউ ভুয়া সমন্বয়ক পরিচয়ে চাঁদাবাজি করলে তাঁকে সেনাবাহিনীর টহল দলের কাছে সোপর্দ করার পরামর্শ দেওয়া হয়।
এর আগে দুপুরে বগুড়া প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আরেকটি অংশ। নিজেদের জেলা সমন্বয়ক দাবি করে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাংলাদেশ ছাত্রফ্রন্ট জেলা কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক নিয়তি সরকার। লিখিত বক্তব্যে তিনি দাবি করেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক মাহিন সরকার অনুমোদিত ১৭ সদস্যবিশিষ্ট বগুড়া জেলা কমিটি আছে। কমিটিতে সাত সমন্বয়ক ও ১০ জন সহ-সমন্বয়ক। এর বাইরে বগুড়ায় কোনো কমিটি নেই। অথচ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নাম ব্যবহার করে নামধারী কতিপয় অসাধু চক্র বগুড়ার বিভিন্ন জায়গায় চাঁদাবাজি, হামলা, হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করছে। কেউ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নাম ভাঙিয়ে কোনো চাঁদা দাবি করলে সেনাবাহিনীর টহল দলকে তাৎক্ষণিক খবর দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেন নিজেকে সমন্বয়ক দাবি করা সাকিব খান। তিনি নিজেকে গাবতলী সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী দাবি করেন। এশিয়া সুইটমিট নামের প্রতিষ্ঠান থেকে বিনা মূল্যে দই-মিষ্টি নেওয়ার কথা স্বীকার করে সাকিব খান বলেন, ‘একটা ফাঁদে পড়ে ৩০ সরা দই ও ১০ কেজি মিষ্টি বিনা মূল্যে নিয়েছিলাম। গতকাল সেই টাকা পরিশোধ করেছি।’
এশিয়া সুইটমিটের ব্যবস্থাপক মো. আরিফ-উজ্জামান বলেন, অর্ন্তবর্তীকালীন সরকার গঠনের পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা সমন্বয়ক পরিচয়ে সাকিব খান নামের একজন প্রতিষ্ঠানের মালিককে ফোন দিয়ে কেন্দ্রীয় সমন্বয়কদের কাছে পাঠানোর কথা বলে ৩০ সরা দই ও ১০ কেজি মিষ্টির আবদার করেন। গত শুক্রবার বিনা মূল্যে ৩০ সরা দই ও ১০ কেজি মিষ্টি সরবরাহ করা হয়।
শনিবার সন্ধ্যায় জিলা স্কুলসহ বেশকিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ওই যুবককে সঙ্গে নিয়ে তাদের কাছে আসেন, সঙ্গে সেনাবাহিনীর টহল গাড়িও ছিল। শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে সাকিব নামের ওই যুবক দই-মিষ্টির মূল্য পরিশোধ করেন।