চট্টগ্রামরাজনীতি

বিএনপির দায়ের করা মামলার আসামি বিএনপি নেতা

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা বিএনপির সভাপতি ওয়াদুদ ভূইয়ার বাড়ি ভাংচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ৫১৬ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত ২শ-৩শ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এম এন আবছার।

মামলায় ১৫ নম্বর আসামি করা হয়েছে জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, রামগড় উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ও খাগড়াছড়ি আসনের সাবেক বিএনপি মনোনীত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী শহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া ফরহাদকে।

মামলায় খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্মলেন্দু চৌধুরী, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মংসুইপ্রু চৌধুরী অপুসহ খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামী লীগের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের আসামি করা হয়েছে।
গত ১৫ আগস্ট খাগড়াছড়ি সদর মডেল থানায় মামলা করা হলেও সম্প্রতি শহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া ফরহাদকে আসামি করার খবর জানাজানি হয়।

মামলায় অভিযোগ করা হয়, গত ২ আগস্ট ভাঙ্গা ব্রিজের কাছাকাছি আসামি খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামী লীগের নেতা ও পৌরসভার সাবেক মেয়র রফিকুল আলম, খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পৌরসভার মেয়র নির্মলেন্দু চৌধুরী, আওয়ামী লীগ নেতা পরিমল দেবনাথ ও বিএনপি নেতা শহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া ফরহাদ বাদী এম এন আবছারের সামনে রফিকুল আলমের হাতে থাকা পিস্তল বের করে হত্যার হুমকি দিয়ে বলে- এলাকায় এখনও আছিস, এলাকায় থাকতে হলে ৩ লাখ টাকা চাঁদা দিতে হবে। নির্মলেন্দু চৌধুরী, পরিমল দেবনাথ ও শহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া ফরহাদ বলেন, এই মুহূর্তে ৩ লাখ টাকা চাঁদা দিতে হবে, নইলে প্রাণে মেরে ফেলবো। এসময় বাদি চিৎকার দিলে আশেপাশের লোকজন এসে এম এন আবছারকে উদ্ধার করে এবং আসামিরা পালিয়ে যায়।

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এম এন আবছার বাংলানিউজকে বলেন, জেলা নির্বাহী কমিটির সভায় ফরহাদকে বহিষ্কার করে কেন্দ্রে সুপারিশ করা হয়েছে। ফরহাদ অন্যায় করেছেন, তিনি ঘটনার সময় উপস্থিত ছিলেন, তাই তাকে মামলার আসামি করা হয়েছে।

মামলার আসামি শহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া ফরহাদ বাংলানিউজকে বলেন, আমি খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খাগড়াছড়ি আসন থেকে বিএনপি মনোনীত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী ছিলাম এবং ২০১৪ সালে বিএনপির মনোনীত উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হই। আওয়ামী লীগের লোকদের দ্বারা আমি ১৭ বছর নির্যাতনের শিকার হয়েছি। অথচ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে বাড়ি ভাংচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের মামলায় আমাকেও আসামি করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, যে ঘটনার কথা বলে মামলা করা হয়েছে, সেদিন আমি চট্টগ্রামে অবস্থান করছিলাম। যা তদন্ত কর্মকর্তা লোকেশন ট্র্যাক করলেই পেয়ে যাবেন। আমি বিএনপির রাজনীতি করি, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও মহাসচিবসহ সিনিয়র নেতৃবৃন্দের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। আমি জেলা কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে আছি। আমাকে জেলা কমিটি থেকে অব্যাহতি দেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে সুপারিশ করেছে। কিন্তু কেন্দ্র থেকে কোনো সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়নি।

কেন্দ্রীয় বিএনপি ও খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির নেতারা জানিয়েছেন, জেলা বিএনপির কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া ফরহাদকে অব্যাহতি দেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে পাঠানো হয়েছিল। এ ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

বিএনপির দায়ের করা নাশকতার মামলার আসামি বিএনপি নেতা- এ বিষয়ে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি বাংলানিউজকে বলেন, কেউ হয়তো শত্রুতার বশবর্তী হয়ে বিএনপি নেতাদের মামলার আসামি করছে। আমরা পার্টির সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত জানাবো।

কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু বাংলানিউজকে বলেন, জেলা কমিটি থেকে জেলার পদধারী নেতাদের বহিস্কার করতে পারে না। কেন্দ্রের কাছে সুপারিশ করতে পারে। খাগড়াছড়িতে বিএনপি নেতার মামলায় আরেক বিএনপি নেতাকে আসামি করার তথ্য পেয়েছি। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও মহাসচিব বরাবরে ভুক্তভোগী দরখাস্ত দিতে পারেন।

খাগড়াছড়ি সদর মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. ফখরুল ইসলাম বলেন, ওয়াদুদ ভূইয়ার বাড়িতে হামলা এবং ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। তদন্তসাপেক্ষে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d