বিশ্ব পরিস্থিতি: আওয়ামী লীগের জন্য স্বস্তি
বিশ্ব পরিস্থিতি: রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে আওয়ামী লীগ বিপর্যস্ত হয়েছিল, কোণঠাসা হয়ে পড়েছিল। মূলত আজকের পরিস্থিতিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পরই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ সরকারের ওপর অনেকটা নাখোশ হয়ে যায়। আওয়ামী লীগ সরকার যেহেতু রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক অটুট রেখেছিল এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পছন্দ করেনি। তাছাড়া এই যুদ্ধের পরে বাংলাদেশ সরকারের মধ্যবর্তী পন্থাও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পছন্দ করেনি।
কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন এখন যে বাংলাদেশের ব্যাপারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অতি মনোযোগ তার একটি প্রধান কারণ রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। কারণ এই যুদ্ধ বিশ্বকে যে বিভক্ত করেছে সেই বিভক্ত বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান অনেকটাই রাশিয়ার প্রতি সহানুভূতিশীল। যা পশ্চিমাদের জন্য উদ্বেগের কারণ। আর এই কারণেই গণতন্ত্র, মানবাধিকার ইত্যাদি ইস্যু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সামনে এনেছে। তবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর এখন হামাসের সঙ্গে ইসরায়েলের যুদ্ধ পরিস্থিতির নাটকীয় পরিবর্তন করেছে। বিশ্ব পরিস্থিতিতে এখন আওয়ামী লীগের জন্য অনেকটাই স্বস্তি এসেছে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরাই শুধু নয়, বিশ্বের কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন বর্তমানে পরিবর্তিত পরিস্থিতি আওয়ামী লীগের জন্য অনেক সহায়ক হয়েছে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশ নীতিতে পরিবর্তন আসার সুযোগ তৈরি হয়েছে। কারণ রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পুরো বিশ্বকে পাশে পেয়েছিল এবং যে কটি দেশ রাশিয়ার প্রতি সহানুভূতিশীল ছিল সেই মুষ্টিমেয় দেশগুলোর তালিকায় বাংলাদেশ ছিল। এটি বাংলাদেশের জন্য একটি দুরূহ কঠিন সিদ্ধান্ত ছিল। কিন্তু তারপরও এই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে বাংলাদেশকে। কিন্তু হামাস-ইসরায়েলের যুদ্ধে সম্পূর্ণ বিপরীত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। কারণ এই যুদ্ধের ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার দীর্ঘদিনের মিত্রদের হারাচ্ছে। অনেকটা কোণঠাসা অবস্থায় চলে গেছে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরায়েল। এই যুদ্ধে ক্রমশ বিশ্ব বিবেক ফিলিস্তিনি জনতার পক্ষে জানাচ্ছে। বিশেষ করে এবার নাটকীয় ভাবে মধ্যপ্রাচ্যে একটি ঐক্য তৈরি হয়েছে। এর ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মুসলিম বিশ্বে তাদের যে আধিপত্য এবং প্রভাব তা হারাতে বসেছে। এটির একটি সুফল বাংলাদেশ ভোগ করবেই। কারণ পুরো মধ্যপ্রাচ্য এখন ফিলিস্তিনদের পক্ষে। আর ফিলিস্তিনিদের পরীক্ষিত বন্ধু বাংলাদেশ। এই কারণে মধ্য প্রাচ্য বাংলাদেশের সংকটে বাংলাদেশের পাশেই থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই যুদ্ধের ফলে বাংলাদেশের ব্যাপারে নমনীয় হবে। কারণ বাংলাদেশে যেন উগ্র মৌলবাদীদের আক্রমণ না হয়, বাংলাদেশেও যেন ফিলিস্তিনের হামাসের মতো বিদ্রোহীদের প্রতি সহানুভূতি তৈরি না হয় সেই জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে একটি উদার নৈতিক গণতান্ত্রিক প্রগতিশীল রাজনৈতিক দলের প্রতি আস্থা রাখবে। তাছাড়া হামাসের এই ইসরায়েল আক্রমণ সারাদেশে জঙ্গিবাদ এবং সন্ত্রাসবাদের উত্থানের নতুন চ্যালেঞ্জ সামনে এনে দিয়েছে।
বিশ্বে দেশে দেশে যে সমস্ত উগ্র মৌলবাদী জঙ্গি সংগঠনগুলো আছে তা মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে বলে বিশ্ব নেতৃত্ব মনে করছেন। হামাস যেভাবে ইসরায়েলকে চমকে দিয়েছে তাতে পৃথিবীব্যাপী আল-কায়দার মতো জঙ্গি সংগঠন গুলো উৎসাহিত হবে। আর এ কারণেই বাংলাদেশে এমন কোনো রাজনৈতিক চাপ দেওয়া হবে না যে চাপটি এদেশে জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটাবে। আওয়ামী লীগকে চাপ দিলে কিংবা আওয়ামী লীগের পতন ঘটালে এদেশে জঙ্গিবাদ বিকশিত হবে। আর এ কারণেই অনেকে মনে করছেন যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ নিয়ে তাদের অবস্থান এবং কৌশল পাল্টাবে। তবে কেউ কেউ মনে করেন দুটি আলাদা বিষয়। বাংলাদেশের বিষয়ের সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যের ইস্যুকে গুলিয়ে ফেলা ঠিক নয়। দুটির ব্যাপারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গি আলাদা। তবে যে যাই বলুক না কেন ফিলিস্তিন-ইসরায়েল যুদ্ধের ফলে যে মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতি এবং বিশ্ব পরিস্থিতি সেই পরিস্থিতি আওয়ামী লীগের জন্য কিছুটা হলেও স্বস্তির।