মায়ের কোল থেকে নবজাতক কেড়ে নিয়ে নদীতে ফেলে দিলেন বাবা, অতঃপর…
মায়ের কোল থেকে নবজাতক কেড়ে নিয়ে নদীতে ফেলে দিলেন বাবা, অতঃপর…
পরিবারের অমতে প্রেম করে বিয়ে। ভাড়া বাসায় তিন বছরের সংসার। কোলে আসে ফুটফুটে ছেলে সন্তান। এরপর প্রেমিকের দাবি ওই সন্তান তার নয়। অতঃপর ডিএনএ পরীক্ষার কথা বলে মায়ের কোল থেকে কেড়ে নিয়ে ৫ দিনের নবজাতককে তিস্তায় ছুড়ে ফেললেন বাবা। পরে অনেক খুঁজেও পাওয়া যায়নি নবজাতকের মরদেহ। থানায় মামলার পর ঘাতক বাবাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, জেলার ভুরুঙ্গামারী উপজেলার আন্ধারীঝাড় ইউনিয়নের বীরবাড়াইটারী এলাকার জামাল উদ্দিনের মেয়ে ছামিরন খাতুনের সঙ্গে পাশের নাগেশ্বরী উপজেলার গোপালপুর দক্ষিণ সরকারটারী গ্রামের শামছুল হকের ছেলে লাল মিয়ার প্রেমের সম্পর্ক থেকে তিন বছর আগে বিয়ে হয়। কিন্তু তাদের বিয়ে মেনে নেয়নি লাল মিয়ার বাবা শামছুল হক। এ কারণে বিয়ের পর থেকে নাগেশ্বরী উপজেলার রায়গঞ্জের তেতুলতলা এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতেন। এ অবস্থায় গত ২২ অক্টোবর ছামিরনের একটি ছেলে সন্তান হলে নবজাতকের বাবা অন্য কেউ বলে দাবি করেন লাল মিয়া। এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে কথা কাটাকাটিও হয়।
পরে লাল মিয়া নবজাতকের ডিএনএ পরীক্ষার কথা বললে তাতে রাজী হয় তার স্ত্রী ছামিরন। গত ২৭ অক্টোবর বিকেলে নবজাতকের ডিএনএ পরীক্ষার জন্য রংপুরের উদ্দেশ্যে রওনা হন তারা। পথিমধ্যে সন্ধ্যা ৬টার দিকে কুড়িগ্রাম-রংপুর সড়কের তিস্তা সেতুর মাঝ বরাবর গিয়ে মোটরসাইকেল থামিয়ে ছেলেকে দুধ খাওয়াতে বলে।
এক পর্যায়ে মায়ের কোল থেকে নবজাতককে কেড়ে নিয়ে তিস্তায় ছুঁড়ে ফেলে দেয় লাল মিয়া। কোন কিছু বুঝে ওঠার আগে ছামিরনকে রেখে মোটরসাইকেল নিয়ে পালিয়ে যায় সে। মায়ের চিৎকারে আশপাশের লোকজন দৌড়ে এসে ঘটনা জানতে পেরে নদীতে নেমে খোঁজাখুঁজি করে। পরে খবর দেয়া হয় কাউনিয়া ফায়ার সার্ভিসকে। ফায়ার সার্ভিসের একটি দল ডুবরি এসে খুঁজেও নবজাতককে পায়নি।
প্রতিশোধ নিতে ফন্দি করেন নবজাতক হারানো ছামিরন। স্বামী লাল মিয়াকে ফোনে জানান, যা হবার হয়েছে আসো। এতে সায় দিয়ে রাত সাড়ে ১০টার দিকে ছারিনের কাছে আসেন লাল মিয়া। সেখান থেকে দুজনে যান ছামিরনের বড় ভাইয়ের শ্বশুরবাড়ি কচাকাটা থানা এলাকার বলদিয়া ইউনিয়নের শাহিবাজার এলাকায়।
রাতে ভাইয়ের শ্বশুর আব্দুল কুদ্দুসকে বিষয়টি জানালে তারা লালমিয়াকে আটক করে রাখে। পরদিন দুপুরে জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে কল করলে পুলিশ এসে তাদের স্বামী-স্ত্রীকে থানায় নিয়ে যায়। সেখানে জিজ্ঞাসাবাদে নবজাতককে তিস্তায় ফেলে দেয়ার কথা স্বীকার করেন লাল মিয়া। পরে লালমিয়াকে আদালতের মাধ্যমে জেলে পাঠানো হয়।
কাচাকাটা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) বিশ্বজিৎ রায় বলেন, লাল মিয়াকে আদালতে তোলা হলে সে ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করলে তাকে জেলে পাঠানো হয়। এ ঘটনায় নাগেশ্বরী থানায় লাল মিয়ার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন তার স্ত্রী ছামিরন।
নাগেশ্বরী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আশিকুর রহমান আশিক জানান, মামলা হয়েছে। আসামিও গ্রেপ্তার হয়েছে। পরবর্তী কাযক্রম চলছে।