দেশজুড়ে

মৌলভীবাজারে আড়াই লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি

টানা ভারী বর্ষণ ও ভারত থেকে নেমে আসা উজানি ঢলের কারণে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া, জুড়ী, কমলগঞ্জ, রাজনগর ও সদর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন আকস্মিক বন্যার কবলে পড়েছে। এ বন্যায় অসংখ্য ঘরবাড়ি, গ্রামীণ সড়ক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তলিয়ে গেছে।

এর ফলে প্রায় আড়াই লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। সিলেটের সঙ্গে মৌলভীবাজারের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে।

শুক্রবার (২৩ আগস্ট) মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের দুপুরের আপডেট তথ্য অনুযায়ী মৌলভীবাজারের ৪টি নদীর পানির পানি ৫টি পয়েন্টের ৩টির মাঝে কমেছে। বাকি পয়েন্টগুলোতে অপরিবর্তিত আছে।

মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য মতে, মনু নদীর রেলওয়ে ব্রিজ পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ৩ সেন্টিমিটার দিয়ে ও মনু নদীর চাদনিঘাট পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ১১৩ সেন্টিমিটার দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ধলাই নদীর রেলওয়ে ব্রিজ পয়েন্টের পানি বিপৎসীমার ১০৭ সেন্টিমিটার দিয়ে বয়ে যাচ্ছে। কুশিয়ারা নদীর শেরপুর পয়েন্টে পানি বিদৎসীমার ১১ সেন্টিমিটার দিয়ে ও জুড়ী নদীর ভবানীপুর পয়েন্টের পানি বিপৎসীমার ১৯৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

বন্যার কারণে মৌলভীবাজার-শেরপুর-সিলেট আঞ্চলিক সড়কের বালিয়াকান্দি ও শাহবন্দর এলাকাগুলো মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে। এ দুটি স্থানে সড়ক সংলগ্ন মনু নদের প্রতিরক্ষা বাঁধ চুঁইয়ে পানি বের হচ্ছে, যা যেকোনো সময় ভেঙে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ মৌলভীবাজার-শেরপুর-সিলেট সড়কে সব ধরনের যানবাহন চলাচল সাময়িক বন্ধ ঘোষণা করেছে। স্থানীয় লোকজনকে বিকল্প সড়ক ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

এদিকে মনু ও ধলাই নদীর একাধিক স্থানে প্রতিরক্ষা বাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। বুধবার (২১ আগস্ট) রাতে কমলগঞ্জ উপজেলায় ধলাই নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধ ভাঙনের ফলে নতুন করে কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। একইভাবে মনু নদীর টিলাগাঁও প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে কুলাউড়া উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রাম তলিয়ে গেছে। রাজনগর উপজেলার টেংরা, কামারচাক, মনসুরনগর ও রাজনগর সদর ইউনিয়নে ত্রাণ সংকটের খবর পাওয়া গেছে।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মোহাম্মদ ছাদু মিয়া জানান, বন্যার্তদের সহায়তায় ইতোমধ্যে ১০৫০ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ২৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ পর্যন্ত প্রায় ৫ হাজার মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে চলে গেছেন।

মৌলভীবাজার-রাজনগর-ফেঞ্চুগঞ্জ-সিলেট আঞ্চলিক সড়কের কদমহাটা এবং রাজনগর কলেজ এলাকার সড়কও বন্যার পানিতে তলিয়ে থাকায় সিলেটের সঙ্গে এ সড়কের যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।

মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক ড. উর্মি বিনতে সালাম জানিয়েছেন, মৌলভীবাজারে ৪৯টি ইউনিয়নের ১ লাখ ৯৫ হাজার ২৪৫ জন সাম্প্রতিক বন্যায় আক্রান্ত হয়েছেন। এসব বন্যাদুর্গত মানুষের মাঝে ১৫৫০ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ২০ লাখ ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d