সমঝোতার পাঁচ প্রস্তাব কূটনীতিকদের
বাংলাদেশের চলমান রাজৈনিতক সংকট এবং সহিংসতা বন্ধে কূটনীতিকদের পক্ষ থেকে পাঁচ দফা সুপারিশ তৈরি করা হয়েছে। এই সুপারিশ নিয়ে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা শুরু হয়েছে বলেও একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র চট্টলার বার্তাকে নিশ্চিত করেছে। পাঁচ দফা সুপারিশ প্রণয়নের ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা সহ পশ্চিমা দেশগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। এই পাঁচ দফা সুপারিশ গুলোর মধ্যে রয়েছে-
১. সন্ত্রাস এবং সহিংস রাজনীতিক অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে: বিএনপি যে অবরোধ বা অন্যান্য সহিংস কর্মসূচি দিচ্ছে সেই কর্মসূচিগুলো স্থগিত করতে হবে। বিশেষ করে জ্বালাও-পোড়াও, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের মতো পদক্ষেপগুলো এখনই রোহিত করতে হবে।
২. আটক নেতাকর্মীদের মুক্তি দেওয়া: এই সমস্ত সহিংস ঘটনায় বিএনপির যে সমস্ত শীর্ষ নেতাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদেরকে মুক্তি দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে এবং এই মুক্তি প্রদানের মাধ্যমে একটি রাজনৈতিক সমঝোতা এবং সংলাপের পথ উন্মুক্ত করতে হবে।
৩. সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন: দুটি রাজনৈতিক দলকেই সংবিধানের আওতায় একটি সম্মানজনক সমঝোতা পূর্ণ অবস্থানে থেকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য আহ্বান জানিয়েছে। দুই পক্ষের যে অনড় অবস্থান সেখান থেকে তারা সরে এসে যদি একটি সম্মানজনক সমঝোতার পথ খুঁজে বের যেটি খুঁজে বের করা অসম্ভব নয়। তাহলে বর্তমান রাজনৈতিক সংকটের সমাধান সম্ভব বলে কূটনীতিকরা মনে করছেন। এ কারণেই পশ্চিমা দেশগুলো সকল পক্ষকে সংবিধানের আওতায় একটা নির্বাচনের জন্য সমাধানের পথ খুঁজে বের করার আহ্বান জানিয়েছেন।
৪. অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের নিশ্চিয়তা: পশ্চিমা দেশগুলো বলছে যে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে হবে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। এই নির্বাচনে যেন সকল প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলগুলো অংশগ্রহণ করতে পারে সেজন্য তাদের জন্য উপযুক্ত সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে এবং সকল পক্ষকে সংযমের পরিচয় দিতে হবে। বিশেষ করে প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং অন্য সংশ্লিষ্ট সকলে যেন নিরপেক্ষ ভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করতে পারে। নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড থাকে এবং সকল রাজনৈতিক দলের সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। এটি নিশ্চিত করার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে আলাপ-আলোচনা অব্যাহত রাখতে হবে এবং একটি সমঝোতার জায়গায় পৌঁছাতে হবে।
৫. নির্বাচন কমিশন শক্তিশালীকরণ: নির্বাচনের দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীন নিরপেক্ষ অবস্থানে থেকে কাজ করার জন্য সুযোগ সৃষ্টি করে দিতে হবে এবং এই লক্ষ্যে প্রত্যেক রাজনৈতিক দল নির্বাচন কমিশনকে সহযোগিতা করবে। এটাই পশ্চিমা দেশগুলো প্রত্যাশা করে।
এই পাঁচ দফার ভিত্তিতে একটি রাজনৈতিক সমঝোতা সম্পন্ন হতে পারে বলে কূটনৈতিক মহল মনে করছেন। আর এই সমঝোতা হলেই কেবল একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথ উন্মুক্ত হবে। কূটনৈতিক মহল মনে বর্তমানে রাজনৈতিক দলগুলো যে চরমপন্থা গ্রহণ করছে তা বাংলাদেশের জনগণের জন্য অশুভ লক্ষণ নয়। এর ফলে গণতন্ত্র বিপন্ন হয়ে যেতে পারে। পাল্টাপাল্টি অবস্থান এবং বলপ্রয়োগ একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে রাজনৈতিক সমাধানের কোনো পথ নয় বলেও পশ্চিমা দেশের কূটনীতিকরা মনে করেন। আর এই কারণেই তারা অবিলম্বে এই পাঁচ দফার ভিত্তিতে রাজনৈতিক দলগুলোকে আলোচনার টেবিলে বসার আহ্বান জানিয়েছে। বর্তমানে যে রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিরাজ করছে এই পরিস্থিতি একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। এমনকি গণতন্ত্রকেও ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে বলে পশ্চিমা দেশের কূটনীতিকরা মনে করছেন। তবে দুটি রাজনৈতিক দল যে অনড় অবস্থানে রয়েছে সেখান থেকে তারা এই প্রস্তাব মেনে নিবে এমনটি ভাবার কোনো কারণ নেই।