জাতীয়

সরকারি চাকরিতে যেভাবে এলো কোটাব্যবস্থা

রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে হাজারো শিক্ষার্থী কোটাবিরোধী আন্দোলন কর্মসূচি পালন করছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, সরকারি চাকরিতে কীভাবে এলো এই কোটাব্যবস্থা?
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর নির্বাহী আদেশে সরকারি চাকরিতে কোটাপদ্ধতি চালু করা হয়। সংবিধানের ২৯ এর ৩(ক) উপধারায় বলা আছে, ‘নাগরিকদের যেকোনো অনগ্রসর অংশ যাহাতে প্রজাতন্ত্রের কর্মে উপযুক্ত প্রতিনিধিত্ব লাভ করিতে পারেন, সেই উদ্দেশ্যে তাহাদের অনুকূলে বিশেষ বিধান-প্রণয়ন করা হইতে রাষ্ট্রকে নিবৃত্ত করিবে না।’ আর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোটা ১০ শতাংশের বেশি হওয়া উচিত নয়।

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন। এটি একটি লিখিত দলিল। ১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর জাতীয় সংসদে এই সংবিধান গৃহীত হয়। একই বছরের ১৬ ডিসেম্বর অর্থাৎ বাংলাদেশের বিজয় দিবসের প্রথমবার্ষিকী থেকে এটি কার্যকর হয়।

সরকারি তথ্য বলছে, ১৯৭২ সালে মুক্তিযোদ্ধাদের সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে ৩০ শতাংশ কোটা সংরক্ষণ করা হয়। ওই সময় ৪০ শতাংশ জেলা কোটা, ১০ শতাংশ যুদ্ধবিধ্বস্ত নারী কোটা এবং ২০ শতাংশ মেধা কোটা ছিল। ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত ২০ শতাংশ পদ মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ করা হতো। বাকি পদ কোটায় নিয়োগ হতো। ১৯৭৬ সালে জেলা কোটা ২০ শতাংশ কমিয়ে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ ৪০ শতাংশে বাড়ানো হয়।

১৯৮৫ সালে মেধা কোটা ৪৫ শতাংশ, নারী কোটা ১০ শতাংশ, জেলা কোটা ১০ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কোটা ৫ শতাংশ এবং মুক্তিযোদ্ধার জন্য ৩০ শতাংশ কোটা নির্ধারণ করা হয়। পরবর্তী সময়ে ১৯৯৭ সালে এই কোটা ব্যবস্থাকে আরও সম্প্রসারিত করে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের এর আওতাভুক্ত করা হয়। এর মধ্যে যোগ হয় এক শতাংশ প্রতিবন্ধী কোটা।

এর আগে, ১৯৭৭ সালে তৎকালীন পে ও সার্ভিস কমিশনের একজন সদস্য বাদে সবাই সরকারি নিয়োগে কোটাব্যবস্থার বিরোধিতা করেন। পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি) সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের সরকারি চাকরিতে ২৫৮ ধরনের ৫৬ শতাংশ কোটা প্রচলিত ছিল। প্রথম শ্রেণির চাকরিতে মোট পাঁচ ক্যাটাগরিতে কোটার ব্যবস্থা ছিল। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি পদ ছিল মুক্তিযোদ্ধা কোটায়।
এগুলোর মধ্যে ৩০ শতাংশ বীর মুক্তিযোদ্ধা (পরে বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও নাতি-নাতনি) কোটা, ১০ শতাংশ নারী কোটা, ১০ শতাংশ জেলা কোটা এবং ৫ শতাংশ ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী কোটা। এ ছাড়া ১ শতাংশ পদ প্রতিবন্ধী প্রার্থীদের দিয়ে পূরণের নিয়ম চালু হয়।

ওই বছর কোটা সংস্কার করে ১০ শতাংশ করার দাবিতে শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ব্যানারে আন্দোলনে নেমেছিলেন। আন্দোলনের মুখে একপর্যায়ে সরকার প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে পুরো কোটাব্যবস্থাই বাতিল করে। ওই বছরের ৪ অক্টোবর কোটা বাতিলবিষয়ক পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

পরে ২০২১ সালে সেই পরিপত্রের মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের অংশটিকে চ্যালেঞ্জ করে কয়েকজন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান রিট করেন। ৫ জুন এই রিটের রায়ে পরিপত্রের ওই অংশ অবৈধ ঘোষণা করা হয়। এর পর থেকে আবার আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’–এর ব্যানারে ১ জুলাই থেকে টানা আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d