সুরের ঝংকারে ভক্তদের দোলালেন জেমস-রাফারা
সুরের ঝংকারে ভক্তদের দোলালেন জেমস-রাফারা
সকাল থেকেই কখনও গুড়ি গুড়ি, তো কখনও মুষলধারে বৃষ্টি। বিরতিহীন এই বৃষ্টির মধ্যেই রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কুড়িল বিশ্বরোডে সংলগ্ন ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) হাজির হয়েছিলেন কয়েক হাজার গানপ্রেমী। উদ্দেশ্য প্রিয় গায়কদের গানের তালে নিজেকে ভাসানো।
বৃহস্পতিবার (০৫ অক্টোবর) আইসিসিবির নবরাত্রি হলে আয়োজিত ‘দ্য হাইব্রিড এক্সপেরিয়েন্স-২’ কনসার্টে সুরের ঝংকার তোলেন জেমস-লিংকন-রাফাদের মতো তারকারা। আর সেই সুরে দুললেন কাকভেজা ভক্তরা।
দ্বিতীয়বারের মতো আয়োজিত ‘দ্য হাইব্রিড এক্সপেরিয়েন্স-২’ কনসার্টটি যৌথভাবে আয়োজন করেছে সিনথিয়া এবং ফুল সার্কেল ক্রিয়েটিভস।
এদিন দুপুর ২টায় জনপ্রিয় ব্যান্ড ‘ক্রাঞ্চে’রে পারফর্মের মধ্য দিয়ে কনসার্টের শুরু হয়। এরপর একে একে ভক্তদের মন মাতাতে মঞ্চে আসে ক্যালিপ্সো, শার্পনেল মেথড, বে অব বেঙ্গল, সোনার বাংলা সার্কাস, ক্রিপটিক ফেইটের মতো জনপ্রিয় ব্যান্ড দল।
রাত সোয়া ৮টায় মঞ্চে উঠে অন্যতম জনপ্রিয় ব্যান্ড ‘অ্যাভোয়েড রাফা’। ব্যান্ডটির গায়ক ও গিটারিস্ট রায়েফ আল হাসান রাফা যখন ‘আমি আকাশ পাঠাবো’র মতো জনপ্রিয় গান গাইছিলেন, তখন বিটের তালে দর্শক সারিতে ঢেউ খেলছিল। এর আগে ক্রিপটিক ফেইট পারফর্ম করার সময় তিনি তাদের ব্যান্ডে ড্রাম বাজান। প্রায় এক ঘণ্টার পরিবেশনার পর মঞ্চ থেকে নামেন রাফা।
রাত ৯টা ৪০ এর মঞ্চে আসে আরেকটি জনপ্রিয় ব্যান্ড আর্টসেল। বাইরে তুমুল বৃষ্টির মধ্যে ‘দুঃখ বিলাসে’র মতো গান যখন ব্যান্ড দলটির গায়ক লিংকন গাইছিলেন, তখন হলের ভেতরও যেন বৃষ্টি ঝরছিল। তিনটি গান পরিবেশন করেন তারা।
তবে কনসার্টের মূল আকর্ষণ তখনও বাকি ছিল। গুরুর গান শুনতে বৃষ্টি-বাদলেও এত রাত পর্যন্ত অপেক্ষায় ছিলেন জেমস ভক্তরা। তাদের সেই অপেক্ষার অবসান হয় রাত ১০টা ৪০ মিনিটে। মঞ্চে উঠেই নিজের কালজয়ী গান ‘কবিতা’ দিয়ে দর্শকদের দোলাতে শুরু করলেন তিনি। এরপর যথাক্রমে ‘দেওয়ানা-মাস্তানা’, ‘মা’, ‘গুরু ঘর বানাইলা কি দিয়া’, ‘দুষ্টু ছেলের দল’, ‘সুন্দরীতমা’, ‘পাগলা হাওয়ার তরে’সহ মোট আটটি গান পরিবেশন করেন তিনি। তার প্রতিটি গানেই ভক্তরা নিজেদের গলা মেলান। রাত সাড়ে ১১টায় আরেকটি কালজয়ী গান ‘ভিগি ভিগি’ দিয়ে কনসার্টের সমাপ্তি করেন গুরু।
শ্রোতাদের জন্য আরেকটি আকর্ষণ ছিল কিংবদন্তি গীতিকার ও সুরকার প্রিন্স মাহমুদ। কনসার্টে তাকে উত্তরীয় পরিয়ে সম্মান জানানো হয়। দেওয়া হয় সম্মাননা স্মারকও।
এসব তারকা গায়কদের দেখতে ও গানের তালে ভাসতে বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে এসেছিলেন ভক্তরাও। কয়েক হাজার দর্শকের ভিড়ে হলে কানায় কানায় ভর্তি ছিল। এমনকি ভক্তদের চাপা সামলাতে হিমশিমও খেতে হয়েছিল আয়োজকদের।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ পড়ুয়া তন্ময় কনসার্টে এসেছিলেন সহপাঠীদের নিয়ে। তিনি থাকেন বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায়। তন্ময় বলেন, সব সময়ই গান শুনি, কনসার্টে যাই। আজকের কনসার্ট তো বাসার কাছেই, তাই মিস করিনি।
একটি প্রাইভেট ফার্মে ইঞ্জিনিয়ার মিনহাজ। স্ত্রী ও বন্ধুদের নিয়ে এসেছেন ধানমন্ডি থেকে। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় প্রচুর কনসার্টে যাওয়া হয়েছে। কিন্তু এখন সেটা সম্ভব হয় না। প্রায় দুই বছর পর জেমসের কনসার্ট দেখতে চলে এলাম। জেমস একটা আবেগ। অনেকদিন পর যেন নিজের পুরনো জীবনে ফিরে গেছি। অনেক স্মৃতি মনে পড়ছে।
কনসার্টে প্রবেশের জন্য মোট চারটি ক্যাটাগরির টিকেটের ব্যবস্থা ছিল। শিক্ষার্থীদের জন্য ৩৯৯ টাকা, সাধারণ শ্রোতাদের জন্য ৬০০ টাকা, ভিআইপিদের জন্য এক হাজার ২০০ টাকা এবং অল এক্সেসের জন্য দুই হাজার ৫০০ টাকা।