অন্যান্য

সেই জাপানি মাকে বছরে দু’বার সন্তানসহ বাংলাদেশে আসতে হবে

জাপানি নাগরিক ডা. এরিকো নাকানো ও বাংলাদেশি ইমরান শরীফের দুই সন্তানের হেফাজত নিয়ে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে দুই পক্ষকে আপিলের অনুমতি দিয়েছেন আপিল বিভাগ।

বৃহস্পতিবার (০১ আগস্ট) প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

আদালতে এরিকোর পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কেসি, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আহসানুল করিম ও আইনজীবী শিশির মনির। ইমরান শরীফের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার আখতার ইমাম ও ব্যারিস্টার রাশনা ইমাম।

পরে রাশনা ইমাম জানান, হাইকোর্ট বড় মেয়ে জেসমিন মালিকাকে মায়ের হেফাজতে এবং মেজো মেয়ে লায়লা লিনাকে বাবার হেফাজতে দেন। বড় মেয়েকে মায়ের হেফাজতে দেওয়ার বিরুদ্ধে বাবা লিভ টু আপিল করেছিলেন। আর মা মেজো মেয়েকে বাবার হেফাজতে দেওয়ার বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করেছিলেন।

তিনি বলেন, আজ শুনানি শেষে দুই পক্ষকে আপিলের অনুমতি দিয়েছেন। আর অন্তবর্তীকালীন আদেশ দিয়েছেন। আদেশে বলা হয়েছে, মায়ের সাথে জাপানে থাকা মেয়েকে নিয়ে মা বছরে অন্তত দুইবার বাংলাদেশে আসবেন। প্রত্যেকবার ৫/৭ দিন থাকতে হবে। তার আসা-যাওয়া ও থাকার খরচ বহন করবেন বাবা। এ সময় প্রতিদিন সাত ঘণ্টার মতো পরিবারের সবাই একসাথে পছন্দমতো স্থানে সময় কাটাবেন। এছাড়া দুই পক্ষ অন্য কোনো দেশে মেয়েদের নিয়ে ভ্রমণে যেতে পারবেন। তবে কোথাও পালিয়ে যেতে পারবেন না। এসব আদেশ আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত।

২০০৮ সালের ১১ জুলাই জাপানি নাগরিক ডা. এরিকো নাকানো ও বাংলাদেশি আমেরিকান নাগরিক শরীফ ইমরান জাপানি আইনানুসারে বিয়ে করেন। বিয়ের পর তারা টোকিওতে বসবাস শুরু করেন। তাদের ১২ বছরের সংসারে তিনজন সন্তান জন্ম নেয়। এরপর বনিবনা না হওয়ায় দুই মেয়েকে নিয়ে দেশে চলে আসেন ইমরান শরীফ। পরবর্তীতে ২০২১ সালে বাংলাদেশে এসে রিট করেন এরিকো। তখন সুপ্রিম কোর্ট বিষয়টি পারিবারিক আদালতে নিষ্পত্তি করতে বলেন।

২০২৩ সালের ২৯ জানুয়ারি ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত সহকারী জজ ও পারিবারিক আদালতের বিচারক দুরদানা রহমান শিশুদের জিম্মা চেয়ে বাবা ইমরান শরীফের মামলা খারিজ করে রায় দেন। সেই রায়ের বিরুদ্ধে পরদিন ইমরান শরিফ আপিল করেন জেলা জজ আদালতে। একই বছরের ১২ জুলাই জজ আদালতেও ইমরান শরীফের আবেদন খারিজ করে দেন। তারপর তিনি হাইকোর্টে রিভিশন করেন। চলতি বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি সেই রিভিশন আংশিক মঞ্জুর করে রায় দেন হাইকোর্ট।

আদেশে আদালত বলেন, বড় মেয়ে জেসমিন মালিকা শরীফের হেফাজত মায়ের পক্ষে নির্ধারণ করা হবে, তবে ব্যতিক্রমী পরিস্থিতি বিবেচনা করে কন্যা লায়লা লিনা শরীফের হেফাজত প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া পর্যন্ত বাবার কাছে থাকবে।

রায়টি প্রকাশ করার পর দুই পক্ষই আপিল বিভাগে আবেদন করেন। ইমরান শরীফ বড় মেয়েকে চেয়ে এবং এরিকো মেঝ মেয়েকে চেয়ে লিভ টু আপিল করেন। তবে ইমরানের আবেদনে একটি নিষেধাজ্ঞার আবেদন ছিল। যেখানে বলা হয়েছে, মেয়েকে যেন দেশের বাইরে না নেওয়া হয়। এরপর ৯ এপ্রিল আপিল বিভাগ স্থিতাবস্থার আদেশ দেন।

ইমরান শরীফের আইনজীবী ব্যারিস্টার রাশনা ইমামের দাবি, সন্তানদের দেশের বাইরে যেতে আদালতের স্থিতাবস্থা ছিল। তা সত্ত্বেও বড় মেয়েকে নিয়ে এরিকো জাপান চলে গেছেন। এই কারণে আদালত অবমাননার আবেদন করা হয়।

তখন আইনজীবী মো. শিশির মনির জানান, ৯ এপ্রিল দুপুর ১টায় আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত স্থিতাবস্থার আদেশ দিয়েছেন। এই আদেশ হওয়ার আগেই সকাল ১১টার দিকে ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করে তারা দেশত্যাগ করেন।

শিশির মনির বলেন, হাইকোর্টের রায়ের কোথাও বলেননি যে, বাবা ও মা সন্তানদের নিয়ে দেশত্যাগ করতে পারবেন না। এরপর দুই পক্ষের লিভ টু আপিল এবং ইমরান শরীফের আদালত অবমাননার আবেদনের ওপর শুনানির জন্য ৯ মে কার্যতালিকায় ওঠে। ওই দিন আপিল বিভাগ শুনানির জন্য দিন ঠিক করে এরিকো নাকানো ও ইমরান শরীফকে উপস্থিত থাকতে নির্দেশ দেন। সে আদেশ অনুসারে ১০ জুলাই বাংলাদেশে আসেন এরিকো। তবে মেয়েকে আনেননি।

আইনজীবী শিশির মনির জানান, লিভ টু আপিল মঞ্জুর করেছেন। আর আদালত অবমাননার আবেদন অকার্যকর ঘোষণা করেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d