সেন্ট মার্টিনে কুকুরের কানকাটা কর্মসূচি
সমুদ্রসৈকতে ঘুরছে কানকাটা কুকুর। বেশিরভাগ কুকুরের একটি কানের কিছুটা অংশ কাটা। তাই এদের একটু আলাদাই দেখাচ্ছিল। কক্সবাজারের সেন্ট মার্টিন ঘুরে এমনটাই দেখা গেছে।
স্থানীয়রা জানান, দ্বীপে জন্মনিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির আওতায় এ পর্যন্ত প্রায় এক হাজার কুকুরের কান কেটে নেয়া হয়েছে। বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে এমন কার্যক্রম চলমান আছে। সেন্ট মার্টিনের বিভিন্ন জায়গায় ‘কানকাটা কুকুরগুলো বন্ধ্যাকৃত কুকুর’ লিখে সাইনবোর্ডও লাগিয়ে দিয়েছে সংগঠনটি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের ম্যানেজার (কমিউনিকেশন) মুহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘সেন্ট মার্টিন দ্বীপে কুকুর বেড়ে যাওয়ায় কুকুর বন্ধ্যাত্বকরণ কর্মসূচি নেওয়া হয়। আর বন্ধ্যাত্বকরণ কুকুর চেনার জন্যই তাদের কান কেটে দেওয়া হয়।’
সম্প্রতি সেন্ট মার্টিন ঘুরে এসে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ সরওয়ার কামাল বলেন, ‘মানুষের মত কুকুরের অনুভূতি প্রকাশের ক্ষমতা নেই। কুকুরের শরীরের একটি অংশ কেটে বন্ধ্যাত্বকরণ চিহ্নিত করার বিষয়টি নিরীহ প্রাণির প্রতি অত্যাচার। বিদ্যানন্দের মত মানবিক কাজের মোড়কে মোড়ানো একটি সংগঠন কীভাবে প্রাণির প্রতি এ অমানবিক কাজ করেছে, তা প্রশ্ন থেকেই যায়।’’
এদিকে পরিবেশবাদিদের অনেকে বলেছেন, কুকুরের কান কেটে নেয়ার বিষয়টি অমানবিক ও অনৈতিক। বন্ধ্যাত্বকরণ করতে হলেই যে, সেই কুকুরের কান কেটে নিতে হবে এই প্রক্রিয়া অনুসরণ খুবই নিন্দনীয়। কোনো প্রাণিকে জেনে-বুঝে বিকলাঙ্গ করে দেয়া আইনবহির্ভূত কাজ। কারণ আরও অনেক অসংখ্য স্থায়ী উপায় রয়েছে বন্ধ্যাত্বকরণের চিহ্ন দেয়ার।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কক্সবাজার শাখার সাধারণ সম্পাদক কলিম উল্লাহ বলেন, ‘প্রাণিদের নিজস্ব অধিকার আছে। এভাবে একটি প্রাণির কান কেটে নেয়া কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। পাশাপাশি জোর করে বন্ধ্যাত্বকরণের প্রক্রিয়াও বিধিবহির্ভূত।’
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘কুকুরের কান কেটে চিহ্ন রাখার প্রবণতাটা সব জায়গায় দেখা যাচ্ছে। কান না কেটে অন্য পদ্ধতিতে নিশ্চয় চিহ্নিত করা যায়। কুকুরের বন্ধ্যাত্বকরণ হয়েছে তাদেরকে একটা বিশেষ রংয়ের কলার পরিয়েও এই বার্তা দেয়া যায় যে, এদের বন্ধ্যাত্বকরণ হয়েছে।’
এ প্রসঙ্গে কক্সবাজার জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. সাহাব উদ্দিন বলেন, ‘বন্ধ্যাত্বকরণের চিহ্ন হিসেবে কুকুরের কান কাটা যাবে না।’ ভবিষ্যতে যাতে কোনো কুকুরের কান কাটা না হয়-সেই বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন তিনি।
এদিকে এটি ‘নিষ্ঠুরতা নয়’ জানিয়ে প্রাণি অধিকারকর্মী রাকিবুল এমিল বলেন, ‘কুকুরকে বন্ধ্যাত্বকরণের পর কান কেটে চিহ্ন দিতে হয়। আমেরিকাসহ বিশ্বের বহু দেশ ওই প্রক্রিয়া অনুসরণ করে। এটি ইন্টারন্যাশনাল সাইন। যেহেতু এনেসথেসিয়া প্রয়োগ করে কান কাটা হয় তাই কুকুর ব্যাথা পায় না। পরবর্তীতে ওষুধের মাধ্যমে ক্ষতও শুকিয়ে যায়। তাই কান কাটা একটি নিরাপদ প্রক্রিয়া। কান কাটার ফলে কুকুরের সৌন্দর্য্য নষ্ট হয় সত্য। কিন্তু বড় পরিসরে উপকারিতা চিন্তা করলে তা সমস্যা মনে হবে না।’
বন্ধ্যাত্বকরণের অন্য কোনো চিহ্ন দেয়া যায় কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কুকুরের শরীরে ট্যাগ লাগানো যায়। কিন্তু যখন কুকুর নিজেদের মধ্যে লড়াই করে তখন ওই ট্যাগ মুছে যেতে পারে। কুকুরের কানের মধ্যে সিল দেয়া যায়। তবে সেটিও স্পষ্ট দৃশ্যমান করা যাবে না। ফলে একই কুকুরকে বারবার বন্ধ্যাত্বকরণ করার ঝুঁকি থেকে যায়। এক্ষেত্রে প্রচলিত প্রক্রিয়ায় কান কেটে দেয়া হয়।’
এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ আদনান চৌধুরীর মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।