সোমবার নগরের পাঁচ পয়েন্টে নামছে ট্রাফিক পুলিশ
চট্টগ্রাম নগরে পোশাক গায়ে দিয়েই আগামীকাল সোমবার থেকে সড়কে দায়িত্ব পালন করবেন ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা। আর তাদের সাথে থেকে সমন্বয় করবেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা।
রবিবার (১১ আগস্ট) বিকেলে নগরের দামপাড়া পুলিশ লাইনসের কমিশনার কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে এক সভায় এ কথা জানান নগর পুলিশ কমিশনার মো. সাইফুল ইসলাম।
পুলিশ কমিশনার বলেন, ‘আগামীকাল (সোমবার) থেকে নগরের গুরুত্বপূর্ণ পাঁচটি পয়েন্টে আমাদের ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। তাদের সাথে প্রতিটি পয়েন্টে থাকবেন একজন করে শিক্ষার্থী প্রতিনিধি। প্রথমদিকে আগ্রাবাদ, টাইগারপাস, ওয়াসা, লালখানবাজার এবং আগ্রাবাদ এলাকায় ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে পুলিশ দায়িত্ব পালন করবে। প্রয়োজন হলে নিউমার্কেট এলাকায়ও সমন্বয় করা হবে।’
কমিশনার বলেন, ‘আমি রাস্তাঘাটে আসতে যেতে দেখছি আসলে আমাদের শিক্ষার্থীরা কি অক্লান্ত পরিশ্রম করেছে। তারা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছে। তাদের এ উদ্যোগকে অবশ্যই সাধুবাদ জানাতে হবে। তবে আমার তাদের এ কষ্ট আর সহ্য হচ্ছে না।’
শিক্ষার্থীদের ট্রাফিক বিষয়ক ট্রেনিং করানো হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আমি শিক্ষার্থীদের ট্রাফিক বিষয়ক কিছু ট্রেইনিং করাবো। আর একটি কথা, কোনোভাবেই যেন কোনো কুচক্রীমহল সুবিধা নিতে না পারে।’
পুলিশের নিরাপত্তা নিশ্চিতের বিষয় উল্লেখ করে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘কাল থেকে আমরা পোশাকে বের হবো। তখন যদি তোমরা আমাকে ধাওয়া করো তাহলে কিন্তু আমি চলে যাবো। গত পরশুও এক পুলিশ সদস্যকে মারধর করা হয়েছে। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি এসব শিক্ষার্থীদের কাজ নয়। এসব বিষয়ে খুব সাবধান হতে হবে।’
সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বিভাগীয় কমিশনার তোফায়েল ইসলাম, জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা।
বিভাগীয় কমিশনার বলেন, ‘তোমাদের তারুণ্য এবং মেধাকে আমরা সম্মান জানাই। এখন তোমাদের দাবি করার সময় না। তোমাদের দাবি তোমরা আদায় করে নিয়েছো। তাই এখন নতুন করে কোনো দাবি উত্থাপন না করে আমাদের উচিত সুন্দরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত রাষ্ট্রটিকে গঠন করা। তাই এখন প্রধান প্রায়োরিটি আইনশৃঙ্খলা।’
তিনি বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য আমরা তোমাদের নিয়ে বসেছি। তোমাদের সহযোগিতা চাই, আমরাও তোমাদের সহযোগিতা করবো। থানাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হলেও আমাদের চট্টগ্রামের যে কেপিআইগুলো আছে সেগুলো আমাদের শিক্ষার্থীরা রক্ষা করেছেন। এর জন্য আমি শিক্ষার্থীদের নিয়ে গর্ব করি। এর পুরো ক্রেডিট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোনকারীদের।’
চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, ‘পুলিশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যে কমিটি করা হবে। আর তা শিক্ষার্থীদের নিয়েই করা হবে। দ্রুত চট্টগ্রামের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে পুলিশকে কাজে ফেরাতে হবে। তাদের মধ্যে যে ভয় তা শিক্ষার্থীদের দূর করতে হবে। এর আগে আমরা শিক্ষার্থীদের সাথে দুই দফা বৈঠক কর বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রাম নগর, উত্তর জেলা ও দক্ষিণ জেলা-তিনভাগে আমাদের ম্যাজিস্ট্রেটরা দায়িত্ব পালন করবেন। আর তাদের সাথে শিক্ষার্থী প্রতিনিধিরাও সমন্বয় করবেন ইতিমধ্যে শিক্ষার্থীরা তাদের লিস্টও করে দিয়েছেন।’
কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক রাসেল আহমেদ বলেন, ‘আগ্রাবাদ, দেওয়ানহাট, টাইগারপাস, লালখান বাজার, ওয়াসা মোড়—এই গুরুত্বপূর্ণ সড়কে ট্রাফিক পুলিশ থাকবে। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিও থাকবে। প্রয়োজনে স্থান বাড়ানো হবে। প্রতিটি থানায় দল গঠন করা হচ্ছে। সেই অনুযায়ী কাজ করা হবে। পুলিশের নিরাপত্তার জন্য কাজ করবে শিক্ষার্থীরা।’
থানাভিত্তিক নাগরিক নিরাপত্তা কমিটি হবে
পুলিশ কমিশনার বলেছেন, ‘চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন এরিয়ার প্রত্যেকটি থানায় নাগরিক নিরাপত্তা কমিটি করা হবে। যাতে সংশ্লিষ্ট এলাকার গণ্যমান্যরাসহ ছাত্র প্রতিনিধিরাও থাকবে। আর এই কাজটি ছাত্ররাই করবে, তাহলে ভুল হবার সম্ভাবনা থাকবে না। আর সংশ্লিষ্ট থানা কমিটির সদস্যদের কাছে আমাদের ওই এলাকার কুইক রেসপন্স টিমের সদস্যদের নম্বর দিয়ে দেওয়া হবে। যাতে তারা সমন্বয় করতে পারে।’
শিক্ষার্থীদের থানায় থানায় যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে কমিশনার বলেন, ‘তোমাদের থানায় থানায় যেতে হবে। নাহলে কর্মরত সদস্যদের ভয় কাটবে না। আমাদের পুলিশ সদস্যদের অধিকাংশদের বয়সই তোমাদের চেয়ে বেশি। আমি তাদের সবাইকে বলেছি শিক্ষার্থীরা কোনো নাশকতা করেনি। সুতরাং তাদেরকে অভয় দিবে তোমরা।’
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (প্রশাসন ও অর্থ) আ স ম মাহতাব উদ্দিন, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম এন্ড অপারেশনস্) আবদুল মান্নান মিয়া, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মাসুদ আহাম্মদ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সাদি উর জাদিদ, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এ কে এম গোলাম মোর্শেদ খান প্রমুখ।