চট্টগ্রাম

১৬ মাস না যেতেই সাগরে বিলীন হচ্ছে ৩০০ কোটি টাকার বেড়িবাঁধ

নির্মাণের ১৬ মাস পার না হতেই সাগরে বিলীন হচ্ছে ৩০০ কোটি টাকার বেড়িবাঁধ। সাত বছর আগে চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার উপকূলে বেড়িবাঁধটি নির্মাণের কাজ শুরু হয়। গত বছরের জুনে শেষ হয় প্রকল্পের কাজ। চলতি মাসেই বাঁধের বিভিন্ন অংশ সাগরে বিলীন হয়ে গেছে। কয়েকটি অংশে দেখা দিয়েছে ভাঙন। ক্ষয়ে গেছে বেড়িবাঁধ রক্ষায় দেওয়া ব্লক। বালুর বস্তা (জিওব্যাগ) ফেলে বাঁধের ক্ষত ঢাকার চেষ্টা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। ক্রমেই পুরো বাঁধটি বিলীন হওয়ার পথে।

স্থানীয় ও বিশেষজ্ঞদের অভিযোগ, নিম্নমানের কাজ ও নকশায় ত্রুটির কারণে বাঁধটি টেকসই হয়নি। অবশ্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) দাবি, নদীর স্রোতের গতিপথ পরিবর্তন হওয়ায় বাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এদিকে, বেড়িবাঁধ নির্মাণ শুরু হওয়ার পর থিতু হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন বঙ্গোপসাগরে বারবার ভাঙনে ভিটামাটিহারা মানুষ। বছর না ঘুরতেই তাদের মধ্যে আবারও আতঙ্ক ভর করছে। ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল স্মরণকালের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস আঘাত হেনেছিল চট্টগ্রাম ও কক্সজারের উপকূলীয় অঞ্চলে। এতে প্রাণ হারায় প্রায় ১ লাখ ৩৮ হাজার লোক। ভঙ্গুর বেড়িবাঁধের কারণে এত লোকের প্রাণহানি হয়েছিল বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

কদমরসুল এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, বেড়িবাঁধ না থাকায় প্রায় সাত বছর মানুষ চাষাবাদ করতে পারেনি। লবণাক্ত পানি ঢোকার কারণে পুকুরে মাছ পর্যন্ত ছিল না। বেড়িবাঁধ নির্মাণ হওয়ায় মানুষ স্বস্তি পেয়েছিল। এখন আবার ভেঙে যাওয়ায় আতঙ্ক তৈরি হয়েছে।

নিম্নমানের ব্লক প্রকল্পের কাজ চলাকালে নিম্নমানের কাজের অভিযোগ আনেন স্থানীয় বাসিন্দারা। ২০২০ সালে বেড়িবাঁধে ব্যবহার করা ব্লকের গুনগত মান যাচাই করার উদ্যোগ নেয় পাউবো। দৈবচয়ন পদ্ধতিতে ১১ হাজার ৩৬০টি ব্লকের নমুনা নেওয়া হয়। তা পাঠানো হয় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পরীক্ষাগারে। সেখানে ৩ হাজার ৭৮৭টি ব্লক পাওয়া যায়, যা অত্যন্ত নিম্নমানের। পরে সেগুলো বাতিল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রকল্পের কাজে ব্যবহার করা অধিকাংশ ব্লক তৈরি করা হয়েছে নিম্নমানের উপকরণ দিয়ে।

চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পানিসম্পদ কৌশল বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সামিউন বাসির বলেন, ‘দুটি কারণে পাউবোর বেড়িবাঁধ টেকসই হয় না। একটি নিম্নমানের কাজ; অন্যটি নকশায় ত্রুটি। পাউবোর উচিত বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে টেকসই বাঁধ নির্মাণে কার্যকর নকশা করা ও দুর্নীতি খতিয়ে দেখে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া।’

অভিযোগ অস্বীকার করে পাউবোর দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী শিবেন্দু খাস্তগীর বলেন, ‘নিম্নমানের কাজ কিংবা নকশা ত্রুটির জন্য বাঁধ ভাঙছে না। বাঁধ ভাঙছে সাঙ্গু নদীর মোহনায় চর জেগে স্রোতের গতিপথ পরিবর্তন হওয়ার কারণে। যেখানে বাঁধ ভাঙছে সেখানে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে বাঁধের উচ্চতা ছিল চার ফুট। এখন পানির গতির কারণে বাঁধের গোড়ায় গভীর হয়ে সেটি দাঁড়িয়েছে ১৫ ফুটে। স্বাভাবিকভাবে বাঁধের গোড়া থেকে মাটি সরে যাওয়ায় বাঁধ ধসে পড়ছে। তবে যেখানে ভাঙছে, সেখানে সংস্কার ও জেগে ওঠা চর কেটে দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d