২০১৪ বা ২০১৮: কোনো পথেই যাবে না আওয়ামী লীগ
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন আর যাই হোক কোনো অবস্থাতেই ২০১৪ বা ২০১৮’র মতো হবে না। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক মহলে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন। বিএনপি আসুক না আসুক আগামী নির্বাচন হবে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ এবং অংশগ্রহণমূলক। এই নির্বাচন হবে একটি উৎসব মুখর পরিবেশে সেরকম একটি পরিকল্পনা নিয়েই আওয়ামী লীগ এগোচ্ছে।
২০১৪ সালের নির্বাচন বিএনপি বয়কট করেছিল। শুধু বয়কট-ই করেনি দেশবাসীকে নির্বাচন বর্জনের জন্য আহ্বান জানিয়ে ছিল। বিএনপির ডাকে নয় বরং বিএনপির অংশগ্রহণ না করার কারণে নির্বাচন নিয়ে সাধারণ ভোটাররা আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। নির্বাচনের শেষ প্রান্তে এসে জাতীয় পার্টি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালে নির্বাচন নিয়ে এক ধরনের জটিল অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। এই সময় অধিকাংশ নির্বাচনী এলাকায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীরাই দৃশ্যমান ছিল। অন্যান্য যে সমস্ত স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিল তাদেরকে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা নানা কারণে বসিয়ে দেয়। সে সময় আওয়ামী লীগ মনে করেছিল যে, বিএনপির আন্দোলনের কারণে আবার নতুন করে নির্বাচন হবে খুব শীঘ্রই। এ কারণে নির্বাচনে অর্থ ব্যয়ের চেয়ে আওয়ামী লীগ আগ্রহী হয়েছিল বিনা ভোটে নির্বাচিত হওয়ার জন্য। কিন্তু ওই সংসদ শেষ পর্যন্ত পাঁচ বছর স্থায়ী হয়।
২০১৮’র নির্বাচন ছিল অন্যরকম এই নির্বাচনে একদিকে যেমন বিএনপি প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় একাধিক প্রার্থী দিয়েছিল ঠিক একইভাবে প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু অতিউৎসাহী ব্যক্তি নির্বাচনকে প্রভাবিত করার জন্য বিভিন্ন রকম চেষ্টা করেছিল, বিতর্কিত করেছিল। ওই নির্বাচন যদি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হতো তাহলেও আওয়ামী লীগ বিপুল ভোটে বিজয়ী হতো।
আওয়ামীলীগ এবার দুইটির ধারার কোন ধারায় যাবে না। বরং আওয়ামী লীগ এমন একটি নির্বাচন করতে চায় যে নির্বাচনটি হবে দৃষ্টান্ত। বিএনপি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে তাহলে আওয়ামী লীগ একটি উন্মুক্ত নির্বাচন করবে। যে নির্বাচনে জাতীয় পার্টি সহ সকল অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে স্ব স্ব অবস্থান থেকে। এছাড়া আওয়ামী লীগের যারা বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন তাদেরকেও নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার জন্য সুযোগ করে দেওয়া হবে। ফলে এরকম একটি উন্মুক্ত নির্বাচনে ভোটারদের আগ্রহ সৃষ্টি হবে বলে অনেকে মনে করছেন। তাছাড়া আওয়ামী লীগ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রশাসন সকলকে স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে যে, নির্বাচন হতে হবে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ। অর্থাৎ বিএনপি অংশগ্রহণ না করলেও নির্বাচনের ব্যাপারে ভোটারদের যেন আগ্রহ তৈরি হয় এবং ভোটাররা যেন আশ্বস্ত হয় যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং প্রশাসন কারো পক্ষ বা বিপক্ষ অবলম্বন করছে না। বরং তারা নিরপেক্ষ অবস্থান থেকে ভোট পরিচালনা করছে।সেক্ষেত্রে জনগণ ভোটে উৎসাহী হবে।
আওয়ামী লীগ মনে করছে যে, এরকম একটি ভোট হলে সেই ভোটটি হবে উৎসব মুখর পরিবেশে। আওয়ামী লীগের অনেক নেতাই মনে করেন যে, বিএনপি ২০১৮ সালে নির্বাচনে এসেছিল একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে। নির্বাচনকে তারা প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য এবং বিতর্কিত করার জন্য এই কাণ্ডগুলো করেছিল। আর এই কারণেই এবার যদি বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে সেটি তাদের জন্য মন্দের ভালো হবে। এরকম পরিস্থিতিতে একটি সুষ্ঠু এবং চমৎকার নির্বাচন উপহার দেওয়াটাও সরকারের জন্য সহজ হবে। আর এই বিবেচনা থেকেই সরকার একটি অনবদ্য মডেলে নির্বাচন করার পরিকল্পনা নিচ্ছে এবং দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হবে সেরকমই একটি নির্বাচন।