অবরোধে রাজপথে নিখোঁজ ছাত্রদল!
গত মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) বিএনপির ডাকা টানা তিন দিনের অবরোধ কর্মসূচির দ্বিতীয় দিন শেষ হয়েছে বুধবার (১ নভেম্বর)। আগামীকাল বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) শেষ হচ্ছে তাদের লাগাতার অবরোধ কর্মসূচি। তবে এই অবরোধে খুব একটা দেখা যায়নি জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কার্যক্রম।
অবরোধের প্রথম দিন ২১ জন অনুসারীকে নিয়ে খিলগাঁওয়ে ৪৭ সেকেন্ডের ঝটিকা মিছিল করেছে ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাশেদ ইকবাল খান।এরপর থেকে তিনি রাজপথ থেকে অনেকটাই ‘গায়েব’।তাঁর অনুসারীরা জানান, পুলিশের কড়া উপস্থিতি থাকায় তিনি কোথাও নামতে পারছেন না। একদিনের হরতাল ও তিন দিনের অবরোধে ঢাকার রাজপথে কোথাও দেখা যায়নি ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েলকে। এমনকি তাঁর অনুসারী বিভিন্ন ইউনিটের দায়িত্বশীল নেতারাও রাজপথ থেকে অনেকটাই ‘নিখোঁজ’।
রাজপথে দেখা নেই ছাত্রদলের মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখার শীর্ষ নেতাদেরও। দক্ষিণের আহ্বায়ক বির্তকিত পাভেল শিকদার আত্মগোপনে আছেন। সদস্য সচিব নিয়াজ মাহমুদ নিলয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ রাখছেন না বলে জানা গেছে। তাদের ৫১ সদস্যের কমিটির কয়েকজন যুগ্ম আহ্বায়ক ও সদস্যকে বিএনপির অন্যান সহযোগী সংগঠনের সঙ্গে মিছিল করতে দেখা গেছে।
উত্তরের সভাপতি মেহেদী হাসান কারাগারে, সাধারণ সম্পাদক রাসেল বাবু আত্মগোপনে। তবে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ঝটিকা মিছিল করতে দেখা গেছে ছাত্রদলের পূর্বের আহ্বায়ক খালিদ হাসান জ্যাকি ও তাঁর অনুসারীদের। দেখা মেলেনি সদস্য সচিব আল-আমিনের।
পশ্চিম শাখার নেতারা দায় সেরেছেন বিএনপি নেতা আমিনুল হকের সঙ্গে ঝটিকা মিছিল করে। পশ্চিমের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ নাসিরকে ৫-৬ জনকে সঙ্গে নিয়ে মাঝে মাঝে মিছিল করতে দেখা গেছে।
তবে রাজপথে নিয়মিত দেখা গেছে ছাত্রদলের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা কলেজ শাখা, ইডেন কলেজ, কবি নজরুল, বাঙলা কলেজ, তিতুমীর কলেজ ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতাদের। তারা প্রায় প্রতিদিনই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অবরোধ সমর্থনে মিছিল করে। এছাড়া ঢাকা মেডিকেলের সামনে একদিন ১ মিনিট ৪৭ সেকেন্ডের মিছিল করে ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা।
এছাড়া ছাত্রদলের নতুন কমিটির জন্য আলোচনায় থাকা ছাত্রদল সহ-সভাপতি নাসির উদ্দিন, শ্যামল মালুম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম, আমান উল্লাহ আমানসহ কয়েকজন পদ-প্রত্যাশী নেতা রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে নিয়মিত মিছিল করেন।
শেরেবাংলা নগর থানার একজন ছাত্রদল নেতা বলেন, ‘হরতাল-অবরোধে নেতাদের আমরা ফোন করি, উনাদের কেউ কল ধরে, কেউ ধরে না। নেতারা বলেন, কীভাবে মিছিল করমু, পরিস্থিতি বুঝো না। ভাই ছাত্রদলের চাইতে এখন শ্রমিক দল বেশি শক্তিশালী ঢাকায়। ’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের একজন নেতা বলেন, ‘বির্তকিত কমিটি দেওয়ায় এবার কেউ রিস্ক নিচ্ছে না। আর জেলে গেলে কেউ খবরও নেয় না। সবার পরিবার তো আর ধনাঢ্য নয়। পদ-প্রত্যাশীরা ঝটিকা মিছিল করে, আমরা তাদের হোন্ডা প্রটোকল দিয়ে নিরাপদে স্থানে পাঠাই, এই হচ্ছে আমাদের আন্দোলন (হাসি)। ’
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের একজন সহ-সভাপতি বলেন, ‘আমাদের মহানগর এবার পুরোপুরি ফ্লপ। বিশেষ করে উত্তর-দক্ষিণ। তাদের প্রোগ্রাম করতে বাজেট দেওয়া হলেও, তারা টাকা নিয়ে ফোন বন্ধ করে রেখেছে। এসব ইউনিটের থানা কিংবা কলেজ থেকেও কোনো মিছিল হয়নি এবার। যা রীতিমতো আতঙ্ক ও উদ্বেগের। অথচ বিএনপির ভ্যানগার্ড বলায় হয় ছাত্রদলকে। কিন্তু দলের হরতাল-অবরোধের কর্মসূচিতে অনেকটাই গায়েব ছাত্রদলের দায়িত্বশীল নেতারা।