জাতীয়

আইনশৃঙ্খলা আর সংস্কারের চ্যালেঞ্জ, কীভাবে সামলাবে ইউনূস সরকার

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সরকারবিহীন নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির মধ্যে নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের যে যাত্রা শুরু হয়েছে, তার সামনে আছে বন্ধুর পথ। প্রত্যাশার চাপ আর কঠিন বাস্তবতার মধ্যে মেলবন্ধন কীভাবে হবে, সেই প্রশ্নও আছে।

দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, ব্যবসা বাণিজ্য ও উৎপাদন ভেঙে পড়া, এখানে সেখানে হামলা, রাতে ডাকাত আতঙ্ক, পুলিশ উধাও হয়ে যাওয়ার মধ্যে শপথ নেওয়া ১৪ জনের দপ্তর বণ্টনের পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরাতে চাইছে উপদেষ্টা পরিষদ।

উদ্বেগজনক পরিস্থিতিতে কিছুটা হলেও স্বস্তির খবর হল, পুলিশ সদস্যরা ধীরে ধীরে হলেও কাজে ফিরতে শুরু করেছেন। কোথাও সেনাবাহিনীর পাহারায়, কোথায় বিজিবির পাহারায় থানার কার্যক্রম সীমিত পরিসরে চালু হচ্ছে।

নতুন পুলিশ প্রধান তার বাহিনীর সদস্যদের মনোবল ফেরানোর চেষ্টা করছেন। পাশাপাশি পুলিশি ব্যবস্থা পুনর্গঠনেও কাজ শুরু হয়েছে।

ভেঙে পড়া আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে স্বাভাবিক করার গুরুদায়িত্ব পাওয়ার পর সাবেক নির্বাচন কমিশনার ও অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, অন্তবর্তী সরকার প্রথমত দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নতির চেষ্টা করবে।

দ্বিতীয়ত, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলোর মধ্যে আত্মবিশ্বাস ফেরানো, যেটি চরমভাবে কমে গেছে বলে আমি মনে করি।

তুমুল আন্দোলনের মধ্যে গত ৫ অগাস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে শেখ হাসিনার দেশ ছাড়ার দিনই দেশের বিভিন্ন থানায় হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। পুলিশ সদস্যদের অনেকে হতাহত হন। সরকারি বিভিন্ন স্থাপনা, আওয়ামী লীগ অফিস, দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও হিন্দুদের বাড়িঘর ও মন্দিরে ভাঙচুর ও বেশুমার অগ্নিসংযোগের খবর আসছে।

সড়কে ট্রাফিক পুলিশ না থাকায় ভেঙে পড়ে ট্রাফিক ব্যবস্থা। এ পরিস্থিতিতে পুলিশ সদস্যরা কাজে না থাকায় শিক্ষার্থী, বিভিন্ন সংগঠন ও রাজনৈতিক দলের কর্মীদের সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর ও মন্দির পাহারা দেওয়ার ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এসেছে।

এই সাময়িক ব্যবস্থায় রাষ্ট্র পরিচালনা করা কতটা সম্ভব, সেই প্রশ্নও আছে। তাছাড়া শিক্ষাঙ্গন খুললে তাদেরকে ক্লাসে ফিরতে হবে, তখন কী হবে, সেই বিষয়টিও আছে।

অর্থ ও পরিকল্পনা উপদেষ্টার দায়িত্ব পাওয়া বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদও বলেছেন, তাদের সরকার দেশে শান্তি শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার ওপর অগ্রাধিকার দিচ্ছে। নানা চ্যালেঞ্জ থাকলেও অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করাকে নিজের জন্য বড় কাজ হিসেবে দেখছেন তিনি।

শুক্রবার (৯ আগস্ট) কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর তিনি বলেন, ব্যবসা মন্থর হয়ে গেছে, মানুষের জীবিকায় যে প্রভাব পড়েছে সেটাকে তাড়াতাড়ি টেনে তুলতে হবে।

উপদেষ্টা পরিষদের প্রথম বৈঠক শেষে পরিবেশ ও বন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান সাংবাদিকদেরকে বলেন, যত দ্রুত সম্ভব যেন পুলিশ নেমে যায় এবং আমরা সকলেই জন্য তাদের সহযোগিতা করি।

কারণ, পুলিশের মত একটা বাহিনীর যদি মনোবল ভেঙে যায়, তখন তারা অনিরাপদ বোধ করবেন। সেজন্য আমাদের শিক্ষার্থী প্রতিনিধি ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা তাদের সঙ্গে কথা বলবেন।

যে প্রশ্নের জবাব মেলেনি : এই সরকারের মেয়াদ কত দিন হবে, সেই বিষয়টি খোলাসা করা হয়নি দ্বিতীয় দিনেও।

তবে সংবিধানের বিধান অনুযায়ী ৯০ দিনের মধ্যে ভোট যে হচ্ছে না, সে ইঙ্গিত মিলছে। কারণ, উপদেষ্টারা ‘রাষ্ট্র কাঠামো সংস্কারের’ কথা বলছেন।

প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস উপদেষ্টাদের মধ্যে দপ্তর বণ্টন করেছেন; নিজের হাতে ২৭টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ রেখেছেন তিনি।

এর মানে হল, সামনে আরো নতুন উপদেষ্টাকে তিনি তার উপদেষ্টা পরিষদে যুক্ত করে নিতে পারেন। আর শপথ নেওয়া হয়নি যে তিন উপদেষ্টার, তাদের কাঁধেও যাবে কিছু মন্ত্রণালয়-বিভাগের দায়িত্ব।

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর নৈরাজ্যের মধ্যে বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পান নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সংবিধান অনুযায়ী সংসদ ভেঙে দেওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও এই সরকারের মেয়াদ কত দিনের, তা জানানো হয়নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d