জাতীয়রাজনীতি

আওয়ামী লীগের ইশতেহারে যেসব বিষয় অগ্রাধিকার পাবে

স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনকে মূল ভিত্তি ধরে কৃষি, শিল্প ও সেবা খাতকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে আগামী নির্বাচনের ইশতেহার তৈরি করছে আওয়ামী লীগ।

চলমান অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে ওঠার পাশাপাশি সুশাসন প্রতিষ্ঠার বিষয়টি এ ইশতেহারে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।

এই বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দিয়ে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ইশতেহার তৈরির কাজ চলছে বলে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। ইতোমধ্যে দলের ইশতেহার প্রণয়ন উপ-কমিটির দুটি সভা করেছে।

এ উপ-কমিটির একাধিক সদস্যের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই সঙ্গে স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনের কথাও বলেছেন তিনি। এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে কাজ করছে আওয়ামী লীগ সরকার। এই প্রেক্ষাপটে দলের এবারের ইশতেহারের লক্ষ্য হবে ২০৪১ সাল। এই সময়ের মধ্যে উন্নত. সমৃদ্ধ, স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে করণীয়গুলো চিহ্নিত করে ইশতেহারে তুলে ধরা হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইশতেহার প্রণয়ন উপকমিটির সদস্য সচিব এবং আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ বাংলানিউজকে বলেন, ২০০৮ সালে উন্নয়নের যে রূপরেখা দেওয়া হয়েছিল তার ভিত্তিতে এ পর্যন্ত দেশে যুগান্তকারী উন্নয়ন হয়েছে। শেখ হাসিনা সেটা করে দেখিয়েছেন। কোভিড এবং ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের প্রভাবে যেসব কাজ নির্দিষ্ট সময় করা সম্ভব হয়নি, প্রক্রিয়াধীন আছে সে বিষয়গুলোকে ত্বরান্বিত করে ২০৪১ সালের লক্ষ্যে পৌঁছাতে করণীয়গুলো ইশতেহারে নিয়ে আসা হবে।

উপকমিটির সূত্রগুলো জানায়, সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার পাবে যে বর্তমানে যে অর্থনৈতিক সংকট চলছে তা মোকাবিলা করা, নতুন প্রজন্মের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা, দারিদ্র বিমোচন, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, যোগাযোগ কৃষিসহ যেগুলোর উন্নয়ন হচ্ছে তা চলমান রাখা এবং গতি বাড়ানো। আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি (টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য) অর্জন করা এবং এগুলোর প্রতিটি ক্ষেত্রে বিশ্বে বাংলাদেশকে নেতৃত্বের জায়গায় নিয়ে আসা।

স্মার্ট বাংলাদেশের লক্ষ্যে পৌঁছাতে যে বিষয়টি সব চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ তা হলো আধুনিক ও বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষার মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মকে যুগোপযোগী করে গড়ে তোলা। তাদের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা। এই বিষয়টিও ইশতেহারে অগ্রাধিকার পাবে।

এ বিষয়গুলো নিয়ে কমিটি সভায় আলোচনা চলছে। সদস্যদের মতামত এবং প্রস্তাবের ভিত্তিতে সাড়া তৈরি হবে।

আওয়ামী লীগের ২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে বলা হয়েছিল, ভিশন ২০২১, প্রতিশ্রুতি ছিল ডিজিটাল বাংলাদেশের। ২০১৮ সালের নির্বাচনে উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখার কথা বলে ইশতেহার দেওয়া হয়েছিল সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ। সকল গ্রামকে শহরের সকল সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার করার কথা উল্লেখ করে স্লোগান দেওয়া হয়েছিল আমার গ্রাম হবে আমার শহর।

সূত্রগুলো আরও জানায়, আগের ইশতেহারে যেসব প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল তা কতটুকু বাস্তবায়ন হয়েছে তার মূল্যায়ন এবং এর ওপর ভিত্তি করে নতুন কর্মসূচি অর্ন্তভুক্ত করা হবে। ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়ন হয়েছে, এখন স্মার্ট বাংলাদেশের কথা ভাবা হচ্ছে। স্মার্ট বাংলাদেশের জন্য করণীয় বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরা হবে। কোভিড-১৯ এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে চলমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে দেশের অর্থনীতির উপর চরম আঘাত এসেছে, যা কাটিয়ে ওঠা কঠিন বলে মনে করা হচ্ছে। নতুন কর্মসূচির ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক দিকটাও মাথায় রাখা হবে।

এছাড়া বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রধান তিনটি দিক কৃষি, সেবা এবং শিল্প উৎপাদন খাত। এই তিনটি খাতই ইশতেহারে গুরুত্ব পাবে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ কথা চিন্তা করে আগামীতে কৃষিভিত্তিক শিল্প গড়ে তোলাকে গুরুত্ব দেওয়া হবে। কৃষিতে যে ভর্তুকি দেওয়া হয় তা অব্যাহত থাকবে।

সেবা খাতের মধ্যে স্বাস্থ্য, শিক্ষা অগ্রাধিকার পাবে। তবে শিল্প খাতকে মূল ফোকাসে এনে ম্যানুফ্যাকচারিং সেক্টরকে প্রসারিত করা, ছোট শিল্প কারখানার সঙ্গে সঙ্গে ভারী শিল্প কারখানা গড়ে তোলার ওপর অধিক জোর দেওয়া হবে।

পাশাপাশি দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য গণমাধ্যম, বিচার বিভাব ও নির্বাহী বিভাগ এই তিনটি বিষয়কে ইশতেহারে গুরুত্ব দেওয়া হবে বলেও ওই সূত্রগুলো জানায়।

এ বিষয়ে সেলিম মাহমুদ বাংলানিউজকে বলেন, অর্থনীতিকে শক্তিশালী করা, নতুন প্রজন্মকে গড়ে তোলা এবং তাদের কর্মসংস্থানের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। কৃষি, শিল্প ও সেবা খাতগুলো গুরুত্ব পাবে। সেভাবেই ইশতেহার তৈরির কাজ চলছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d