আওয়ামী লীগের প্রার্থী ৯ জন, বিএনপিতে একাই নোমান
তিনবারের সংসদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ডা. আফছারুল আমীনের মৃত্যুর পর উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন ২৯ জন। শেষতক নগর যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক মহিউদ্দিন বাচ্চু দলীয় মনোনয়ন পেয়ে হেসে-খেলে বিজয়ী হন। এবারও মনোনয়ন চাইবেন মহিউদ্দিন বাচ্চু। মনোনয়ন দৌড়ে আছেন প্রয়াত আফছারুল আমীনের পরিবারের সদস্যসহ আওয়ামী লীগের অন্তত নয় জন নেতা। বিএনপির মনোনয়ন চাইবেন কেন্দ্রীয় ভাইস-চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী আবদুল্লাহ আল নোমান। এ আসন থেকে ২০০৮ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন তিনি।
সাবেক মন্ত্রী বিএনপি নেতা আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, ‘আমরা এখন সরকার পতনের এক দফার আন্দোলনে আছি। সরকার পতনের পর দল নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিলে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেব।’
১৯৯১ সালের নির্বাচন পর্যন্ত এ আসনটি চট্টগ্রামের অন্যতম বড় নির্বাচনী আসন। চট্টগ্রাম-৮ সংসদীয় আসন হিসেবে পরিচিতি ছিল। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আসনটির সীমানা পুনর্নিধারণ করে চট্টগ্রাম-১০ ও চট্টগ্রাম-১১ দুটি আসনে ভাগ করা হয়। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ৮, ১১, ১২, ১৩, ১৪, ২৪, ২৫ ও ২৬ নাম্বর ওয়ার্ড নিয়ে চট্টগ্রাম-১০ সংসদীয় আসন পুনর্বিন্যাস করা হয়।
চট্টগ্রাম-১০ আসনে (খুলশী, পাহাড়তলী, পাঁচলাইশ, হালিশহর ও ডবলমুরিং) আসন্ন নির্বাচনে সম্ভাব্য ভোটার সংখ্যা চার লাখ ৮৩ হাজার ৭০৫ জন। ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ১৪৮টি ও ভোটকক্ষ এক হাজার ৫৯টি।
২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত তিনটি নির্বাচনে টানা জয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের ডা. মো. আফছারুল আমীন। গত ২ জুন মারা যান তিনি। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ছিলেন।
আসন্ন নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থিতার তালিকায় আবদুল্লাহ আল নোমানের নাম এককভাবে উচ্চারিত হলেও আওয়ামী লীগ দলীয় মনোনয়ন দৌড়ে নয় জনের নাম বেশি শোনা যাচ্ছে। তারমধ্যে আছেন বর্তমান সংসদ সদস্য মো. মহিউদ্দিন বাচ্চু, নগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এ কে এম বেলায়েত হোসেন, এম.এ আজিজের ছেলে নগর আওয়ামী লীগ নেতা সাইফুদ্দিন খালেদ বাহার, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রতিষ্ঠাতা যুগ্ম আহ্বায়ক ও সিডিএর সাবেক বোর্ড মেম্বার কে বি এম শাহজাহান, যুবলীগের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য, নগর আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সৈয়দ মাহমুদুল হক, নগর আওয়ামী লীগের সদস্য জামশেদুল আলম চৌধুরী, যুবলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ফরিদ মাহমুদ, প্রয়াদ সংসদ সদস্য ডা. আফসারুল আমিনের ভাই মো. এরশাদুল আমীন ও ছেলে ফয়সাল আমিন।
সংসদ সদস্য মহিউদ্দিন বাচ্চু বলেন, ‘উপ-নির্বাচনে নেত্রী আমাকে মনোনয়ন দিয়েছেন। বিজয়ী হয়ে আসনটি নেত্রীকে উপহার দিয়েছি। আগামী নির্বাচনেও মনোনয়ন চাইবো। তবে নেত্রী যা ভালো মনে করেন, আমার জন্য তাই ভালো। তাঁর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।’
৬০-এর দশকে চট্টগ্রামে পড়াশোনা করতে এসে এখানকার রাজনীতির সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে পড়েন বেলায়েত হোসেন। নগর আওয়ামী লীগের ১৬ বছর সহ-সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত সভাপতিসহ দলের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তিনি বলেন, ‘স্কুল-কলেজ থেকে জীবনসায়াহ্ন পর্যন্ত রাজনীতি থেকে কখনো বিচ্যুত হইনি। আশা করছি, আগামী নির্বাচনে নেত্রী রাজনৈতিক কর্মকা- বিবেচনা করবেন।’
দীর্ঘদিন ধরে মনোনয়ন নিয়ে দৌড়ঝাঁপ করে আসছেন নগর যুবলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ফরিদ মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে জনগণের কল্যাণে কাজ করে আসছি। দলের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছি। বড় দায়িত্ব পেলে আরও বৃহৎ পরিসরে কাজ করতে পারবো।
যুবলীগের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ মাহমুদুল হক বলেন, ‘তৃণমূল থেকে রাজনীতির এ পর্যায়ে এসেছি। ‘৭৫ সালে মৌলভী সৈয়দ আহমদের নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করতে গিয়ে চার বছর জেলে খেটেছি। কাকে মনোনয়ন দিলে ভালো হবে নেত্রী ভালো বুঝেন। মনোনয়ন পেলেও কাজ করবো, না পেলেও কাজ করবো।’
আফসারুল আমীনের মৃত্যুর পর উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন তাঁর ভাই, স্ত্রী ও ছেলে। আগামী নির্বাচনেও পরিবারের পক্ষ থেকে ভাই ও ছেলে মনোনয়ন চাইবেন। আফসারুল আমীনের ভাই আওয়ামী লীগ নেতা মো. এরশাদুল আমীন বলেন, ‘বাপ-দাদার আমল থেকে আমাদের পরিবার দেশ ও দলের জন্য অকাতরে কাজ করে যাচ্ছে। টাকার জন্য নয়, জনগণের জন্য রাজনীতি করি। গবির-অসহায় মানুষের কল্যাণে শিক্ষা, চিকিৎসা সেবাসহ মানবকল্যাণে কাজ করে যাচ্ছি। আশা করি, নেত্রী এসব বিবেচনা করবেন।’
আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ছাড়াও আগামী নির্বাচনে জাতীয় পার্টির মহানগর শাখার নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক আবু জাফর মাহমুদ কামাল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে জানান। এ আসন থেকে দুইবার নির্বাচন করেছিলেন জামায়াত নেতা মো. শাহজাহান চৌধুরী। রাজনীতিতে কোণঠাসা দলটির আগামী নির্বাচনে প্রার্থিতার বিষয়ে জানা যায়নি। এছাড়াও ইসলামী ফ্রন্ট, ইসলামিক ফ্রন্ট, ইসলামী আন্দোলনসহ আরও কয়েকটি দল প্রার্থী দেবে বলে শোনা যাচ্ছে।