চট্টগ্রাম

আনোয়ারায় ভাঙনের শঙ্কায় দিশেহারা নদীপাড়ের মানুষ

চোখের পলকে নদীগর্ভে চলে যাচ্ছে মাথা গোঁজার একমাত্র ঠিকানা বসতঘরটি। চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া যেন কিছুই করার উপায় নেই। ভাঙনে পাল্টে যাচ্ছে জনপদের চিত্রও। চরম দরিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করে বাঁচা এ জনপদের মানুষ নদীভাঙনে ভূমিহীন ও গৃহহীন হয়ে যাওয়ার শষ্কায় কাটাচ্ছেন প্রহর।

বলছিলাম চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার জুঁইদন্ডী ইউনিয়নে উপকূলীয় এলাকার বাসিন্দাদের উদ্বেগ-উৎকন্ঠার কথা। শনিবার (৩১ আগস্ট) বিকেলে জরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শঙ্কায় আতঙ্কিত মানুষের হাহাকার চিত্র। করেছে। নদীভাঙনে বসতভিটা বিলীন হওয়ার ভয়ে রাতে ঘুমাতেও পারেন না এ জনপদের বাসিন্দারা।

সরেজমিনে দেখা যায়, নদীপাড়ের বাসিন্দা মো. হেলাল মিস্ত্রী, জমির উদ্দিন, ফরিদ উদ্দিন, রব্বানী বাড়ির কাসেম মিস্ত্রীর বসতভিটা ঘেঁষে ধসে পড়েছে বেড়িবাঁধ। হুমকির মুখে রয়েছে তাদের বসতভিটাও। কয়েকদিন ধরে নদীর তীরে তীব্র আকার ধারণ করেছে ভাঙন। সাম্প্রতিক বন্যার সময়ে শঙ্খনদে পানি বেড়ে গেলে আনোয়ারা উপজেলার জুঁইদন্ডী ইউনিয়নের সাপমারা খাল থেকে খুরুস্কুল গোদারপাড়া এলাকা পর্যন্ত প্রায় ১৫ কিলোমিটার বাঁধের মধ্যে অন্তত চার কিলোমিটার বাঁধের ক্ষতি হয়েছে। এসব এলাকার বাঁধ ভেঙ্গে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে ভাঙনে এ জনপদের বাসিন্দাদের বসতঘর, গোয়ালঘরসহ বিভিন্ন স্থাপনা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে বলেও জানায় স্থানীয়রা।

স্থানীয়রা জানায়, জুঁইদন্ডী ইউনিয়নের মাঝিরঘাট থেকে নাপিতখাল পর্যন্ত দুই কিলোমিটার, মাতবর হাট থেকে শান্তির হাট ও গোদারগোড়া পর্যন্ত বিভিন্ন অংশে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে গেছে। রব্বাত মিয়ার বাড়ি থেকে মৌলভীবাজার পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার বেড়িবাঁধও ভাঙ্গনের কবলে পড়েছে। ইতিমধ্যে ১৫ কিলোমিটার বাঁধের মধ্যে দুই কিলোমিটার অংশে সিসি ব্লক বসানো হলেও অবশিষ্ট অংশে এখনো মাটির বাঁধ রয়েছে। ভাঙন রক্ষায় ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা গুলোতে জিও ব্যাগ দেওয়া হলেও নদীর ভাঙ্গন রোধ সম্ভব হচ্ছে না। এতে করে সামান্য পানি বাড়লেই শষ্কায় কাটে দিন।

জুঁইদন্ডী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মোরশেদুর রহমান খোকা বলেন, বেড়িবাঁধের কাজে অনিয়মের কারণে পুরো ইউনিয়ন এখন হুমকির মুখে। অতিদ্রুত সিসি ব্লক দিয়ে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা না গেলে ইউনিয়নের বড় অংশ নদীর গর্ভে তলিয়ে যেতে পারে।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শওকত ইবনে শহীদ বলেছেন, সাম্প্রতিক বন্যায় জুঁইদন্ডী ইউনিয়ের প্রায় চার কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত রায়পুর ও জুঁইদন্ডী ইউনিয়নের জন্য ১২৮ কোটি টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। তারমধ্যে জুঁইদন্ডী ইউনিয়নের ১২০০ মিটার এবং রায়পুর ইউনিয়নের ১২০০ মিটার বাঁধে সিসি ব্লক দিয়ে সংস্কারে এসব টাকা ব্যয় করা হবে। অবশিষ্ট অংশের জন্যও মন্ত্রণালয়ে প্রকল্প পাঠানো হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d