`আন্তর্জাতিক জলবায়ু তহবিল গ্রহণের দিক থেকে বাংলাদেশ দ্বিতীয়’
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশ বিশ্বের সপ্তম ঝুঁকিপূর্ণ দেশ জানিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর ছায়েদুর রহমান বলেছেন, বায়ু দূষণের প্রভাবে বাংলাদেশের একজন মানুষের গড়ে সাত বছর জীবন থেকে চলে যায়।
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক জলবায়ু তহবিল গ্রহণের দিক থেকে বাংলাদেশ দ্বিতীয়। কিন্তু অর্থ ব্যবহারের দিক দিয়ে আমরা অনেক অনেক পিছিয়ে রয়েছি।
শনিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম) আয়োজিত ‘কনফারেন্স অন সাসটেনইবেল ব্যাংকিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স’ শীর্ষক সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
বিআইবিএমের মহাপরিচালক আকতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত দিনভর চলা বিভিন্ন সেশনে বক্তব্য দেন ব্যাংকের সাবেক ও প্রধান নির্বাহীরা। পাঁচটি সেশনে চারটি মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়।
মূল প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশ জলবায়ু ক্ষতিকর প্রভাবের শিকার দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। এই ক্ষতি থেকে রক্ষার জন্য নতুন নতুন উদ্ভাবন ও পর্যাপ্ত বিনিয়োগ দরকার। মানুষের জীবন, জীবিকা, পরিবেশ রক্ষা ও ব্যবসা বাণিজ্যের ক্ষতি কমার লক্ষ্যে বহুমুখী উদ্যোগ নিতে হবে।
অগ্রসরমান অর্থনীতির জন্য টেকসই অর্থনীতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জানিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ফজলে কবির বলেন, প্রাকৃতিক ও সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে টেকসই অর্থায়ন প্রয়োজন। নবায়নযোগ্য জ্বালানি, স্বাস্থ্য, পরিবেশবান্ধব কারখানা, যানবাহন, ভবন ইত্যাদি হতে পারে টেকসই অর্থায়নের ক্ষেত্র।
এ খাতে বিনিয়োগের প্রভাব পড়বে অর্থনীতি, সমাজ ও রাষ্ট্রের ওপর। এই খাতে বিনিয়োগে ব্যাংকগুলো এগিয়ে আসলে ব্যবসাও হবে ব্যাংকের। এজন্য ব্যাংকারদের প্রশিক্ষণ দেওয়া প্রয়োজন যোগ করেন তিনি।
ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ এন্ড ডেভলেপমেন্টের পরিচালক অধ্যাপক সালিমুল হক বলেন, সবুজ অর্থায়নের জন্য পুঁজিবাজার থেকে অর্থায়ন বাড়াতে হবে। ব্যাংকিং খাত হবে শুধু ওয়ার্কিং ক্যাপিটালের জন্য। এ ক্ষেত্রে রেগুলেটরি প্রতিষ্ঠানের কাজ করার সুযোগ রয়েছে।
টেকসই অর্থনীতিতে আগামীর ব্যাংকিং নীতিমালা বিষয়ক সেশনে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের (এমটিবি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, পরিবেশবান্ধব পোশাক কারখানার মধ্যে লিড সার্টিফাইড ৭-৮টি কারখানা বাংলাদেশেই রয়েছে। ক্রেতাদের চাপে তারা পরিবেশবান্ধব হচ্ছে। কিন্তু রপ্তানি নির্ভর পোশাক কারখানাগুলো পরিবেশবান্ধব হলেও অভ্যন্তরীণ পোশাক কারখানা ও পণ্য তৈরির কারখানা পরিবেশবান্ধব হচ্ছে কি-না কে দেখবে?
অর্থায়নে পরিবেশ বন্ডের প্রতি সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আগ্রহী করে তুলতে প্রণোদনা বা কর ছাড় দেয়ার পরামর্শ দেন সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসরুর আরেফিন।
তিনি বলেন, পরিবেশের বিষেয়ে সচেতনতার পাশাপাশি ব্যাংক কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দরকার। পরিবেশবান্ধব বিনিয়োগের জন্য প্রতিটি ব্যাংকের ইউনিট থাকা দরকার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক মোরশেদ মিল্লাত বলেন, টেকসই অর্থায়নে সহযোগিতা করতে বাংলাদেশ ব্যাংক একাধিক তহবিল পরিচালনা করছে। প্রশিক্ষণসহ সব ধরনের নীতি সহায়তা দিয়ে আসছে। পরিবেশবান্ধব বিনিয়োগে লাভজনক হবে দীর্ঘ মেয়াদে ব্যাংকের জন্য।
২০১১ সাল থেকে গ্রিন ব্যাংকিং তহবিল গঠন ও নীতিমালা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সমাপনী অধিবেশনে ২০২২ সালে টেকসই অর্থায়নে বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বীকৃতি পাওয়া ব্রাক ব্যাংক, যমুনা ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, শাহজলাল ইসলামী ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, ট্রাস্ট ব্যাংক ও ইউসিবি ব্যাংককে পুরস্কার দেয় বিআইবিএম।
একইসঙ্গে চার আর্থিক প্রতিষ্ঠান- অগ্রণী এসএমই ফাইন্যান্সিং, বাংলাদেশ ফাইন্যান্স, আইডিএলসি ফাইন্যান্স ও লঙ্কান এলায়েন্স ফাইন্যান্সকে পুরস্কৃত করা হয়।
আরও পড়ুনঃ আট মাসে ৪৯৩ কন্যাশিশু ধর্ষণের শিকার