আরও ৩৬ পণ্য বাজারজাতে লাগবে বিএসটিআইয়ের সনদ
আরও ৩৬টি পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাত করতে বাধ্যতামূলক বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) মান সনদ নিতে হবে। গত ২৫ সেপ্টেম্বর এই ৩৬টি পণ্যের নাম উল্লেখ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে শিল্প মন্ত্রণালয়। এর আগে ২৩৯টি পণ্যের বাধ্যতামূলক সনদ নিতে হতো। তবে প্রজ্ঞাপন জারির পর ব্যবসায়ীরা দুই মাস সময় পাবেন বলে জানিয়েছেন বিএসটিআই চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক (সিএম) মোস্তাক আহমেদ।
তিনি জানান, আগে ২২৯ পণ্যের বাধ্যতামূলক মান সনদ নিতে হতো। পরে গত বছরের ডিসেম্বর মাসে আরও ১০টি পণ্য তালিকায় যুক্ত হয়। সর্বশেষ গত ২৫ সেপ্টেম্বর এই ৩৬টি পণ্য যুক্ত হয়। এই তালিকায় মিষ্টি, ছানা, সয়া সস, গ্রিন টি, কেক, এলপিজি সিলিন্ডার, বিটুমিনের মতো জনগুরুত্বপূর্ণ অনেক পণ্য যুক্ত হয়েছে। যাতে করে আমাদের কাজের পরিসর বেড়েছে। শুধু মিষ্টির কথা যদি বলি তাহলে চট্টগ্রামে মিষ্টি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানই আছে চার শতাধিক। অন্য আরও ৩৫টি পণ্যের বাজার তদারকি করতে সেই অনুযায়ী লোকবল নেই চট্টগ্রাম অফিসে। তারপরও আমরা চেষ্টা করছি খাদ্যের মান ঠিক রাখতে, মাঠে সাধ্য অনুযায়ী শ্রম দিতে। তবে মান সনদ ছাড়া ব্যবসা করলে সর্বনিম্ন ২৫ হাজার থেকে ২ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে চার বছরের জেল হবে।
দিকে মিষ্টি ও বার্থ ডে কেকের মত কিছু পণ্যের মান সনদ নিয়ে জানতে চাইলে ফুলকলি’র পরিচালক আবছার উদ্দিন বলেন, মিষ্টি জাতীয় পণ্য যে বিএসটিআইয়ের মান সনদের আওতায় এসেছে সেটা নিঃসন্দেহে ভালো দিক। তবে চট্টগ্রামে মিষ্টির ব্যবসাটা হযবরল। অনেক প্রতিষ্ঠান দেখবেন মিষ্টি উৎপাদন করছে। দেখবেন তারা তাদারকির তালিকায়ও নেই, যত চাপ আসবে ব্র্যান্ডের দু’চার দশটি প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে। বার্থ ডে কেক বা ডেকোরেটেড কেকের মান সনদের ক্ষেত্রে তিনি বলেন, কেক ভালো হবে ভালো বাটারের কারণে, আমরা সাধারণত মিল্ক ভিটা, প্রাণ ও আড়ং থেকে বাটার ক্রয় করি। বিএসটিআইয়ের আগে এসব বাটারের দিকে নজর দেয়া উচিত।
চট্টগ্রামের ‘মাওয়া’ নামের হোমমেড প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তা শেখ রওনাজ বলেন, আমরা অত্যন্ত খুশি যে ‘ডেকোরেটেড কেক’ বিএসটিআইয়ের মান সনদের আওতায় এসেছে। কারণ বেকারিতে বেশিরভাগ কেক তৈরিতে খোলা বাজারের বাটার ব্যবহার করা হয়। যাতে করে এসব বাটার একসময় মানুষের হার্টের ব্লক তৈরি করে বলে অনেক সেমিনারে আমাদের বলা হয়েছে। আমরা যারা আঞ্চলিকভাবে কেক তৈরি করি তারা ভালো বাটার সংগ্রহের জন্য বেগ পাই। আমি মূলত র্ফাম ফ্রেশ এর বাটার ব্যবহার করি। পাঁচ কেজি ঢাকা থেকে আনলে ট্রান্সর্পোট খরচ ছাড়া প্রতিকেজি এক হাজার টাকা ব্যয় হয়। সরকারের উচিত আমরা যেন কাঁচামাল হাতের নাগালে পাই সেই ব্যবস্থা করা। তাহলে পণ্যের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠবে না।
৩৬টি পণ্যের বিএসটিআইয়ের মান সনদ নেয়ার বিষয়ে কনজুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এর সহ-সভাপতি নাজের হোসেন বলেন, বিএসটিআই বর্তমানে ২৩৯টি পণ্যের বাজারে মান ঠিক রাখতে পারছে না। তারা আরও ৩৬টি পণ্যের মান তদারকি কিভাবে করবে। বাজারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ভ্রাম্যমাণ আদালতের চিত্র বলে দেয় বিএসটিআইয়ের কর্মকর্তারা কী রকম কাজ করে। মূল কথা হচ্ছে ভোক্তা প্রতারিত হচ্ছে সব সময়। মানহীন পণ্য আমাদের শরীরে নানা মরণঘাতী রোগ সৃষ্টি করে। অথচ আমরা টাকা দিয়ে পণ্য কিনছি, রোগ নয়।
নতুন ৩৬টি পণ্যের মধ্যে অন্যতম হলো : মিষ্টি, ছানা, চিজ, টুথব্রাশ, হুয়ে চিজ, ক্রিম চিজ, চুলের ক্রিম, চোখের কাজল, ভেজা টিস্যু, মশারি, তোয়ালে, সয়া সস, ডেকোরেটেড কেক, মল্টবেজড খাদ্য ও পানীয়, গ্লিসারিন, লিকুইড টয়লেট সোপ, ট্রান্সপারেন্ট টয়লেট সোপ, বিটুমিন, প্রেসার কুকার, এলপিজি সিলিন্ডার, রান্নার স্টোভ, শ্রমিকদের ব্যবহৃত হেলমেট, চটের ব্যাগ, ৩০-৫০ কেজি আকারের খাদ্যভর্তি ব্যাগ, অটোরিকশার ব্যাটারি, ইউপিএস, পানি তোলার মোটর ইত্যাদি।