আ. লীগ ধরে রাখতে চায়, বিএনপি চায় পুনরুদ্ধার
আসন্ন নির্বাচনে চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালী-বাকলিয়া) আসনে আওয়ামী লীগ চায় নিজেদের জয়ের আধিপত্য ধরে রাখতে। অপরদিকে বিএনপি চায় আসনটি পুনরুদ্ধারে। এ কারণে দুই দলই আঁটঘাট বেধে মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে এ মুহূর্তে আওয়ামী লীগ নির্বাচনের প্রস্তুতি চালালেও বিএনপি আছে আন্দোলনের মাঠে। তাই দলটির সম্ভাব্য প্রার্থীদের নির্বাচনী ভাবনা এখন খুব একটা দেখা যাচ্ছে না।
চট্টগ্রামের ১৬টি সংসদীয় আসনের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আসন চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালী-বাকলিয়া)। চট্টগ্রাম শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় এ আসনের অবস্থান। তাই এ আসনের নির্বাচন নিয়ে সব দলেরই আগ্রহ থাকে তুলনামূলক বেশি। ভোটাররাও কম যান না। তারাও নির্বাচনের আগে থেকে কোন কোন রাজনৈতিক দলের কে কে প্রার্থী হচ্ছেন, তা নিয়েও চুলচেরা বিশ্লেষণে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। এ মুহূর্তে সরকারি দল আওয়ামী লীগ আসন্ন দ্বাদশ নির্বাচন নিয়ে প্রস্তুতি শুরু করলেও, দেশের অপর গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দল বিএনপি ব্যস্ত আছে একদফা দাবি আদায়ে আন্দোলনের মাঠে। দলটির কোনো নেতার মধ্যে এখনো প্রার্থিতা নিয়ে আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না।
চট্টগ্রাম-৯ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থিতার তালিকায় রয়েছেন, এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য, সরকারের শিক্ষা উপ-মন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। তিনি নগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর জ্যেষ্ঠ পুত্র। এছাড়া সাবেক সিটি মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ আ জ ম নাছির উদ্দিনের নামও শোনা যাচ্ছে। তিনিও এ আসনে একজন শক্তিশালী সম্ভাব্য প্রার্থী। অপরদিকে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা হলেন, এ আসনে ২০১৮ সালের একাদশ নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী ও দলের নগর আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন ও নগর বিএনপির সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর। এছাড়া জামায়াতে ইসলামী, জাতীয়পার্টি (এরশাদ), ইসলামী ফ্রন্ট, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, জাতীয় পার্টির (জেপি), ইসলামী আন্দোলন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরাও এ আসনে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।
স্বাধীনতার পর ১১টি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-৯ আসনে মূলত আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয়পার্টি এ তিন রাজনৈতিক দলেরই প্রাধান্য ছিল। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি এ আসনে চারবার করে জিতলেও জাতীয়পার্টি জয়লাভ করে তিনবার। তবে রাজনৈতিক মাঠে একটি প্রবাদ এখানে প্রতিষ্ঠিত আছে যে, এ আসনে যে দলের প্রার্থী জয়লাভ করেন, সেই দলই সরকার গঠন করে। বিগত ১১টি জাতীয় নির্বাচনে এমনটি ঘটেছে। এর কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি। শুধু সরকার গঠন নয়, এ আসনে জয়ী হয়ে বেশিভাগ প্রার্থী মন্ত্রীও হয়েছেন।
স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়লাভ করেছিলেন আওয়ামী লীগের জহুর আহমেদ চৌধুরী। তখন সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। এ আসন থেকে নৌকা প্রতীক নিয়ে জয়লাভের পর জহুর আহমেদ চৌধুরী বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভার স্বাস্থ্য, পরিবার ও পরিকল্পনা এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রী হন। এরপর ১৯৭৯ সালে দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসন থেকে জয়লাভ করেন বিএনপির অধ্যাপক আরিফ মঈনুদ্দিন। নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে বিএনপি সরকার গঠন করে। অধ্যাপক আরিফ মঈনুদ্দিন বিএনপির মন্ত্রী সভায় উপ-মন্ত্রী হন।
১৯৮৬ সালে তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয়পার্টির সেকান্দর হোসেন মিয়া জয়লাভ করেন। ১৯৮৮ সালে চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয়পার্টি থেকে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯০ সালে এরশাদ সরকারের পতনের পর ১৯৯১ সালে পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়লাভ করেন বিএনপির আবদুল্লাহ আল নোমান। নির্বাচনে বিএনপি সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে বিএনপি সরকার গঠন করে। বিএনপির মন্ত্রী সভায় স্থান পান তিনি। সরকারের বন ও পরিবেশ এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান আবদুল্লাহ আল নোমান। এরপর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে ১৯৯৬ সালে ১৫ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি আওয়ামী লীগ ও জামায়াতে ইসলামী। ওই নির্বাচনে বিএনপির আবদুল্লাহ আল নোমান জয়লাভ করেন। সেবারও তিনি বিএনপির মন্ত্রী সভার মন্ত্রিত্ব পান।
কিন্তু বিরোধীদল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে অনড় থাকায় বেশিদিন স্থায়ী হয়নি এ সরকার। ভেঙে দেওয়া হয় সংসদ। পরবর্তীতে একই বছর ১২ জুন সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসন থেকে বিজয়ী হন আওয়ামী লীগের এম এ মান্নান। নির্বাচনে জয়লাভের পর সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। ওই মন্ত্রী সভায় শ্রম মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান এম এ মান্নান। ২০০১ সালে পহেলা অক্টোবর অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হন বিএনপির আবদুল্লাহ আল নোমান। নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে সরকার গঠন করে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট। ওই সরকারের মন্ত্রী সভায় শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রী হন আবদুল্লাহ আল নোমান।
পরবর্তীতে ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসন থেকে জয়লাভ করেন আওয়ামী লীগের নুরুল ইসলাম বিএসসি। ওইসময় তিনি সরকারের প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হন। তার নিকটতম প্রার্থী ছিলেন বিএনপির মো. সামসুল আলম। একই দলের আবদুল্লাহ আল নোমান সেবার এ আসন থেকে নির্বাচন করেননি। তিনি চট্টগ্রাম-১০ (পাহাড়তলী, ডবলমুরিং, খুলশী, হালিশহর ও পাঁচলাইশ) আসনে নির্বাচন করেন। ওই সময়ে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীসহ অন্যান্য বিরোধীদল অংশগ্রহণ করেনি। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বিরোধীদল নির্বাচন বর্জন করে। ওই সময়ে এ আসনটি জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেয় আওয়ামী লীগ। নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু জয়লাভ করেন। ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়লাভ করেন আওয়ামী লীগের ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল সরকারের শিক্ষা উপ-মন্ত্রী হন।