আ.লীগ-বিএনপিতে বিভক্তি, গোপনে সক্রিয় জামায়াত
বিগত বহুসময় ধরে আসনটির নেতৃত্বে ছিল জামায়াত ইসলাম ও বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট। তবে দশম ও একাদশ জাতীয় নির্বাচনে জয়লাভ করে নৌকা প্রতীকের আ. লীগ। বিজয় পরবর্তী আ. লীগের সাংগঠনিক কার্যকম বাড়তে থাকে। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, উত্তপ্ত হয়ে উঠছে আসনটির রাজনৈতিক পরিস্থিতি।
৯১’এর পর থেকে ১৭ বছর এ আসন ছিল বিএনপি-জামায়াতের হাতে। তবে গত ১৫ বছরে দৃশ্যপট অনেক বদলে গেছে। জামায়াতের দুর্গ হিসেবে খ্যাতি পাওয়া এই আসনে ঘাঁটি গেড়েছে আওয়ামী লীগ। বিএনপির অন্তঃকোন্দল, এলডিপি-জাপার নিষ্ক্রিয়তা ক্ষমতাসীন দলের এ অবস্থানকে আরও পাকাপোক্ত করেছে। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াতের একাধিক প্রার্থীর নাম শোনা গেলেও মূলত আওয়ামী লীগের অবস্থান অন্যান্য সময়ের তুলনায় এবার অনেক শক্ত। যদিও সাংগঠনিক ভিত্তির কারণে জামায়াত এখনো ফ্যাক্টর। তবে প্রার্থিতা নিয়ে কোন্দল চলছে আ. লীগ, জামায়াত, বিএনপি তিনদলের হেভিওয়েট মনোনয়ন প্রত্যাশী অনেকের মধ্যেই। নির্বাচনী আমেজ বলতে সর্বত্রই আলোচনা চলছে এমপি নদভী-মোতালেব চেয়ারম্যানের মধ্যে কে পাচ্ছেন আ. লীগের মনোনয়ন, নাকি কেন্দ্রীয় নেতা আমিন আসছেন নৌকা নিয়ে!
জামায়াতের শামসুল ইসলাম নাকি শাহজাহান চৌধুরী কে নামছেন সাতকানিয়া লোহাগাড়ার মাঠে এসব নিয়ে নানা হিসেব-নিকেশ। এছাড়া সরকারি-বেসরকারি, সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে নিজেদের অবস্থান জানান দিচ্ছেন কেউ কেউ। তবে আড়ালে রয়ে গেছেন বিএনপি, জামায়াতের প্রার্থীরা।
আওয়ামী লীগ থেকে এবার মনোনয়ন দৌড়ে আছেন কেন্দ্রীয় নেতাসহ অন্তত অর্ধডজন, ইতোপূর্বে জামায়াত অনেকটা আনুষ্ঠানিকভাবে একজনকে সম্ভাব্য প্রার্থী ঘোষণা করলেও নেতাকর্মীদের মুখে আরও দু’তিনজনের নাম শোনা যাচ্ছে। একইভাবে বিএনপিরও অর্ধডজন নির্বাচনমুখী নেতার নাম উঠে এসেছে। শোনা যাচ্ছে নির্বাচনে অংশ নিলে সাতকানিয়া-লোহাগাড়া আসনে ফিরতে চান খোদ এলডিপির সভাপতি অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল অলি আহমদ বীরবিক্রম। পোস্টারিংয়ে সরব গণফোরামের আব্দুল মোমেন চৌধুরী।
আওয়ামী লীগ: এবার ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চান বর্তমান সংসদ সদস্য প্রফেসর ড. আবু রেজা মুহম্মদ নেজামুদ্দীন নদভী, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, উপজেলা চেয়ারম্যান ও সাতকানিয়া আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ মোতালেব সিআইপি, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাঈনুদ্দীন হাছান চৌধুরী, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি আবু সুফিয়ান ও স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. আ ন ম মিনহাজুর রহমান। এদের মধ্যে বর্তমান সংসদ সদস্য আবু রেজা মুহম্মদ নেজামুদ্দীন নদভী ও উপজেলা চেয়ারম্যান এম এ মোতালেব পুরোপুরি ‘দৌড়ে’ রয়েছেন। কেন্দ্রীয় নেতা আমিনুল ইসলাম আমিনও নিয়মিত চষে বেড়াচ্ছেন সাতকানিয়া- লোহাগাড়ার জনপদ। বাকিরা অন্যান্য সময়ের মতো দলীয় কার্যক্রম ও সামাজিক অনুষ্ঠানে সরব থেকে প্রার্থিতার কথা জানান দিচ্ছেন।
জামায়াত : ২০১৮ সালের নির্বাচনে এই আসন থেকে দক্ষিণ জেলা জামায়াতের আমির জাফর সাদেক, আ ন ম শামসুল ইসলাম, শাহজাহান চৌধুরী তিনজনই মনোনয়ন ফরম ক্রয় করেন। পরে অবশ্য দু’জনই সরে যান। এবারের নির্বাচনেও এই আসন থেকে তারা তিনজন দলের মনোনয়ন চাইবেন। সম্প্রতি আ ন ম শামসুল ইসলাম জামিনে বেরিয়ে বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের ব্যানারে কর্মসূচি পালন করছেন। কারাগারে রয়েছেন শাহজাহান চৌধুরী। ১৯৯১ সালের পর থেকে এ আসনে একচ্ছত্র আধিপত্য শুরু হয়েছিল জামায়াত ইসলামির। মাঝখানে ৯৬’র নির্বাচনে কর্নেল অলির কারণে হাতছাড়া হয়ে ২০০৮ সাল পর্যন্ত জামায়াতের দখলেই ছিল আসনটি। তবে শামসুল ইসলামই এই আসনের প্রার্থী হবেন অনেকটা নিশ্চিত করেছেন দলের নেতারা।
বিএনপি : ৯৬’র নির্বাচনে বিএনপির তৎকালীন জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীরবিক্রমের হাত ধরে চট্টগ্রাম ১৫ আসনে একবার বিজয়ের স্বাদ নেয় বিএনপি। এরপর রাজনৈতিক জোটের কারণে আর কখনো প্রার্থী দিতে পারেনি। অন্তঃকোন্দলে ভুগছে দলটি। এবার বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি শেখ মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, সাতকানিয়া উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান, সাতকানিয়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক জামাল উদ্দীন, যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুল গাফফার চৌধুরী ও লোহাগাড়া উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক নাজমুল মোস্তফা আমিন। বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি শেখ মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বলেন, নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়ার ব্যাপারে দলীয় কোন সিদ্ধান্ত আসেনি। তবে নেতাকর্মীরা দলীয় কার্যক্রমে সক্রিয় রয়েছেন।
এলডিপি : এবারের নির্বাচনে এ আসনে ফেরার সম্ভাবনা রয়েছে খোদ এলডিপির সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদের। তার দল নির্বাচনে অংশ নিলে তিনিও আসনটিতে প্রার্থী হতে পারেন বলে শোনা যাচ্ছে। যদিও কর্নেল অলি আহমদ পূর্বকোণকে বলছেন, ‘একমাত্র আল্লাহ জানেন কোনো নির্বাচন হবে কিনা।’